পাসপোর্টে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ বাদ দেওয়া নিয়ে তোলপাড়

বাংলাদেশের পাসপোর্টে ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ লেখা বাদ দেওয়ার পর কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার এই ইস্যুতে রাজনৈতিক অবস্থান স্পষ্ট করলেও ফিলিস্তিনের মনঃপূত হয়নি।

সে কারণে পররাষ্ট্রমন্ত্রী রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। এদিকে পাসপোর্ট সংশোধনে সন্তোষ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল।
বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে বাংলাদেশের পাসপোর্টে ইংরেজিতে লেখা ছিল—‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিস অব দ্য ওয়ার্ল্ড একসেপ্ট ইসরায়েল’। তবে ৫০ বছরের মাথায় বাংলাদেশ ই-পাসপোর্ট দেওয়া শুরু করেছে। নতুন ই-পাসপোর্টে সংশোধন করে লেখা হচ্ছে ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিস অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। ‘একসেপ্ট ইসরায়েল’ লেখাটি বাদ দেওয়া হয়েছে। বিষয়টি জানার পর থেকেই কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে তোলপাড় শুরু হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পাসপোর্টে আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। কোন দেশে নাগরিকরা যেতে পারবেন, আর কোন দেশে যেতে পারবেন না—সেটা সাধারণত পাসপোর্টে লেখা থাকে না। বিশ্বের অধিকাংশ দেশের পাসপোর্টে এটা লেখা নেই। সে কারণে বাংলাদেশের পাসপোর্টেও এটা তুলে দেওয়া হয়েছে।

পাসপোর্টে ইসরায়েল প্রসঙ্গ বাদ দেওয়ার পর বিভিন্ন পক্ষ সরকারের সমালোচনা শুরু করে। বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের সমালোচনা করা হয়। সামাজিক গণমাধ্যমেও সরকারের সমালোচনা থেমে নেই। সে কারণে সরকার রীতিমতো বিবৃতি দিয়ে অবস্থান সুস্পষ্ট করে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—নতুন পাসপোর্ট সংশোধন করা হলেও ইসরায়েলে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে। এছাড়া ইসরায়েল ও মধ্যপ্রাচ্য নীতিতে বাংলাদেশ আগের অবস্থানেই অটল রয়েছে।

শুধু বিবৃতি দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন এ বিষয়ে খুব সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনের জনগণের প্রতি আমাদের সহানুভূতি রয়েছে। ফিলিস্তিন সংকট সমাধানে বাংলাদেশ আগের মতোই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

তবে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে ফিলিস্তিন প্রসঙ্গে অবস্থান সুস্পষ্ট করলেও দেশটির ঢাকায় নিযুক্ত রাষ্ট্রদূত ইউসুফ এস ওয়াই রামাদান নাখোশ হয়েছেন। তিনি বলেছেন, ইসরায়েল লেখা বাদ দিয়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট যে সংশোধন করা হয়েছে, তা অগ্রহণযোগ্য। এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য তিনি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন। এছাড়া যখন গাজায় ইসরায়েলি বাহিনী নৃশংসভাবে হামলা চালিয়েছে, ফিলিস্তিনিরা মারা গেছেন, তখনই এই পাসপোর্ট সংশোধনীতে একটি ভুল বার্তা যাবে বলেও তিনি মনে করেন। একইসঙ্গে রাষ্ট্রদূত বলেছেন, বাংলাদেশ একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ। সেই হিসেবে বাংলাদেশ যে কোনো সিদ্ধান্ত স্বাধীনভাবে নিতে পারে।

ফিলিস্তিনের রাষ্ট্রদূতের পাসপোর্ট সংশোধনকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ মন্তব্য করার প্রেক্ষিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন রীতিমতো ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ড. মোমেন বলেছেন, কোন দেশের রাষ্ট্রদূত কী বললেন না বললেন তা একেবারেই আমাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক। আমরা আমাদের পররাষ্ট্রনীতির সিদ্ধান্ত নিজেরাই নিয়ে থাকি। আমরা একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমরা কী করি না করি আমরাই সিদ্ধান্ত নেব। অন্য কে কী বলল সেটা পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক।

এদিকে নতুন পাসপোর্ট সংশোধনের প্রেক্ষিতে ইতোমধ্যেই সন্তোষ প্রকাশ করেছে ইসরায়েল। ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উপমহাপরিচালক গিলাড কোহেন টুইটারে এই সন্তোষ প্রকাশ করেন। বাংলাদেশ ও ইসরায়েলেরে মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করলে উভয় দেশের জনগণ লাভবান হবে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। একইসঙ্গেথে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাংলাদেশকে স্বাগত জানান তিনি।

পাসপোর্ট সংশোধনের বিষয়টি শুধু কূটনীতিতেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। এটা বাংলাদেশের রাজনীতিতেও উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন।

অন্যদিকে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেছেন, আন্তর্জাতিক রীতির কারণেই পাসপোর্টে সংশোধন করা হয়েছে। তাই কোনোভাবেই ইসরায়েলের উল্লসিত হওয়ার কারণ নেই। ইসরায়েলের সঙ্গে বাংলাদেশের কোনো সম্পর্ক নেই। ভবিষ্যতেও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। পাসপোর্টে যেটাই লেখা থাকুক না কেন, বাংলাদেশিরা ইসরায়েল ভ্রমণে যেতে পারবে না। আর ইসরায়েলিরাও বাংলাদেশে আসতে পারবে না।

সবশেষ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মোমেন বলেছেন, বাংলাদেশ ইসরায়েলকে স্বীকার করে না। ইসরায়েলে বাংলাদেশিদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে। তাই ইসরায়েলে কোনো বাংলাদেশি গেলে আইনের মুখোমুখি হয়ে শাস্তি পেতে হবে।