উন্নত জাতি গঠনে বিশ্ববিদ্যালয়কে জ্ঞান-গবেষণায় সমৃদ্ধ হতে হবে

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন অনুষ্ঠানে চবি উপচার্য

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার বলেছেন, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়কে উন্নত বিশে^র স্বনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের কাতারে সামিল করতে জ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারণের সাথে সাথে উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অধিকতর মানোন্নয়নের কোন বিকল্প নেই। ১৮ নভেম্বর ২০২০ বেলা ১২ টায় চবি উপাচার্য দপ্তরের সম্মেলন কক্ষে স্বাস্থ্যবিধি মেনে অনুষ্ঠিত ‘৫৪ তম চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় দিবস উদযাপন’ উপলক্ষে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন কর্তৃক আয়োজিত ‘দেশের পাবলিক বিশ^বিদ্যালয়সমূহের মধ্যে চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের সূচক উন্নীতকরণে করণীয়’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সভাপতির ভাষণে তিনি এ কথা বলেন।
মাননীয় উপাচার্য তাঁর ভাষণে ৫৪ তম চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সকলকে স্বাগত, শুভেচ্ছা ও আন্তরিক অভিনন্দন জানান। তিনি তাঁর ভাষণের শুরুতে মহাকালের মহানায়ক, স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের মহান স্থপতি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চারনেতা, মহান মুক্তিযুদ্ধে শাহাদাৎ বরণকারী ত্রিশলক্ষ শহীদ, মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মোৎসর্গকারী চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সদস্যদের এবং ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট নির্মমভাবে শাহাদাৎ বরণকারী শহীদ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যবর্গ ও ’৫২ এর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। মহান মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিত দু’লক্ষ জায়া-জননী-কন্যার প্রতি বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করেন এবং শহীদ জননী জাহানারা ইমামকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। মাননীয় উপাচার্য বলেন, যে জাতি জ্ঞান-গবেষণায় যতবেশি সমৃদ্ধ সে জাতি ততবেশি উন্নত। আর বিশ^বিদ্যালয় হলো জ্ঞান-গবেষণার উন্মুক্ত ক্ষেত্র। তাই উন্নত জাতি গঠনে বিশ^বিদ্যালয়কে জ্ঞান-গবেষণায় আরও সমৃদ্ধ হতে হবে। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় দেশের অন্যতম উচ্চশিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানকে বিশে^র উন্নতর বিশ^বিদ্যালয়ের কাতারে সামিল করতে বর্তমান প্রশাসন বিশ^বিদ্যালয়ের জ্ঞান-গবেষণার ক্ষেত্র সম্প্রসারণ এবং উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার অধিকতর মানোন্নয়নকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, করোনাকালীন এ সময়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান কার্যক্রম সচল রাখতে অনলাইনে ক্লাস পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়াও অনলাইন ক্লাসে অংশনেয়ার সুবিধার্থে প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের প্রতিমাসে সাশ্রয়ীমূল্যে ১৫জিবি ডাটা প্রদান করা হচ্ছে। মাননীয় উপাচার্য বলেন, চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক, প্রশাসনিক ও ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নসহ বিশ^বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়নের সকল ক্ষেত্রে সততা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণে বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসন দৃঢ় অঙ্গীকারাবদ্ধ। মাননীয় উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে প্রাণপ্রিয় শিক্ষার্থীদের নিয়মিতভাবে অনলাইন ক্লাস কার্যক্রমে অংশ নিয়ে পঠন-পাঠনে অধিকতর মনযোগী হওয়ার আহ্বান জানান এবং করোনাকালীন এ সময়ে যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পরামর্শ প্রদান করেন।
চবি মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর ড. শিরীণ আখতার ‘বেগম রোকেয়া পদক ২০২০’ -এ ভূষিত হওয়ায় অনুষ্ঠানে উপাস্থিত বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ মাননীয় উপাচার্যকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানান এবং মাননীয় উপাচার্যের সুস্বাস্থ্য, দীর্ঘায়ু ও কল্যাণ কামনা করেন। উল্লেখ্য, নারী শিক্ষায় অবদান, নারীর উন্নয়ন ও অগ্রগতির ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ চবি মাননীয় উপাচার্য এ বছর ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২০’ অর্জন করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তিলওয়াত করেন চবি কেন্দ্রীয় মসজিদের খতিব হাফেজ আবু দাউদ মুহাম্মদ মামুন, পবিত্র গীতা থেকে পাঠ করেন রসায়ন বিভাগের প্রফেসর ড. তাপসী ঘোষ রায়, পবিত্র ত্রিপিটক থেকে পাঠ করেন সহকারী প্রক্টর ও পালি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক জনাব অরূপ বড়ুয়া এবং পবিত্র বাইবেল থেকে পাঠ করেন আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের প্রভাষক জনাব জেসী ডেইজী মারাক। এছাড়া জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু পরিবারের শহীদ সদস্যবর্গ, জাতীয় চারনেতাসহ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের আত্মার মাগফেরাত কামনা এবং দেশ-জাতি ও বিশ^বিদ্যালয়ের উত্তরোত্তর সমৃদ্ধি কামনা করে বিশেষ মোনাজাত করা হয়। মাননীয় উপাচার্য চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয়ের ‘৫৪ তম চট্টগ্রাম বিশ^বিদ্যালয় দিবস’ উপলক্ষে বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে কেক কাটেন।
পূর্বাহ্নে বেলা ১১.৩০ টায় মাননীয় উপাচার্য বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সকলকে সাথে নিয়ে চবি বঙ্গবন্ধু চত্বরে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
চবি রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) প্রফেসর এস এম মনিরুল হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে চবি সিনেট ও সিন্ডিকেট সদস্যবৃন্দ, অনুষদের ডিনবৃন্দ, শিক্ষক সমিতির নেতৃবৃন্দ, ফাইন্যান্স কমিটির সদস্যবৃন্দ, কলেজ পরিদর্শক, হলের প্রভোস্টবৃন্দ ও ওয়ার্ডেন, বিভাগীয় সভাপতি এবং ইনস্টিটিউট ও গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালকবৃন্দ, প্রক্টর ও সহকারী প্রক্টরবৃন্দ, ছাত্র-ছাত্রী পরামর্শ ও নির্দেশনা’র পরিচালক, শিক্ষকবৃন্দ, অফিস প্রধানবৃন্দ, অফিসার সমিতি-কর্মচারী সমিতি-কর্মচারী ইউনিয়নের নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থীসহ বিশ^বিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।