মিয়ানমারে থ্রি ব্রাদারহুড এলায়েন্স কী

মিয়ানমারের সামরিক জান্তার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তুলেছে সশস্ত্র বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠী। তার সঙ্গে যোগ হয়েছে গণতন্ত্রপন্থিরা। এই সম্মিলিত শক্তির সামনে টিকে থাকতে পারছে না অত্যাধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত সেনাবাহিনী। সর্বশেষ বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে রাখাইন রাজ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ শহর পালেতোয়া দখল করেছে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি। অন্যদিকে চীন সীমান্তের কাছে শান প্রদেশে আরেকটি বড় শহর অক্টোবরের শেষের দিকে দখল করেছে থ্রি ব্রাদারহুড কোয়ালিশন বা ‘থ্রিবিএইচএ’। এর সঙ্গে আছে আরাকান আর্মিও। বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর জোট থ্রিবিএইচএ সেনাবাহিনীর বিভিন্ন পোস্টে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। তারা কয়েক ডজন সামরিক পোস্ট দখল করেছে। দেশের উত্তরে বেশ কিছু শহর নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।

থ্রি ব্রাদারহুড এলায়েন্স গড়ে উঠেছে তিনটি বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীর সমন্বয়ে। এরা হলো আরাকান আর্মি, মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মি এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি।

এর মধ্যে আরাকান আর্মি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০০৯ সালে। ধারণা করা হয় তাদের সদস্য সংখ্যা প্রায় ৩০ হাজার। তারা বলছে, পশ্চিমাঞ্চলীয় রাজ্য রাখাইনে বহু আরাকান জাতিগোষ্ঠীকে সার্বভৌমত্ব বা স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াই করছে তারা। এই গ্রুপটি সদস্য সংগ্রহ করেছে রোহিঙ্গাদের মধ্য থেকে। এর বেশির ভাগই রাখাইনের সংখ্যালঘু মুসলিম।
অন্যদিকে মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ) কার্যক্রম পরিচালনা করছে উত্তরে চীন সীমান্তের কাছে শান রাজ্যে। তারা বলছে, কোকাং জনগোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসনের দাবিতে লড়াই করছে তারা। কোকাং জনগোষ্ঠী হলো হান-ভাষী একটি জাতিগোষ্ঠী। মিয়ানমারের স্পেশাল অঞ্চল হিসেবে প্রায় ২০ বছর ধরে শান রাজ্য নিয়ন্ত্রণ করছে এমএনডিএএ। সীমান্তে বেড়া নির্মাণ এবং নিয়ন্ত্রণ ছেড়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়ার পর ২০০৯ সালে তাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সশস্ত্র লড়াই শুরু হয়।

অন্যদিকে তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) হলো পালাং সেল্ফ লিবারেশন ফ্রন্টের সশস্ত্র শাখা। তাদেরকে অর্থায়ন করে তার আইক বং এবং তার বোন কাইওয়া। তাং সংখ্যালঘুদের বিচ্ছিন্ন কিছু যোদ্ধাকে নিয়ে গড়ে উঠেছে এই সংগঠন। তারা মিয়ানমারে প্রকৃত একটি ফেডারেল প্রতিষ্ঠার দাবিতে লড়াই করছে। এই সংগঠনে আছে ৫ হাজার সদস্য। প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চল থেকে সদস্য সংগ্রহ করে তারা।

২০১৯ সালে একত্রিত হয় এই তিনটি সশস্ত্র গ্রুপ। এমএনডিএএ এবং আরাকান আর্মির (এএ) শক্তিশালী ঘাঁটি শান ও রাখাইন রাজ্যে সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর দিকে দৃষ্টি দেয় তারা। ২০২১ সালের ১লা ফেব্রুয়ারি সামরিক অভ্যুত্থান ও দমনপীড়নের ফলে বেসামরিক শাসন প্রতিষ্ঠার দাবিতে আন্দোলনে নামেন হাজার হাজার মানুষ। এ সময় শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারীদের শত শত মানুষকে হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে তারা বিবৃতি দেয়। তারপর থেকে বেশ কিছু হামলা করেছে তারা। মাঝে মাঝে তারা যোগ দিয়েছে পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসের (পিডিএফ) সঙ্গে। পিডিএফ হলো গণতন্ত্রপন্থি বিদ্রোহীদের দ্বারা গঠিত ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্টের দুর্বল একটি প্রতিরোধ সেল।

২০২১ সালে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বেশ কিছু সফল অভিযান পরিচালনা করে থ্রিবিএইচএ। ২০২৩ সালে তারা সবচেয়ে বড় বিজয় অর্জন করে। ওই বছর ২৭শে অক্টোবর জোটের ১০ হাজার সেনা সদস্যকে সংগঠিত করে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং সরকারের মিত্রদের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালায় শান রাজ্যে। এর ফলে কমপক্ষে ১০০ সামরিক পোস্ট ছেড়ে পালিয়ে যায় সেনাবাহিনী। তারা অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ ফেলে যায়। শান রাজ্যের বড় দুটি শহর চিন শয়ে হাও এবং মং কো তাদের নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এরপর তারা দখল করে হপাং সেং, পং সেং এবং হসেনবি গ্রাম।