সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ রূপকল্প বাস্তবায়নের স্বার্থে দীর্ঘমেয়াদে ভ্যাটমুক্ত ই-কমার্স খাতের দাবি জানিয়েছে ই-ক্যাব।
ই-কমার্স উদ্যোক্তাদের এই সংগঠন মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে। সেখানে সংগঠনটির নেতারা বলছেন, বাজেটে ই-কমার্সে ভ্যাট আরোপ ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে বাধা সৃষ্টি করবে।
তারা বলছেন, ই-কমার্সে ভ্যাট প্রত্যাহার করলে এ খাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি, ক্রয়-বিক্রয়ে স্বচ্ছতা বৃদ্ধি ও ভোক্তার ক্রয় ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরোক্ষভাবে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াবে।
ই-ক্যাব সভাপতি শমী কায়সারের সভাপতিত্বে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মো: আব্দুল ওয়াহেদ তমাল, অর্থ সম্পাদক মোহাম্মদ আব্দুল হকসহ ই-ক্যাব কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য ও পরিচালকরা।
সংগঠনটির দাবি, এবারের বাজেটে প্রস্তাবিত সাড় ৭ শতাংশ ভ্যাট প্রত্যাহার করে অনলাইন পণ্য ও সেবা বিক্রয়কে জাতীয় ডিজিটাল কমার্স নীতিমালা-২০১৮ ও বাংলাদেশ গেজেটে চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রকাশিত সংজ্ঞা অনুযায়ী সংজ্ঞায়িত করে আলাদা সার্ভিস হিসাবে বিবেচনা করা। এছাড়া নতুন সেবা কোড বরাদ্দ দিয়ে আগের এসআরও (S০৯৯.৫০) বহাল রাখা।
শমী কায়সার বলেন, সময় ও দূরত্বের বাধা দূর করে ক্রেতা ও বিক্রেতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করতে ই-কমার্স এখন সবচেয়ে আলোচিত একটি বিষয়। সবেমাত্র বিকশিত হতে শুরু করায় এটি সরকারের একটি লাভজনক সেক্টর হিসেবেও বিবেচিত। এমন সময় ফেইসবুক ও গুগলের মতো প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনতে গিয়ে ডিজিটাল ব্যবসায়ের ওপরেও ভ্যাট আরোপে কেবল ব্যবসায়ের ডিজিটাল রূপান্তরই বাধাগ্রস্ত হবে না, উদ্যোক্তাদের ওপর দ্বৈত বোঝাও চাপিয়ে দেয়া হবে। একইসঙ্গে ডিজিটাল রূপকল্প বাস্তবায়নও হুমকির মুখে পড়বে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশেও ই-কমার্স খাত প্রাথমিক পর্যায়ে ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখা হয়েছিলো উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখনো অনেক দেশেই ই-কমার্সে ভ্যাট নেই। দেশে গ্রাম ও শহরের মধ্যে বিদ্যমান যে দূরত্ব ঘুচতে শুরু করেছিলো তাও বাধাগ্রস্ত করবে এই ভ্যাট। থমকে যাবে নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টির সুযোগ। বেকারত্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠবে। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও নারী উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হওয়ার সম্ভাবনা আঁতুর ঘরেই মৃত্যু বরণ করবে।
মোহাম্মাদ আব্দুল ওয়াহেদ তমাল বলেন, সরকারের রাজস্ব বাড়ানোর উদ্যোগের সঙ্গে দ্বিমত নেই। কিন্তু তাই বলে বৃহত্তর স্বার্থে স্বল্প মেয়াদী আয়ের বিনিময়ে নয়। ই-কমার্সের সংজ্ঞাকে পরিস্কার করতে করতে হবে। যাদের ফিজিক্যাল কোনো স্টোর নেই, কেবল অনলাইনেই পণ্য বিক্রি করেন শুধু সেসব প্রতিষ্ঠানকেই ভ্যাটের আওতামুক্ত রাখার দাবি জানানো হচ্ছে। কারণ যারা অনলাইন ব্যবসায় করেন তারা বাজার থেকে পণ্য কেনার সময়ই একদফা ভ্যাট দিয়ে থাকেন। এরপরও যদি পুনরায় তাদেরকে ভ্যাট দিতে হয় তবে তাদেরকে দুই দফা কর দিতে হবে। আর এই কর ভার কিন্তু শেষ পর্যন্ত ভোক্তার ওপর গড়াবে। অর্থাৎ অনলাইনে পণ্যমূল্য বেড়ে যাবে। তখন কেউ অনলাইনে কেনা-কাটা করার আগ্রহ হারিয়ে দেখাবে না।
ই-ক্যাব আগামী তিন বছরে সারাদেশে আরও ১০ লাখ কর্মসংস্থান তৈরির লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বর্তমানে ই-কমার্সের সঙ্গে প্রায় ৫০ হাজার উদ্যোক্তা সরাসরিভাবে জড়িত। এই ভ্যাট তাদের সবার জন্যই একটা মারাত্মক ঝুঁকি হয়ে দাঁড়াবে।
সংবাদ সম্মেলনে আজকের ডিল, বাগডুম, রকমারি, দারাজ, চালডাল, পাঠাও, সেবা এক্সওয়াইজেড, দিনরাত্রি, সিন্দাবাদ, প্রিয়শপ ডটকমসহ বিভিন্ন ই-কামার্স উদ্যোক্তা ও খাত সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।