সাংগ্রাই উৎসবে মাতোয়ারা কাপ্তাই

মোঃ নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই (রাঙামাটি)। “সাংগ্রাইমা ঞিঞি ঞাঞা রিকজাইগাইপামে/ওও ঞি কো রো ওও মি ম্রি রো/ লাগাই লাগাই চুইপ্যগাইমেলেহ। গানের অর্থ- নববর্ষে সবাই মিলে এক সমানে এক সাথে জল খেলতে যাই, ও ও ভাইয়েরা ও ও বোনেরা, খুশিতে মিলিত হই। মারমা সম্প্রদায়ের সাংগ্রাই জল উৎসবের অন্যতম জনপ্রিয় গানটি গেয়ে যখন মারমা শিল্পীরা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের শুভ সূচনা করলেন-ঠিক তখনই হাজার হাজার তরুন-তরুনীর কলরবে মুখরিত হয়ে উঠে চিংম্রং (চিৎমরম) বৌদ্ধ বিহার মাঠ। এযেন প্রাণের উৎসবে মিলিত হয়েছে তারা। বাংলা নববর্ষকে বরণ ও পুরানো বর্ষকে বিদায় উপলক্ষে পার্বত্য চট্টগ্রামে বসবাসরত মারমা সম্প্রদায় সাংগ্রাই জল উৎসব বা সাংগ্রাই রিলং পোয়ে উৎসব উদযাপন করে থাকে। মারমা যুবক যুবতীরা একে অপরের প্রতি জল ছিটিয়ে পুরানো বছরের দুঃখ, গ্লানি, বেদনাকে ভূলে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে চায়। কাপ্তাই উপজেলার শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চিৎমরম বৌদ্ধ বিহারে সাংগ্রাই রিলং পোয়ে উদযাপন কমিটির আয়োজনে সোমবার (১৫ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১০ টায় চিৎমরম বৌদ্ধ বিহার মাঠে অনুষ্ঠিত হয় সাংগ্রাই রিলং পোয়ে উৎসব-২০২৪। এউপলক্ষে মারমা সম্প্রদায়ের ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, সাংগ্রাই র্যালী, আলোচনা সভা ও জলকেলী অনুষ্ঠিত হয়। এসময় পার্বত্য চট্টগ্রাম সহ চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে হাজার হাজার মানুষের আগমন ঘটে। সাংগ্রাই রিলং পোয়ে উৎসব উপলক্ষে বিহার সংলগ্ন মাঠে ওইদিন সকাল সাড়ে ১০ টায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও রাঙামাটির সাংসদ দীপংকর তালুকদার। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, বিভিন্ন সম্প্রদায়ের মধ্যে বিভিন্ন উৎসবে মেল বন্ধন হয়, এটাই আমাদের সংস্কৃতির প্রধান অনুষঙ্গ। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবসময় বলেন, এদেশ একটি অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। তিনি প্রত্যেক সম্প্রদায়ের অনুষ্ঠানে সবসময় আর্থিক সহায়তা প্রদান করে থাকেন। জল উৎসব উদযাপন কমিটির আহবায়ক ও চিৎমরম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিমং চৌধুরী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। এ্যাডভোকেট হ্লাথোয়াই মারমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন কাপ্তাই ৪১ বিজিবির অধিনায়ক লেঃ কর্নেল আমীর হোসেন মোল্লা, কাপ্তাই ৫৬ বেঙ্গলের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল নুর উল্লাহ জুয়েল, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুই ছাইন চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দিন, সাবেক জেলা পরিষদ সদস্য প্রকৌশলী থোয়াইচিং মং মারমা, রাজস্থলী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সাইফুল আহমেদ ভুঁইয়া। পরে অতিথিবৃন্দ বিহার সংলগ্ন মাঠে জলকেলী উৎসবের উদ্বোধন করেন। জলকেলী উৎসব উদ্বোধন শেষে মনোমুগ্ধকর মারমা সম্প্রদায়ের নৃত্য ও গান পরিবেশন করেন স্থানীয় শিল্পীরা। মূলত ১৫ এপ্রিল মূল সাংগ্রাই উৎসব উদযাপন হলেও গত ১৩ এপ্রিল থেকে চিংম্রং এলাকায় বসে বৈশাখী মেলা। দূর- দূরান্ত থেকে হরেক রকম পণ্য নিয়ে প্রান্তিক ব্যবসায়ীরা তাদের পসরা সাজিয়েছেন বিহার সংলগ্ন মাঠে।