স্কিলে নয় নারী দলের সমস্যা ‘মানসিক’!

তিন ম্যাচের তিনটিতেই হার। অস্ট্রেলিয়ার মেয়েদের কাছে হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ নারী দল। সিরিজের এক ম্যাচেও একশ রানের কোটা পার হতে পারেনি জ্যোতিরা। শেষ ম্যাচে ৮৯ রানে অলআউট হওয়ার পর তারা হেরেছে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে। এদিন বোলিংয়েও গড়তে পারেনি কোনও প্রতিরোধ। তবে সবচেয়ে বড় যে দুর্বলতা উঠে এসেছে তা হলো ব্যাটিং। নিজেদের মাটিতে পরিচিত উইকেটে ব্যাট করছে তা কোনও ভাবেই মনে হয়নি। গতকালও শেষ ৫ উইকেট হারায় মাত্র ৩২ রানে। দলের টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যাটারদের দায়িত্ব নিয়ে খেলতে দেখা যায়নি। আউট হয়েছেন একের পর এক বাজে শটে।

আবার রান আউট হওয়ার ধরনও ছিল খুব দৃষ্টিকটু। ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে একেবারেই আনকোড়া কোনও দল। তাহলে কি অজি বোলিং শক্তির কাছে ট্রাইগ্রেসদের ব্যাটিং স্কিলেরই ভীষণ অভাব ছিল! অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি অবশ্য ব্যাটিং স্কিলে ভুল তা একেবারেই মানতে নারাজ। তার মতে সমস্যা মানসিকতায়। ম্যাচ শেষে সংবাদ মাধ্যমে তিনি বলেন, ‘মনে হয় মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। কারণ স্কিল অনুযায়ী তো সমস্যা আছে বলে মনে হয় না। যদি থাকত, তাহলে তো আগে ম্যাচ জিততে পারত না। আমি জানি না সবার মধ্যে কী কাজ করছে। আমি তো সবাইকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করেছি। কিন্তু কেন জানি সবাই ব্যাকফুটে ছিল প্রথম ম্যাচ থেকেই।’ অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের আগে বেশ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক জ্যোতি। তিনি জানিয়েছিলেন ভারতের বিপক্ষে জয় তাদেরকে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসী করেছে। তাহলে কি সেই জয়টা অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজে অতিআত্মবিশ্বাসী করে তুলেছিল বাংলাদেশ নারী দলকে! জ্যোতি অবশ্য এখানেও জানালেন তার ভিন্ন মত। তিনি বলেন, ‘না, আমারা অতিআত্মবিশ্বাসী ছিলাম না। না, আমার হচ্ছে না। যখন প্রথম ম্যাচে করতে পারেনি, পরের ম্যাচে পারেনি, তখন কিন্তু নিজে থেকেই ব্যাকফুটে চলে যায়। সেখান থেকে অনেকে ফিরে আসতে পারে, অনেকে পারে না। আমি বলব মনস্তাত্ত্বিক ব্যাপার। এর চেয়ে বেটার ক্রিকেট তো খেলার সামর্থ্য ছিল আমাদের।’ এই ম্যাচে ০ রানে আউট হয়ে ফারজানা হককে পেছনে ফেলে এখন বাংলাদেশের নারী ক্রিকেটে সর্বোচ্চ ৯টি শূন্যের মালিক এখন নাহিদা আক্তার। দুই দল মিলিয়ে ১৮২ রানের স্কোর হয়েছে। এটি বাংলাদেশ ও অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার নারী ওয়ানডে ম্যাচে দুই দল মিলিয়ে সর্বনিম্ন রানের রেকর্ড। প্রথম ম্যাচে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৯৫ রানে গুটিয়ে যায় দল। পরের দুটিতে আগে ব্যাট করতে নেমে ৯৭ ও ৮৯ রানে অলআউট! তাই ব্যাটিং স্কিল নিয়ে প্রশ্নটা থাকতেই পারে। তবে জ্যোতি বলেন, ‘স্কিলওয়াইজ এর জন্য বলব না, সেটি না থাকলে এর আগে পারফর্ম করল কীভাবে। আসলে আমরা নিজেদের স্কিলকে ব্যাক করতে পারিনি। একটার পর একটা নেতিবাচক ব্যাপার চলে এসেছে।’ শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের ছুড়ে দেয়া লক্ষ্যে ১৮.৩ বলে জয় পায় অ্যালিসা হিলির দল। অবশ্য ৩৩ রান করা আজি অধিনায়ককে লেগ বিফোরের ফাঁদে ফেলে আউট করেন রাবেয়া খান। এলিসা পেরি ২৭ ও বেথ মুনি ২১ রানে অপরাজিত থেকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যায় অজিদের। ৩-০ তে সিরিজ জিতে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করলো সফরকারীরা। এই সিরিজে বাংলাদেশ দল নিজেদের ১০ ভাগ পারফরম্যান্সও করতে পারেননি বলে মনে করেন অধিনায়ক জ্যোতি। তিনি বলেন, ‘১০ শতাংশও না। কারণ আমি নিজেও টোটালি সারপ্রাইজড। কারণ গত ৬ মাসে যেভাবে ক্রিকেট খেলেছি, এটা একেবারেই অমন না। পুরো দল ব্যর্থ। দু একটা দিকে ভুল হলে তবুও মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু পুরো দল ভিন্ন ধরনের ক্রিকেট খেলছে। মনে হচ্ছে যে ব্যাকফুটে রাখছে, মনে হয় যে সামর্থ্যের ১০ ভাগও খেলতে পারিনি।’ অন্যদিকে অজিদের বিপক্ষে সিরিজের আগে কোনও প্রস্তুতি ঘাটতি ছিল না বলেই জানান বাংলাদেশ অধিনায়ক। তিনি বলেন, ‘প্রস্তুতি অনেক ভালো নিয়েছি। অনুশীলনে এক ধরনের মেন্টালিটি নিয়ে করছেন, এসে আরেকভাবে অ্যাপ্লাই করছেন, তখন কঠিন হয়ে যায়। কোচ বলেন বা অধিনায়ক হিসেবে বলেন, যখন দেখি খেলোয়াড় আত্মবিশ্বাসী, প্রস্তুতি ম্যাচে রান করছে, অনুশীলনে নিখুঁত ব্যাটিং করছে, এরপর যখন ভিন্ন ভাবে খেলছে- তখন আর কিছু করার থাকে না আমাদেরও। প্রস্তুতিতে সমস্যা ছিল বলে মনে হয় না। সামর্থ্যের এতটুকু দিয়েও খেলতে পারিনি আমরা।’