‘ইদানীং-হাবিলদার রজব আলী খাঁ স্মৃতি’ পুরস্কার ও গুণীজন সংবর্ধনা সম্পন্ন

ইদানীং সাহিত্যচর্চা কেন্দ্র চট্টগ্রামের উদ্যোগে ইদানীং-হাবিলদার রজব আলী খাঁ স্মৃতি পুরস্কার ও গুণীজন সংবর্ধনা-২০২৪ সংগঠনের সভাপতি লেখক ও প্রকাশক মিনহাজুল ইসলাম মাসুমের সভাপতিত্বে ১৬ নভেম্বর (শনিবার) বিকাল ৫টা চট্টগ্রামস্থ চট্টগ্রাম শিল্পকলা একাডেমি মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়।

লেখক ও মানবাধিকার কর্মী মোহাম্মদ কামরুল ইসলামের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কবি নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, গবেষক ও প্রিমিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ববিভাগের ডিন অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম। পবিত্র কুরআন হতে তেলওয়াত করেন পথিক ইদ্রিস।

প্রধান আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ ও চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের সাবেক সচিব অধ্যাপক একেএম ফজলুল করিম চৌধুরী। আলোচকবৃন্দের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ মমতাজ উদ্দিন কাদেরী, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় নজরুল গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. ফরিদ উদ্দিন ফারুক, কবি ও সাংবাদিক কমরুদ্দিন আহমদ, মাসিক দ্বীন দুনিয়ার সম্পাদক ও লেখক মুহাম্মদ জাফর উল্লাহ।

সম্বর্ধিতজনরা হলেন, সাহিত্যে মুহাম্মদ মহিউদ্দিন, শিশুসাহিত্যে জুলফিকার শাহাদাৎ, শিক্ষায় লায়ন মো. মুজিবুর রহমান, সমাজসেবায় ডা. মোহাম্মদ ওমর ফারুক।

এতে আরো বক্তব্য রাখেন খোরশেদ মুকুল, কফিল উদ্দিন দুলাল, জিতেন্দ্র লাল বড়ুয়া, সোহেল ফখরুদ্দীন, সৈয়দ খালেদুল আনোয়ার, আলী আসকর, হামিদুর রহমান, আলী প্রয়াস, মোস্তফা হায়দার। এতে ছড়া ও কবিতা আবৃত্তি করেন, শফিকুর রহমান সবুজ,আবু ইউসুফ সুমন, কুতুবউদ্দিন বখতেয়ার, আলাউদ্দিন কবির প্রমুখ।
প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. মোহীত উল আলম বলেন, হাবিলদার রজব আলী খাঁ আমাদের স্বাধীনতার অপর নাম। তিনি সমগ্র ভারতীয় উপমহাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের রূপকার তাঁর গৌরবজনক ভূমিকাকে আমরা যথাযথভাবে মূল্যায়ন করিনি। কালের আবর্তে আমরা তাঁকে ভুলে গেছি। তাই হাবিলদার রজব আলী এক অবহেলিত নাম। তিনি বলেন, সারাদেশে রজব আলীর সাহস ও কীর্তিকে আমাদের নতুন প্রজম্মকে ছড়িয়ে দিতে হবে। সিপাহী বিপ্লবের সময় হাবিলদার রজব খাঁ চট্টগ্রামের বিদ্রোহের নেতৃত্ব দেন। জেলখানায় আক্রমণ করে সকল বন্দীকে তিনি মুক্ত করেন। স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য অথচ দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য এ মানুষের নামটি মুছে যাচ্ছে মানুষের অগোচরে। তিনি ইদানীং সাহিত্যর্চচা কেন্দ্রের এই ধরনের উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করেন।

প্রধান আলোচক তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৮৫৭ সালে বাহাদুর শাহ জাফরের নেতৃত্বে বৃটিশ সরকার উৎখাতের ডাক দেয়া হয়। ১৮৫৭ সালে মহাসংগ্রামের ব্যর্থতায় বাংলার অ-মুসলিম বুদ্ধিজীবীরা তখন উল্লাসে ফেটে পড়ে ঐ সময়ে স্বনামধন্য কবি ঈশ্বর গুপ্ত লিখে ছিলেন ‘যবনের যত বংশ এবারে হবে ধ্বংস/সাজিয়াছে কোম্পানির সেনা/গোরু জরু লবে কেড়ে, চাপ দেবে যত নেড়ে/এই বেলা সামাল সামাল।’ঐ সময়ে তিনি আরো লিখেছিলেন,’ভারতের প্রিয় পুত্র হিন্দু সমুদয়/ মুক্ত মুখে বল সবে বৃটিশের জয়।’

তখন থেকে স্বাধীনতাকামী মানুষের অন্তরে জ্বালা ধরে, পরবর্তীতে জ্বলে উঠে হাবিলদার রজব আলী খাঁ। তিনি আরো বলেন, আমাদের ব্যর্থতা, আমাদের উদাসীনতা অবহেলায় সময়ের স্রোতে ভেসে যাচ্ছে সংগ্রামী মানুষটি। ভারতীয় স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে হাবিলদার রজব আলী খাঁ একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হয়ে থাকবে যুগ যুগ ধরে এই পৃথিবীর স্বাধীনতা মুক্তিকামী মানুষ তাকে শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।

এ মহাবীরকে স্বাধীনতা সংগ্রামে তাঁর অবদানের জন্য তাঁকে সর্বদা আমাদের শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ উচিত এবং তাকে নিয়ে আমাদের গবেষণা হওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন। সংবর্ধিত গুণীজন সহ তিনি সকলকে ধন্যবাদ জানান। সভাপতি লেখক ও প্রকাশক মিনহাজুল ইসলাম মাসুম এ সুন্দর আয়োজনের জন্যে ও সকলকে সার্বিক ভাবে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।