কর্ণফুলীতে হাতির আক্রমণে শিশুর মৃত্যু, সড়ক অবরোধ

চট্টগ্রামের কর্ণফুলীর বড়উঠান ইউনিয়নে দেয়াংপাহাড়ে অবস্থানরত বন্যহাতির আক্রমণে মো. আরমান জাওয়াদ নামে ৩ মাস বয়সের এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় ওই শিশুর মা খতিজা বেগম (৩০) ও গুরুতর আহত হয়।

শনিবার (২২ মার্চ) রাত ১টার দিকে শাহমীরপুর জমাদার পাড়া এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত শিশু স্থানীয় মোহাম্মদ ইব্রাহীমের ছেলে। শিশুটির মা খতিজা বেগম চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দেয়াং পাহাড় থেকে হাতি সরানোর দাবিতে শিশুর লাশ নিয়ে শনিবার ভোর ৬টা থেকে কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়ক অবরোধ করে স্থানীয়রা। এ রিপোর্ট লিখা পর্যন্ত দুপুর সাড়ে ১২টায় পুলিশ ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে সমাধানের চেষ্টা করছেন।

নিহত শিশুর পিতা মোহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, হাতির অবস্থান ঠের পেয়ে আমরা ঘরের ভেতর নিরাপদ মনে করে বসে ছিলাম কিন্তু দরজা ভেঙে হাতির শুঁড় দিয়ে আমার স্ত্রী ও ছেলেকে আছাঁড় দিলে আমার ছেলে মারা যায়। আমার স্ত্রীও মেডিকেল মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে।

স্থানীয়রা জানায়, শুক্রবার দিবাগত রাত ১টার দিকে দেয়াংপাহাড়ে অবস্থানরত তিনটি হাতি শাহমীরপুর জমাদার পাড়া এলাকায় মোহাম্মদ ইব্রাহীমের বাড়িতে প্রবেশ করে। ইব্রাহিমের স্ত্রী খজিমা বেগম ঘরের ভেতর শিশু আরমান জাওয়াদ কোলে নিয়ে অবস্থান করে। এসময় একটি হাতি শুঁড় দিয়ে ঘরের ভেতর থেকে ঠেনে মা-ছেলেকে আছাঁড় দিলে ঘটনাস্থলে শিশুটি মারা যায়। পরে স্বজনরা খতিজা বেগমকে উদ্ধার করে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করায়। তার অবস্থাও আশংকাজনক বলে জানা যায়।

ঘটনার পর দেয়াংপাহাড় থেকে হাতি সরানোর দাবীতে নিহত শিশুটির লাশ নিয়ে শনিবার ভোর ৬টা থেকে কর্ণফুলী টানেল সংযোগ সড়কের দৌলতপুর কেইপিজেড গেইট এলাকায় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় পাঁচ শতাধিক মানুষ। এ রির্পোট লিখার সময় দুপুর ১২ টার সময়ও স্থানীয়রা সড়ক অবরোধ করে রাখে। অবরোধের ফলে টানেল সংযোগ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। ভোগান্তিতে পড়ে আনোয়ারা, বাঁশখালী, চন্দনাইশ, পেকুয়াসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের হাজার হাজার যাত্রী ও কেইপিজেডের শ্রমিক-কর্মচারীরা। ঘটনাস্থলে পুলিশ,সেনাবাহিনী ও প্রশাসনের লোকজন স্থানীয়দের সাথে সমাধানের চেষ্টা করছে বলে জানা যায়।

স্থানীয় বাসিন্দা ওয়াসিম আকরাম জানান, দেয়াং পাহাড়ে অবস্থানরত তিনটি হাতি প্রতি রাতে আনোয়ারা ও কর্ণফুলীর চারটি ইউনিয়নের লোকালয়ে হানা দেয়। এপর্যন্ত দুই উপজেলার নারী শিশুসহ ১৮ জন মানুষ মারা গেছে। হাতি গুলো এখান থেকে সরিয়ে নিতে আমরা প্রশাসন ও বন বিভাগের লোকজনকে একাধিকবার স্মারকলিপি দিয়েছি। এতে তারা কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় আজ আবারো একশিশুকে আমরা হারালাম। যতক্ষণ পর্যন্ত প্রশাসনের লোকজন হাতি সরানোর ব্যবস্থা করবেনা ততক্ষণ পর্যন্ত আমাদের অবরোধ চলবে।

জলদি বন্যপ্রাণী অবয়ারণ্য রেঞ্জ কর্মকর্তা আনিসুজ্জামান শেখ জানান, ঘটনাস্থলে আমাদের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গেছে। সমাধানের চেষ্টা চলছে।

কর্ণফুলী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রয়া ত্রিপুরা জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালাচ্ছি।