মেজর সিনহা হত্যা: পুলিশের মামলার ৩ ‘সাক্ষীই ভূয়া

কায়সার হামিদ মানিক::
স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া সেনা কর্মকর্তা সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর প্রথম মামলাটি করে পুলিশই। সেখানে সাক্ষী হিসেবে রাখা হয় ঘটনাস্থল টেকনাফের বাহারছড়ার তিন জনকে। অথচ ওই সাক্ষীরা মূল ঘটনাই জানে না।
জানা গেছে, সিনহার নিহতের ঘটনায় পুলিশ বাদি হয়ে যে মামলাটি করেছিলেন সেখানে সাক্ষী করা হয়েছে তিন ব্যক্তিকে। তারা হলেন, টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়া মারিশবুনিয়া এলাকার নাজির উদ্দিন প্রকাশ রাজুর পুত্র নুরুল আমিন (২২), আব্দুল গফুরের পুত্র হামিদ হোসেন (২৪) এবং জালাল আহম্মদের পুত্র মো. আইয়াছ উদ্দিন (৪০)।
প্রথম সাক্ষী নুরুল আমিন বলেন, ‘সাবেক সেনা সদস্য সিনহার মৃত্যুর ঘটনার বিষয়টি আমি চোখেও দেখিনি ও কানেও শুনিনি। আমার সঙ্গে পুলিশের লোকজন আলাপ না করে সাদা কাগজে সই নিয়েছে। স্বাক্ষর নেয়ার সময় খোদ উপস্থিত ছিলেন ওসি প্রদীপ, লিয়াকতসহ অন্যান্য পুলিশ অফিসারবৃন্দ।
পুলিশের মামলার তৃতীয় সাক্ষী মো. আইয়াছ উদ্দিন বলেন, ওইদিনের ঘটনার পর আমাকে পুলিশ ফাঁড়িতে ডেকে নিয়ে যাই পুলিশের একটি টিম। সেখানে আমার সঙ্গে কোনো কথা বলার আগে ১০-১২টি সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেয় পুলিশ কর্মকতার্রা। এখন শুনছি আমি নাকি নিহতের সিনহার পুলিশের দায়ের করা মামলায় স্বাক্ষী হয়েছি। অথচ আমি এ ঘটনার কিছুই জানি না। সাদা কাগজে স্বাক্ষর নেওয়া পুলিশ সদস্যেদের দেখলে চেনতে পারব।
নিহত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানের পরিবার ও তাদের স্বজন শুরুতে দাবি করে আসছিলেন, কক্সবাজার হিমছড়ি নিলীমার রির্সোটের ভ্রমণবিষয়ক তথ্যচিত্র নির্মাণ করতে সেখানে গিয়েছিলেন মেজর সিনহা ও তাঁর সঙ্গীরা।
এদিকে সিনহার পরিবার ও তাঁর স্বজনদের মূল ঘটনার বর্ণনার সঙ্গে হুবুহু বক্তব্যে মেলে যায় হিমছড়ি নিলীমার রির্সোটের কর্মকর্তা-কর্মচারিদের।
তারা জানান, ঘটনার আগে মেজর (অব.) সিনহা ও তার সঙ্গীরা ভ্রমণবিষয়ক তথ্যচিত্র নির্মাণ করতে মূলত এই রির্পোটের অবস্থান করছিলেন। এতে আমাদের রির্সোটের সুসজ্জিত ও মনোরম দৃশ্য ধারণের সময়ে দেখা যেতে সিনহা, সিব্রা ও সিফাতকে। সেখানে সিফাত ক্যামেরার পেছনে কাজ করতেন, শিব্রা ভ্রমণ বিষয়ে উপস্থাপনার ভূমিকায় ছিলোন এবং সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধায়ন করতেন মেজর সিনহা সাহেব।
তারা আরও বলেন, হিমছড়ি মেরিন ড্রাইভ এলাকাটির বিপরীত পাশে সাগর সংলগ্ন পাহাড়ের টিলা বিশিষ্ট জায়গাতে মনোরম দৃশ্য ধারণের শুটিং করেছিলো সিনহার টিম।
এবিষয়ে জানতে চাইলে কক্সবাজার জেলার পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসাইনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে কোনো সাড়া মেলেনি।
উল্লেখ্য, গত ৩১ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার বাহারছড়ায় মেরিন ড্রাইভ সড়কে চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে সদ্য বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর মেজর (অব.) সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান নিহত হয়েছেন। সিনহা মো. রাশেদ যশোর জেলার ১৩ বীর হেমায়েত সড়কের সেনানিবাস এলাকার এরশাদ খানের ছেলে।এঘটনায় ওসি প্রদীপসহ ৭ পুলিশকে বরখাস্ত করা হয়েছে।