এনআইডি নির্বাচন কমিশন থেকে আলাদা কমিশন করার প্রচেস্টার প্রতিবাদে সারাদেশের মত হাটহাজারীতে মানববন্ধন করেছে নির্বাচন অফিস।
বৃহস্পতিবার(১৩ মার্চ) সকালে হাটহাজারী উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে নির্বাচন অফিসার পরান্টু চাকমার সভাপতিত্বে মানববন্ধন বক্তারা বলেন, ২০০৭-০৮ সালে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় একটি নির্ভুল ও গ্রহণযোগ্য ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়ণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়।
নির্বাচন কমিশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অক্লান্ত পরিশ্রমে গড়ে ওঠে ৮ কোটি ১০ লক্ষ নাগরিকের ডেমোগ্রাফিক ও বায়োমেট্রিক তথ্য সম্বলিত এক সুবিশাল ভোটার ডেটাবেইজ যা পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য নজির। সর্বশেষ প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুসারে এই ডাটাবেজে প্রায় ১২.৫০ কোটি নাগরিকের তথ্য রয়েছে। UNDP-র সমীক্ষা অনুসারে ভোটারদের এই সংগৃহীত ডাটা ৯৯.৭% সঠিক মর্মে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ করেছে। ভোটার তালিকার এই তথ্যভান্ডার থেকেই উপজাত (byproduct) হিসেবে নাগরিকদের জাতীয় পরিচয়পত্র (NID) প্রদান করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে NID সেবা নির্বাচন কমিশনের আওতা থেকে স্থানান্তরের বিষয়ে বিভিন্ন আলোচনা চলছে। এ প্রেক্ষাপটে নির্বাচন কমিশন নিম্নলিখিত বিষয়গুলো স্পষ্ট করতে চায়:০১. সাংবিধানিক ম্যান্ডেট: সংবিধান-এর ১১৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী ভোটার তালিকা প্রস্তুতকরণের তত্ত্বাবধান, নির্দেশ ও নিয়ন্ত্রণ নির্বাচন কমিশনের উপর ন্যস্ত।
ভোটার তালিকার তথ্যভান্ডার একটি সংবিধানিক দলিল, যা কারও কাছে হস্তান্তর করার সুযোগ নেই। ০২. ভোটার তালিকা প্রণয়ন প্রক্রিয়া: উচ্চ আদালতের আদেশ অনুসারে, ভোটার তালিকা প্রস্তুতের ক্ষেত্রে বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি একটি সংবিধানসম্মত ও সুরক্ষিত প্রক্রিয়া, যা NID কার্যক্রমের ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। ০৩. জাতীয় পরিচয়পত্র ও ভোটার তালিকা: জাতীয় পরিচয়পত্র, ভোটার তালিকার উপজাত (byproduct) প্রকৃতপক্ষে, জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য আলাদা কোনো তথ্যভান্ডার নেই, এটি শুধুমাত্র ভোটার তালিকা থেকে উদ্ভূত। ০৪. ডাটাবেজের নিরাপত্তা ও সম্ভাব্য ঝুঁকি: NID সেবা অন্য সংস্থার অধীনে গেলে data duplication ও database manipulation এর আশংকা দেখা দিতে পারে। এতে বিদ্যমান check & balance ব্যবস্থা বিনষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকবে। ০৫. গোপনীয়তা ও তথ্য সুরক্ষা: নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য নির্বাচন কমিশনের কাছে আমানত হিসেবে সংরক্ষিত।
সাংবিধানিকভাবে কমিশন এই তথ্য অন্য কোনো কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারে না। এটি নাগরিকদের তথ্য সুরক্ষার প্রশ্নেও একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।০৬. জনগণের বিপুল অর্থের সাশ্রয়: জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনে থাকায় এবং কমিশনের একই জনবল দ্বারা এই কার্যক্রম সম্পাদনের ফলে দেশ ও সরকারের জন্য এটি একটি সাশ্রয়ী সেবায় পরিণত হয়েছে। আলাদা কোন কর্তৃপক্ষ তৈরি করা হলে জনবল, স্থাপনা ও অন্যান্য অবকাঠামো তৈরিতে জনগণের বিপুল অর্থের অপচয় হবে যা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
০৭. ভোটার নিবন্ধনে নেতিবাচক প্রভাব: জাতীয় পরিচয়পত্র নির্বাচন কমিশন হতে অন্যত্র স্থানান্তর করা হলে শুধুমাত্র ভোটার হওয়ার জন্য জনগণের আগ্রহ ও উদ্দীপনায় নেতিবাচক প্রভাব সৃষ্টি হবে যা ভবিষ্যতে নির্বাচন ব্যবস্থা ও গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। উপরন্তু নির্বাচন কমিশন নিজস্ব উদ্ভাবনী কার্যক্রমের স্বীকৃতি হারালে নতুন কোন উদ্ভাবনে (innovation) প্রতিষ্ঠানিকভাবে নিরুৎসাহিত হবে। ০৮. ভোটার তালিকার শুদ্ধতা নিয়ে সন্দেহ: নির্বাচন কমিশন থেকে NID কার্যক্রম সরিয়ে নেওয়া হলে ভোটার তালিকার নির্ভুলতা নিয়ে রাজনৈতিক দল ও সাধারণ জনগণের মধ্যে সংশয় তৈরি হতে পারে। ফলে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা হুমকির মুখে পড়বে। ০৯. রাজনৈতিক দলগুলোর অভিমত: অধিকাংশ রাজনৈতিক দল ২০২৩ সালের জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন বাতিল করে NID কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের অধীনে ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়ে আসছে। এতে স্পষ্ট যে, নির্বাচন কমিশনের অধীনে NID কার্যক্রম পরিচালিত হওয়াই সর্বজনস্বীকৃত ও গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থা। আমরা মনে করি, জাতীয় পরিচয়পত্র সেবা নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকাই সংবিধানসম্মত, নিরাপদ ও কার্যকর ব্যবস্থা।
আমরা সকল অংশীজনের সহযোগিতা কামনা করছি, যাতে ভোটার তালিকা ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংক্রান্ত কার্যক্রম যথাযথভাবে পরিচালিত হতে পারে এবং জনগণের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে। মানববন্ধনে সহকারী নির্বাচন অফিসার খলিলুর রহমান, ডাটা এন্ট্রি অপারেটর নিজাম উদ্দিন, নুর মোহাম্মদ সৈকত, জাহিদ হোসেনসহ অন্যান্য কর্মচারী ও সেবাপ্রার্থীরা। এদিকে সকাল থেকে কার্যক্রম বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন এনআইডি সংক্রান্ত বিষয়ে সেবাপ্রার্থীরা।
সেবা নিতে এসে সেবা বন্ধ থাকায় খোকন বড়ুয়া যায়যায়দিনকে বলেন, মায়ের একটা এনআইডি সংশোধনে এসে দেখি সেবা বন্ধ। তবে যা শুনলাম এতে তাদের দাবি যুক্তিযুক্ত। সেবা নিতে আসা বুড়িশ্চর এলাকা থেকে নার্গিস আক্তার বলেন, এতদুর থেকে এসে ফিরে যেতে হচ্ছে। জানিনা কখন সেবা কার্যক্রম শুরু হবে।