বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম মানব ভ্রুণ তৈরির দাবি বিজ্ঞানীদের

বিজ্ঞানীরা বলছেন, শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ছাড়া স্টেম সেল থেকে বিশ্বের প্রথম কৃত্রিম মানব ভ্রুণ তৈরি করেছেন তারা। এই ভ্রূণ-সদৃশ কাঠামোতে হৃৎপিণ্ড বা মস্তিষ্কের মতো অঙ্গগুলোর অভাব রয়েছে। তবে এতে কোষ রয়েছে যা এক সময় প্লাসেন্টা, কুসুম থলি ও ভ্রূণ গঠন করবে।

শুক্রাণু ও ডিম্বাণুর নিষেকের মাধ্যমে নারী মানবদেহের মধ্যে নতুন প্রাণের সৃষ্টি হয়। শুধু মানুষ নয়, সব স্তন্যপায়ী ও মেরুদণ্ডী বর্গের প্রাণীর ভ্রুণও একই প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়। তবে স্টেম সেল থেকে মানব ভ্রুণ তৈরির লক্ষ্যে বিশ্বের বহু দেশেই গবেষণা চলছে।

আল জাজিরার প্রতিবেদন মতে, যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোনিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি’র একদল গবেষক ইসরাইলের গবেষকদের সঙ্গে মিলে শুক্রাণু ও ডিম্বাণু ছাড়াই স্টেম সেল থেকে প্রথম মানব ভ্রুণ তৈরির দাবি করলেন।

গবেষকরা বলছেন, স্টেম সেলের মাধ্যমে তৈরি এ কৃত্রিম ভ্রুণ এখনও স্বাভাবিক ভ্রুণের মতো পরিপূর্ণতা পায়নি। যতখানি সময়ের মধ্যে স্বাভাবিক ভ্রুণে হৃৎস্পন্দন ও মস্তিষ্কের গঠন শুরু হয়, সেসময় পেরিয়ে গেলেও কৃত্রিম ভ্রুণটিতে এখনও তেমন কিছু ঘটেনি। তবে ভ্রুণটির বৃদ্ধি-বিকাশ অব্যাহত থাকায় গবেষকরা আশা করছেন, দেরিতে হলেও ভ্রুণটিতে হৃৎপিণ্ড ও মস্তিষ্কের গঠন শুরু হবে।

বুধবার (১৪ জুন) বোস্টনে ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি ফর স্টেম সেল রিসার্চ’র বার্ষিক সম্মেলনে গবেষক দলের প্রধান যুক্তরাজ্যের ইউভার্সিটি অব কেমব্রিজ ও যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজির গবেষক ম্যাগডালেনা জেরনিকা গোয়েৎজ বলেন, ‘স্টেম সেল ব্যবহার করে মানব ভ্রুণের মতো কাঠামো তৈরিতে সক্ষম হয়েছি।’

এ গবেষক জানান, ২০২২ সালে তার নেতৃত্বাধীন গবেষক দল ইসরাইলের ওয়েইজমান ইনস্টিটিউটের একটি প্রতিনিধি দলের সঙ্গে যৌথভাবে এ গবেষণা করে। সেসময় একটি ইঁদুরের ভ্রুণ থেকে কোষ নিয়ে সেটিতে পুনর্গঠনের (রি-প্রোগ্রাম) মাধ্যমে ভ্রুণে পরিণত করতে সফল হন তারা।

ম্যাগডালেনার কথায় ‘তারপর আমাদের মনে হলো, একই পদ্ধতিতে কৃত্রিম মানব ভ্রুণও তৈরি করা সম্ভব। যেমন ভাবা তেমন কাজ। মানব ভ্রুণ থেকে কোষ সংগ্রহ করে পুনর্গঠনের মাধ্যমে শুক্রানু-ডিম্বানু ছাড়াই নতুন ভ্রুণ তৈরি করেতে সক্ষম হই।’ গত বুধবারের ওই সম্মেলনে জেরনিকা গোয়েৎজ আরও বলেন, গবেষণাগারে তারা যে ভ্রুণটি তৈরি করেছেন, সেটিও স্বাভবিক ভ্রুণের মতোই বিকশিত হবে বলে আশা করছেন তারা।

তিনি বলেন, মানব জরায়ুর ভেতরে ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর নিষেকের পর নিষিক্ত কোষটি ভ্রুণের আকার পেতে ১৪ দিন সময় লাগে। স্বাভাবিক মানবভ্রুণের মতো আমাদের সৃষ্ট ভ্রুণটিও কোষ ও অ্যামনিওন (এক প্রকার ঝিল্লি) আলাদাভাবে শনাক্ত করার পর্যায়ে পৌঁছেছে। সুতরাং সামনের দিনগুলোতে আরও বিকশিত হয়ে এটি একটি পরিপূর্ণ ভ্রুণ হয়ে উঠবে।

জেরনিকা গোয়েৎজের দাবি, তাদের এ প্রকল্প সফল হলে মানুষের জেনেটিক রোগব্যাধি ও শারীরিক জটিলতার কারণে গর্ভপাত রোধবিষয়ক গবেষণা অনেকদূর অগ্রসর হবে।