মেজর সিনহা হত্যা, ঘটনাস্থলে রেকি করেই হত্যার বিবরণ জানলো র্যাবের তদন্ত দল
টেকনাফ প্রতিনিধি।
আলোচিত মেজর (অব.) সিনাহ মো. রাশেদ খান হত্যার ‘গোড়ার রহস্য’ জানতে এবার প্রধান আসামী বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, এসআই লিয়াকত আলী ও এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতকে নিয়ে ঘটনাস্থলে গেলেন র্যাবের একটি দল। এসময় হত্যার ঘটনার রেকি (লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণ, আক্রমণপূর্ব পর্যবেক্ষণ, আক্রমণের কলাকৌশল) এবং ঘটনাস্থল পর্যবেক্ষণ করেন র্যাবের কর্মকর্তারা।
র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তাফা সরওয়ারের নেতৃতে র্যাবের একটি দল শুক্রবার (২১ আগস্ট) দুপুর ১২টার দিকে সিনহা খুনের ঘটনাস্থল বাহারছড়া শাপলাপুরে পৌঁছায়।

পূর্ব সিদ্ধান্ত মতো তদন্তের অংশ হিসেবে ২/১ মিনিটের মধ্যে কিভাবে সিনহাকে হত্যা করা হয়েছিলো তার চিত্র তুলে আনতে ঘটনার রেকি শুরু করেন। এই জন্য একটি সাদা কার ব্যবহার করা হয়। আসামীদের বর্ণনা মতে রেকি পরিচালনা করা হয়। বেলা ৩টার দিকে রেকি সম্পন্ন হয়।
রেকিতে ওই ঘটনার সাথে মিল রেখে প্রথমে এএসআই্ নন্দদুলালকে গাড়ি থেকে তার ভূমিকার চিত্র ধারণ, এরপর লিয়াকত আলী ও সর্বশেষ সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশের রেকি নেয়া হয়। এসময় তাদেরকে বিভিন্ন প্রশ্ন করা হয়। রেকি পরিচালনা করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিনিয়র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ খায়রুল ইসলাম। রেকি শেষ করেই র্যাব ঘটনাস্থলে ছেড়ে চলে আসেন।
তথ্য মতে, বরখাস্ত হওয়া টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বরখাস্ত হওয়া ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী ও বরখাস্ত হওয়া এসআই নন্দ দুলাল রক্ষিতকে আদালতের নির্দেশ মতে গত ১৮ আগস্ট কক্সবাজার জেলা কারাগার থেকে রিমান্ডের জন্য হেফাজতে নিয়ে যায় র্যাব। আজকের (গতকাল) করা রেকিও রিমান্ডের জিজ্ঞাসাবাদের অংশ বলে জানিয়েছে র্যাব সূত্র।
প্রসঙ্গত, গত ৩১ জুলাই খুন হওয়া মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান টেকনাফের বাহারছড়ায় পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এরপর ৫ আগস্ট তার বড়বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস বাদী হয়ে টেকনাফ থানার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, লিয়াকত আলী, নন্দদুলাল রক্ষিত, সাফানুর করিম, কনস্টেবল কামাল হোসেন, কনস্টেবল আবদুল্লাহ আল মামুন ও এএসআই লিটন মিয়াসহ ৯জনকে আসামী করে টেকনাফ সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। পরে মামলা টেকনাফ থানায় নিয়মিত মামলা হিসেবে রুজু হয়। এই মামলায় এজাহারভুক্ত নয় আসামীর মধ্যে সাত জন গ্রেফতার হয়েছেন। এছাড়াও পরে আসামীভুক্ত বাহারছড়ার স্থানীয় তিনজন ও এপিবিএন এর তিন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তারা সবাই জেলা কারাগারে রয়েছেন।

মেজর সিনহা হত্যা,সিপ্রা,রিফাতের জব্দকৃত মালামাল র্যাবের কাছে হস্তান্তর
অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা, তাঁর সহকর্মী শিপ্রা দেবনাথ ও সিফাতের ব্যবহৃত ল্যাপটপ, হার্ডডিস্ক, পেনড্রাইভসহ ২৯ টি উপকরণ র্যাবের কাছে হস্তান্তর করেছে রামু থানা পুলিশ।
মেজর সিনহা হত্যাকান্ডের পরদিন রামু উপজেলার নীলিমা রিসোর্ট থেকে এসব উপকরণ জব্দ করা হয়।
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকারের নেতৃত্বে র্যাবের একটি প্রতিনিধি দল বৃহস্পতিবার (২০ আগস্ট) রাত পৌনে ১২ টার দিকে রামু থানার ওসি মোঃ আবুল খায়েরের নিকট থেকে এসব মালামাল বুঝে নেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার বিকালে সকল মালামাল র্যাবের তদন্তকারি কর্মকর্তাকে হস্তান্তর করতে রামু থানা পুলিশকে আদেশ দেন সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট (আদালত নম্বর-১) রামু’র বিজ্ঞ বিচারক মোহাং হেলাল উদ্দিন।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বিমান চন্দ্র কর্মকার জানিয়েছেন- ল্যাপটপ, মোবাইল, হার্ডডিস্ক, ২ লাখ টাকাসহ ২৯ প্রকার মালামাল আদালতের আদেশের প্রেক্ষিতে র্যাবের কাছে হস্তান্তর হয়েছে।
এসব ডিভাইস ব্যবহৃত হয়েছে কিনা তা পরে তদন্ত সাপেক্ষে জানানো হবে। এনিয়ে কোন তথ্য গোপন রাখা হবে না।
গত ৩১ জুলাই রাতে টেকনাফের মারিশবুনিয়া পাহাড়ে ভিডিওচিত্র ধারণ করে মেরিন ড্রাইভ দিয়ে রামুর খুনিয়াপালংয়ের হিমছড়ি নীলিমা রিসোর্টে ফেরার পথে শামলাপুর এপিবিএন এর তল্লাশি চৌকিতে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো: রাশেদ খান।
ওই রাতেই নীলিমা রিসোর্ট থেকে ঢাকা স্টামফোর্ট ইউনিভার্সিটির ছাত্রী শিপ্রা রানী দেবনাথসহ দুই সঙ্গিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে। যদিওবা সেখান থেকে অপরজনকে ছেড়ে দেয়। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা হয়। যার নম্বর : জিআর-৩১১/২০২০ (রামু)।
এ মামলায় শিপ্রা রানী দেবনাথকে গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।
শিপ্রাকে গ্রেপ্তারের সময় ২৯ প্রকার মালামাল উদ্ধার করলেও জব্দ তালিকাভুক্ত করে নি পুলিশ।
পরে রামু থানায় পৃথক আরেকটি জব্দ তালিকা তৈরি করে এবং জিডি মূলে বিবিধ ১/২০২০ নম্বর মামলা রুজু করে শিপ্রার ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস ও অন্যান্য মালামাল তদন্তকারি কর্মকর্তা এসআই শফিকুল ইসলামের হেফাজতে রাখা হয়।