ভোট উৎসবে দেশ

তফসিল চূড়ান্ত ::
তফসিল চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পুনঃতফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। নতুন তফসিল অনুযায়ী ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
গত সোমবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে নির্বাচন কমিশনের ইভিএম প্রদর্শনীতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কেএম নুরুল হুদা এ ঘোষণা দেন।
ঘোষিত নতুন তফসিল অনুযায়ী, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সাত দিন পেছাল। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ২৮ নভেম্বর।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট, যুক্তফ্রন্টসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জোটের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ভোটের নতুন তারিখ নির্ধারণ করল নির্বাচন কমিশন।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার একাদশ সংসদ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করেছিলেন সিইসি। আগের তফসিল অনুযায়ী, ২৩ ডিসেম্বর ভোট হওয়ার কথা ছিল।
ভোটের তারিখ পিছিয়ে দিতে গতকাল রোববার সকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর চিঠি পাঠায় সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন জাতীয় যুক্তফ্রন্ট। তাদের দাবি ছিল- নির্বাচন ২৩ ডিসেম্বর না করে এক সপ্তাহ পিছিয়ে দেয়া হোক।
আর নির্বাচন এক মাস পিছিয়ে দিতে শনিবার বিকালে সিইসিকে চিঠি দেয় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
রোববার ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছিলেন, নির্বাচন কমিশন নির্বাচন পেছালে তাদের আপত্তি নেই।
চিঠি পাওয়ার পর গতকাল বিকালে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেছিলেন, নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে আগামীকাল (সোমবার) সিদ্ধান্ত জানানো হবে।
বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন এক সপ্তাহ পেছানোর সিদ্ধান্ত নিল নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন পেছানোর ঘোষণায় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা বলেন, আমরা তফসিল পুনর্নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ২৮ নভেম্বর পর্যন্ত মনোনয়নপত্র দাখিল করা যাবে। ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে।
এ অনুষ্ঠানের আগে সকালে কমিশনের বৈঠকে তফসিল পুনর্নির্ধারণের এ সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে জানান তিনি।
পুনঃতফসিলের বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, সকালে অন্য কমিশনারদের সঙ্গে আলোচনা করে এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই, প্রতীক বরাদ্দ, মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পরিবর্তিত তারিখ আগামীকাল (১৩ নভেম্বর) জানিয়ে দেয়া হবে।
এর আগে দেশের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো রাজনৈতিক দলের পরিচয় ও প্রতীকে গত ৩০ ডিসেম্বর ২৩৪টি পৌরসভায় ভোট নেওয়া হয়। এতে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টিসহ ২০টি রাজনৈতিক দল অংশ নেয়।

ধোঁয়াশা কেটে গেছে::
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিলকে স্বাগত জানিয়ে এর মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে গেছে বলে জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আজ তফসিল ঘোষণার মধ্য দিয়ে নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে গেছে বলে মন্তব্য করেছের দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ।
তফসিল ঘোষণার ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে প্রতিক্রিয়ায় আওয়ামী লীগের পক্ষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। সব দল নির্বাচনে অংশ নেবে বলেও তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

তারারা নির্বাচনে:
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করার জন্য সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে বেশ কয়েকজন তারকা মনোনয়নপত্র কিনেছেন এবং আরো কেউ কেউ কিনবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এই সংখ্যা কতো হতে পারে? চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট একজন বললেন, এই সংখ্যা ২০ জন ছাড়িয়ে যাবে। তারা সবাই আওয়ামী লীগ বা বিএনপি থেকে মনোনয়নপত্র কিনেছেন। এ পর্যন্ত যারা মনোনয়নপত্র কিনেছেন তাদের মধ্যে আর কোনো দলের প্রতি আগ্রহ দেখা যায়নি। মনোনয়নপত্র কেনার দলে যারা রয়েছেন, তারা এসেছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বিভিন্ন শাখা থেকে। খেলাধূলা, সঙ্গীত, চলচ্চিত্র, গীতিকার, নাট্যাঙ্গনের অভিনেতা-অভিনেত্রীসহ আরো কয়েকটি ক্ষেত্র থেকে। সকলেই আসছেন তাদের তারকা খ্যাতি নিয়ে। ইতোমধ্যে তারকা খ্যাতি নিয়ে রাজনীতির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছেন কবরী, আসাদুজ্জামান নূর, তারানা হালিম, রুবি রহমান (কবি) এবং মমতাজ বেগম।
বর্তমান একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করার জন্য ইতোমধ্যে যারা মনোনয়নপত্র কিনেছেন তাদের মধ্যে রয়েছেন শাবানা, বেবী নাজনীন, মনির খান, হেলাল খান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, জ্যোতিকা জ্যোতি, মাসুদ পথিক, কনক চাঁপা, ফারুক, শাকিল খান, ডিপজল, রোকেয়া প্রাচী, সিদ্দিকুর রহমান, গোলাম কুদ্দুছ, সুজন হাজিন (গীতিকার) ও শমী কায়সার। এরা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের মানুষ হলেও রাজনীতিতে কারো কারো পারিবারিক ঐতিহ্য রয়েছে। সাংস্কৃতিক অঙ্গনের তারকাদের রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে সফল হওয়া নতুন কোনো বিষয় নয়। হলিউড তারকা রোনাল্ড রিগ্যান দুই দফা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। শুধু তাই নয় ‘স্টার ওয়ার্স’ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পৃথিবীর চেহারা বদলে দিয়েছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রে বা বিশ্বের আরো অনেক দেশেই তারকারা রাজনীতিতে যোগ দিয়ে নিরংকুশ সাফল্য অর্জন করেছেন।
শ্রীলংকার ক্রিকেটার অর্জুনা রানাতুঙ্গা মন্ত্রীও হয়েছেন। পাশের দেশ ভারতের দিকে তাকালে দেখা যায়, রাজনীতিতে তারকাদের সাফল্য কতোটা। এমজি রামাচন্দ্রন এব্ং জয়ললিতা ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এছাড়া অমিতাভ বচ্চন, জয়া বচ্চন, হেমা মালিনী, গোবিন্দ এবং শচীন টেন্ডুলকারসহ আরো কয়েকজন তারকা লোকসভা নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছেন। পরে অবশ্য অমিতাভ বচ্চন রাজনীতি থেকে সরে যান। পশ্চিমবঙ্গে প্রায় এক ডজন তারকাই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। অতি সম্প্রতি রাজনীতিতে যোগ দিয়েছেন কমল হাসান ও রজনীকান্ত। সম্ভবত সারা বিশ্বে ভারতীয় তারকারাই রাজনীতির বিষয়ে সর্বাধিক আগ্রহী। এদেশের তারকারাও রাজনীতি সচেতন হতে শুরু করেছেন। আগের তারকা-রাজনীতিবিদদের ধারাবাহিকতায় এখনকার কতদূর এগুতে পারবেন সেটাই দেখার বিষয়। সম্পাদনা : রেজাউল আহসান

সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা বলেছেন, যে যেই অবস্থানে থাকুক না কেন, প্রার্থীকে প্রার্থী হিসেবে দেখতে হবে। সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ দিতে হবে। আইনগতভাবে কেউ যেন বঞ্চিত না হন, আবার কেউ যেন বাড়তি সুবিধা না পান।
‘দৌড়ঝাঁপ’
জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনও প্রায় এক বছর বাকি৷ রাজনৈতিক দলগুলো এরই মাঝে শুরু করেছে ‘দৌড়ঝাঁপ’৷ এক্ষেত্রে ‘এক ঢিলে দুই পাখি’ মারছেন সংসদ সদস্যরা৷ এলাকার উন্নয়ন কাজ পরিদর্শনের পাশাপাশি চালাচ্ছেন জনসংযোগ৷

নির্বাচন আবারো পেছানোর দাবি
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আবারো পেছানোর দাবি জানিয়ে নির্বাচন কমিশনের সাথে ঐক্যফ্রন্ট বৈঠক করার পর নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে এ বিষয়ে আরো আলোচনা করে সিদ্ধান্ত জানাবে নির্বাচন কমিশন।
নির্বাচন কমিশনের সাথে বৈঠক শেষে সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মওদুদ আহমেদ, মাহমুদুর রহমান মান্না, কাদের সিদ্দিকীসহ কয়েকজন নেতা অংশগ্রহণ করেন আলোচনায়।
নির্বাচন অন্তত তিন সপ্তাহ পেছানো সহ আরো কিছু দাবিতে আজ বুধবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সাথে দেখা করে বিএনপিসহ ঐক্যফ্রন্টের বেশ কয়েকজন নেতা।
কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে?
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানান নির্বাচন পেছানো বাদেও বেশ কয়েকটি বিষয়ে কমিশনের সাথে আলোচনা হয়েছে তাদের।
নির্বাচনে ইভিএম বা ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন ব্যবহারের পুরোপুরি বিরুদ্ধে অবস্থান ছিল ঐক্যফ্রন্টের।
তবে নির্বাচন কমিশন সিটি কর্পোরেশনগুলোতে সীমিত সংখ্যক ইভিএম ব্যবহার করার বিষয়ে চিন্তা করছে বলে জানান মি. আলমগীর।
নির্বাচন কেন্দ্রগুলোতে নিয়োগ পাওয়া প্রিজাইডিং অফিসার এবং পোলিং অফিসারদের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল ঐক্যফ্রন্ট।
মি. আলমগীর জানান যে পোলিং অফিসার এবং প্রিজাইডিং অফিসারদের নিরপেক্ষতার বিষয়টি নিশ্চিত করার আশ্বাস দিয়েছে নির্বাচন কমিশন।
এছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষভাবে সম্পন্ন হচ্ছে কি না, তা দেখতে আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকরা যেন উপস্থিত থাকেন সেই দাবি জানানো হয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে।
মি. আলমগীর বলেন পর্যবেক্ষকদের আনাগোনায় বাধাদান করা হবে না বলেও নিশ্চিত করা হয়েছে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে।
এছাড়া বিরোধী নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেফতার ও পুলিশি হয়রানি যেন বন্ধ করা হয় সেবিষয়েও কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় বৈঠকে।
ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে কমিশনের কাছে অনুরোধ করা হয়, নির্বাচনের খবর সংগ্রহ করার সময় সাংবাদিকদের যেন বাধাদান করা না হয়।
নির্বাচন কমিশন সাংবাদিকদের খবর সংগ্রহে কোনোরকম বাধাদান করবে না বলে নিশ্চিত করেছে বলে জানিয়েছেন মি. আলমগীর।
তবে কোনো নির্বাচনী কেন্দ্রের অভ্যন্তর থেকে সরাসরি খবর সম্প্রচার করা যাবে না বলে জানান তিনি।
মি. আলমগীর বলেন, “আমাদের এই নির্বাচনে টিকে থাকা নির্ভর করবে নির্বাচন কমিশনের আচরণের ওপর এবং তারা কতটা নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে পারে, তার উপর।”