এখনো ঝুঁকি নিয়ে বসবাস করছে বহু পরিবার
নজরুল ইসলাম লাভলু, কাপ্তাই:
১৩ জুন ২০১৭ সালের আজকের এইদিন কাপ্তাইবাসীর জন্য ছিল এক বিভীষিকাময় দিন। ওই সালের ১২ জুন মধ্যরাত থেকে মুষলধারে টানা বর্ষনে ঘরবন্দি সব মানুষ। প্রবলবৃষ্টিতে সেদিন কাপ্তাইয়ের সকল সড়ক পথ যান চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। অজানা আশংকা ভর করেছিল জনমনে।
১৩ জুন সকালে কাপ্তাইবাসী ঘুম থেকে উঠেই খবর পেল ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসের কথা। বিভিন্ন প্রান্ত হতে আসতে লাগলো মৃত্যুর খবর। সেদিন সকালে প্রথম দুঃসংবাদটি আসে ১ নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়নের মিতিঙ্গাছড়ি হতে। ভয়াবহ পাহাড় ধ্বসে সেদিন ওই এলাকায় বসবাসরত নুরনবী, গর্ভবতী পুত্রবধু এবং শিশু পুত্র ঘটনাস্থলেই পাহাড় ধ্বসে মারা যায়। ঘটনার পর পরই ফায়ার সার্ভিসসহ ওই এলাকায় ছুটে যান তদানিন্তন কাপ্তাই উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দিলদার হোসেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিকুল আলম এবং ১ নং চন্দ্রঘোনা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ারুল ইসলাম চৌধুরী বেবী। এরপর একে একে ওয়াগ্গার মুরালীপাড়া, রাইখালির কারিগর পাড়া এবং চিৎমরম হতে পাহাড়ধ্বস আর মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। সেদিনের পাহাড় ধ্বসে কাপ্তাইয়ে প্রান হারায় সর্বমোট ১৮ জন। পাহাড়ী ঢ়লে তলিয়ে যায় শত শত একর ফসলি ক্ষেত, বিনষ্ট হয় বহু ঘরবাড়ী। সে দিনের কথা মনে করে কাপ্তাইয়ের জনগন আজো শিহরিত হয়ে উঠে। আজ ভয়াল সেই ১৩ জুন,২০২০ কাপ্তাইয়ে পাহাড় ধ্বসের ৩ বছর। এখনো কাপ্তাইয়ের অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। বিশেষ করে ৪ নং কাপ্তাই ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপূর্ণ ভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। এছাড়া ওয়াগ্গা ইউনিয়নের মুরালীপাড়া, রাইখালী ইউনিয়নের কারিগর পাড়া, তিনছড়ি, মিতিঙ্গাছড়িসহ দূর্গম অনেক জায়গায় ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। বর্ষা মৌসুমে অতিবৃষ্টি হলে এদেরকে প্রশাসনের পক্ষ হতে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে আসা হলেও এসব পরিবার গুলোকে স্থায়ীভাবে পূর্নবাসন করা হয়নি । এবিষয়ে জানতে চাওয়া হলে কাপ্তাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশ্রাফ আহমেদ রাসেল জানান, উপজেলা প্রশাসন সবসময় পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের সর্তক করে আসছে। অতিবৃষ্টি হলে আমরা এদেরকে নিকটস্থ স্কুলে নিয়ে যাচ্ছি,যাতে প্রানহানী না ঘটে। তিনি আরো জানান, ইতিমধ্যে আমরা সরকারের নিকট কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে একটি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ এবং চিৎমরম ইউনিয়নে একটি আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরির জন্য লিখিত আকারে প্রস্তাব পাঠিয়েছি। এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ৫০ টির অধিক পরিবার স্থায়ীভাবে বসবাস করতে পারবে। ৪ নং কাপ্তাই ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ জানান, প্রতিবছর বর্ষা আসলে অজানা আতংকে থাকতে হয়। বিশেষ করে তার ইউনিয়নের ঢাকাইয়া কলোনিতে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে শত শত পরিবার। তিনি জানান, অতিবৃষ্টি হলে এসমস্ত পরিবারকে কাপ্তাই উচ্চ বিদ্যালয়ে নিয়ে এনে আশ্রয় দেওয়া হয় এবং তাদের খাবার পরিবেশন করা হয়ে থাকে। কিন্ত এটা কোন স্থায়ী সমাধান নয়, তাই তিনি পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসকারীদের স্থায়ীভাবে কোন নিরাপদ জায়গায় পূর্নবাসন করার জন্য সরকারের নিকট জোর দাবী জানান। প্রতিবছর বর্ষায় অতিবৃষ্টি হলে কাপ্তাইয়ে অনেক জায়গায় পাহাড়ধ্বস হয়, প্রানহানী ঘটে, ক্ষতি হয় সম্পদের। ঘটনার পর ছুটে আসে মন্ত্রী, এমপি, জনপ্রতিনিধি, প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিরা। সকলেই আশ্বাস দেয় এদের পূর্নবাসনের। কিন্ত বর্ষা শেষ হলেই সেসব প্রতিশ্রুতি নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামায় না। তাই কাপ্তাইয়ের সর্বস্তরের জনগণের দাবী, এসব পরিবার গুলোকে স্থায়ীভাবে পূর্নবাসন করা হউক, যেনো আর কারো মায়ের বুক খালি না হয়।