সুযোগ পেয়েই বাজিমাত তামিমের

একাদশেই ছিলেন না তিনি। সৌম্য সরকারের চোটের কারণে কনকাশন বদলি হয়ে তাকে ওপেনিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশের থিংক ট্যাঙ্ক। সেই তানজীদ হাসান তামিমই গতকাল শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজের শেষ ম্যাচে খেলেন ৮৪ রানের দর্শনীয় এক ইনিংস। যে ইনিংসের প্রতিটি শটে তামিম মুগ্ধ করেন সবাইকে। কনকাশন বদলি হিসেবে ওয়ানডে ক্রিকেটে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলার রেকর্ড গড়েন বাংলাদেশের এই তরুণ ওপেনার। গতকাল সিরিজ নির্ধারণী লড়াইয়ে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। ব্যাট হাতে তামিম করেন ৮১ বলে ৯ চার ও ৪ ছক্কায় ৮৪ রান। কনকাশন বদলি হিসেবে নেমে এটাই এখন ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। এক্ষেত্রে তামিম ভাঙেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটার মার্নাস লাবুশেনের রেকর্ড। গত বছরের সেপ্টেম্বরে কনকাশন বদলি হিসেবে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ৯৩ বলে ৮০ রান করেন তিনি।

একই সঙ্গে ওয়ানডেতে এটা তামিমের ক্যারিয়ার সেরা ইনিংস। শ্রীলঙ্কার ২৩৫ রান তাড়া করতে নেমে তামিমের আগ্রাসী ব্যাটিংয়েই টাইগারদের স্কোরকার্ডে গতি পায়। শুরু থেকেই সাবলীল এই ওপেনার লঙ্কান বোলিং লাইনআপের সমস্ত পরিকল্পনাই ভেস্তে দেন। অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে গত বছর এশিয়া কাপ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অভিষেক হয় তামিমের। প্রথম ম্যাচে শূন্য রানে ফিরলেও জায়গা পান বিশ্বকাপ স্কোয়াডে। সেখানে অবশ্য নিজের সামর্থ্য খুব একটা দেখাতে পারেননি তিনি। তবে ৯ ম্যাচে করা ২ ফিফটিতে নিজের সামর্থ্যের কিছুটা হলেও জানান দেন তামিম।
এরপর নিউজিল্যান্ড সিরিজ আর এই সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে একাদশে সুযোগ পাননি তিনি। লিটন কুমার দাস অফফর্মের কারণে দল বাদ পড়লেও একাদশে জায়গা পাননি তামিম। গতকাল শ্রীলঙ্কার ইনিংসের শেষ দিকে বাউন্ডারি বাঁচাতে গিয়ে চোট পান সৌম্য। পরে জানানো হয় ঘাড়ের আঘাতে তার কনকাশন হয়েছে। এতে দরজা খুলে যায় তামিমের, আর সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপজয়ী এই ওপেনার।

ওপেনিং সঙ্গী এনামুল হক বিজয়কে এক পাশে বলতে গেলে দর্শক বানিয়েই ৮ ওভারে ৫০ রানের জুটি গড়েন তামিম। এরপর বিজয় আর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত দ্রুত বিদায় নিলেও তামিমের ব্যাটিংয়ে কোনো প্রভাব পড়েনি। এরপর তাওহিদ হৃদয়কে নিয়ে গড়েন ৪৯ রানের জুটি। ৫১ বলে ফিফটি পূর্ণ করা তামিম এরপর হয়ে ওঠেন আরও আগ্রাসী। পরপর ২ ওভারে তাওহীদ হৃদয় ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ফিরে গেলেও তানজিদ তাতে বিচলিত হননি। কুমারার শর্ট বলে পুল করে স্কয়ার লেগের উপর দিয়ে তার মারা ছক্কাটায় মুগ্ধ হননি এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া কঠিন। যেভাবে এগোচ্ছিলেন তাতে ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি মনে হচ্ছিল স্রেফ সময়ের ব্যাপার। কিন্তু আশাবাদী হয়ে উঠতেই আউট হন তিনি! লঙ্কান লেগ স্পিনার ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গাকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন তানজিদ। তবে তার আগেই বাংলাদেশের জয়ের ভিত ঠিক গড়ে দেন এই ওপেনার।

সেই ‘টাইমড-আউট’ নিয়ে নাটক করে দেখালেন মুশফিক

গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের ঘটনা। অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউস দেরি করে ক্রিজে আসায় টাইমড-আউটের আবেদন করেছিল বাংলাদেশ দল। আম্পায়ার সময় দেখে ম্যাথিউসকে আউট ঘোষণা করেন। যে আউট নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। লঙ্কানরা সেই আউটের ঘটনা মেনে নিতে পারেনি। এমনিতেই বাংলাদেশ আর শ্রীলঙ্কার ম্যাচ গত কয়েক বছরে নিয়মিত উত্তাপ ছড়াচ্ছে। সেই নাগিন ড্যান্স দিয়ে শুরু, সবশেষ যোগ হয়েছে টাইমড-আউট উদযাপন। ম্যাথিউস বিশ্বকাপের সে ম্যাচে সাকিবকে আউট করার পর নিজের ঘড়ি দেখিয়ে টাইমড-আউট উদযাপন করেছিলেন। এবার বাংলাদেশে এসে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়ের পর পুরো লঙ্কান দল ঘড়ির দিকে হাত দেখিয়ে টাইমড-আউট উদযাপন করে। সেই উদযাপনের উত্তাপ থামেনি এখনও। এবার ম্যাথিউসের সেই টাইমড-আউটের ঘটনা নাটক করে দেখালেন বাংলাদেশ দলের অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুশফিকুর রহীম। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর ট্রফি নিয়ে ফটোসেশনের আগে মুশফিক ঠিক ম্যাথিউসের সেই ঘটনারই যেন পুনরাবৃত্তি করেন। হাতে একটি হেলমেট নিয়ে বারবার সবার সামনে দেখাতে থাকেন। এমনকি অধিনায়ক শান্তর কাছে গিয়ে হেলমেটের স্ট্র্যাপ দেখান, শান্তও নাটক করে দেখান কিছুই করার নেই তার। ঠিক ম্যাথিউস যেমন করেছিলেন বিশ্বকাপের ম্যাচের দিন, মুশফিক সেই ঘটনাই আবার মনে করিয়ে দেন নাটকীয় ভঙ্গিতে টাইমড-আউট উদযাপনের মাধ্যমে।