মির্জা ইমতিয়াজ:: অজ্ঞাত ব্যাক্তিরা সাংবাদিক গোলাম সারোয়ারকে অ্যাম্বুলেন্সে করে এনে ৮টার দিকে সীতাকুণ্ডের কুমিরা ইউনিয়নের বড় কুমিরা বাজারের পার্শ্বে অন্ধকার জায়গায় ফেলে যায়। এ সময় সাংবাদিক সারোয়ার প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় ছিল।
৭ নং কুমিরা ইউনিয়নের ইউপি সদস্য আলাউদ্দিন জানান, একজন ব্যাক্তিকে অ্যাম্বুলেন্স থেকে ফেলে দিতে দেখে স্থানীয় কয়েকজন ব্যাক্তি তাকে উদ্ধার করে করে রাস্তার পাশে নূরুল আলমের ডেকোরেশনে রাখেন। তখন তিনি কিছুটা কথা বলতে পারছিলেন।
তিনি জানান, তাকে শারীরভাবে মারধর করা হয়েছে। তেবে কারা কি কারণে মেরেছে তিনি জানেন না। রাত সাড়ে ৮টার দিকে সিএমপির কোতোয়ালী থানার ওসির নেতুত্বে পুলিশের একটি টিম সাংবাদিক সারোয়ারকে নিয়ে শহরের চলে আসেন।
সারোয়ার বলেছে তাকে একটি গাড়িতে ২/৩ ঘন্টা ধরে রেখেছে। পরে তাকে অন্ধকারের মধ্যে ফেলে যায়। সরওয়ারকে স্থানীয় লোকজন উদ্ধারের বেশ কিছুক্ষণ পর জ্ঞান ফিরে পাওয়া সরওয়ার প্রথম যে কথাটি বলেছেন, তা হল- ‘ভাই আমারে আর মাইরেননা, আমি আর নিউজ করবোনা’ প্লিজ।
সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে উদ্ধার করার পর তাকে রাত সাড়ে নয়টার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৪ নং ওয়ার্ডের এইচডিইউ ইউনিটে ভর্তি করা হয়। রাত ১০টার দিকে তিনি কিছুটা স্বাভাবিক হয়ে আলতো আলতো কথা বলতে শুরু করেছেন। ওই ইউনিটের চিকিৎসক ডা. ওমর আলী বলেন, ‘সরোয়ারের শরীরের ইসিজি করা হয়েছে। তিনি এখন অনেকটা সুস্থ আছেন।’
উদ্ধার হওয়ার পর হাসপাতালে শয্যাশায়ী সাংবাদিক গোলাম সরওয়ার বলেন, প্রতিবেদককে বলেন ‘আমি পাঠাও বাইকে করে নগরীর কাজির দেউড়ি আলমাস সিনেমার সামনে যেতেই হঠাৎ জোর করে পাঠাও বাইকের পেছনে অপর একজন উঠে পড়ে। আমার বাইকের পেছনে বসে এক লোক আমাকে কালো হেলমেট পরিয়ে দেয়। এটি পরিয়ে দেওয়ার সাথে সাথে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে থাকি। ‘আমাকে চার জনে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। আমাকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলেছে এমনটি বুঝতে পারি। এরপর আর কিছুই মনে ছিল না আমার।’
আমাকে যেখানে রেখেছিল, সেখানে ট্রেন চলাচলের শব্দ শুনতাম।’ আমাকে প্রতিদিন লোহার মোটা লাঠি, রড, ও গাছ দিয়ে সারা শরীরে মারধর করা করেছে। অপহরণকারীরা মারতে মারতে তাকে জিজ্ঞেস করছিলেন ‘আর নিউজ করবি?’
উল্লেখ্য গত বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর কোতোয়ালী থানার ব্যাটারী গলির বাসা থেকে বেরিয়ে নিখোঁজ হন সাপ্তাহিক আজকের সূর্যোদয়ের চট্টগ্রাম অফিসের রিপোর্টার ও অনলাইন নিউজ পোর্টাল সিটি নিউজ এর সম্পাদক গোলাম সারোয়ার।
রাত ১১টার দিকে সিএমপি কমিশনার সালেহ মোহাম্মদ তানভীর চমেক হাসপাতালে সরওয়ারকে দেখতে যান। এ সময় তিনি তার চিকিৎসার খোঁজখবর নেন।
হাসপাতালে সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে দেখতে গিয়ে সাংবাদিকদের সর্বোচ্চ জাতীয় সংগঠন বিএফইউজে’র সহসভাপতি রিয়াজ হায়দার চৌধুরী ঘটনার নেপথ্যের হোতাকে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তিনি এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে আরো গতিশীল ভুমিকা রাখার অনুরোধ জানান । তিনদিন পর অজ্ঞান অবস্থায় হলেও অনুজপ্রতীম সাংবাদিক গোলাম সরোয়ারকে পাওয়া যাওয়ায় পরম করুনাময়ের কাছে অবনত মস্তকে কৃতজ্ঞতা জানিয়ে রিয়াজ হায়দার চৌধুরী এ সময়ে গণমাধ্যমে বলেন, ‘এখন রাষ্ট্রীয় খরচে তাঁর( গোলাম সরোয়ারের) সুচিকিৎসা এবং অপহরণের নেপথ্যের ক্রীড়ানকদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে ।’ মাঠে থাকার জন্য বিশেষ কৃতজ্ঞতা জানান তিনি চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের সন্মানিত সদস্যের । অশেষ কৃতজ্ঞতা জানান সারাদেশের সাংবাদিক নেতৃবৃন্দ তথা বিএফইউজে’র সভাপতি মোল্লা জালাল ও মহাসচিব শাবান মাহমুদকে নেতৃবৃন্দকে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, র্যাব এর মহাপরিচালক চৌধুরী আল মামুনসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি ।