চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের ভাটিয়ারী হাজি তোবারক আলী চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্য্যকে বাধ্য করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নিয়েছেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরে প্রধান শিক্ষকের অফিসকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় কান্নায় ভাসছিলেন ওই প্রধান শিক্ষক।
বুধবার(১৬ এপ্রিল) বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা ভাটিয়ারীতে জড়ো হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে বিক্ষোভ মিছিল করে বিদ্যালয়ে এসে জোরপূর্বক এই স্বাক্ষর নিয়েছে বলে জানিয়েছেন নবগঠিত বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন।
মিছিলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা তার পদত্যাগ দাবি করেছেন। এ সময় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তোলেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালের ১ মার্চ বিদ্যালয়টিতে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন কান্তি লাল আচার্য্য। বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন দীর্ঘদিন ধরে সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন তিনি।
২০০০ সালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ খালি হলে তৎকালীন বিদ্যালয়ে পরিচালনা কমিটি জেষ্ঠ্যতার ভিত্তিতে তাকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেন।
গত ৫ আগস্ট সরকারের পটপরিবর্তনের পর সাবেক শিক্ষার্থীসহ বিএনপি ও জামায়াত সমর্থকরা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্য্য ও সাবেক কমিটির বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের অর্থ আত্মসাৎসহ নানা অনিয়ম তুলে ধরে মিছিল-মিটিং করে।
এর পর গত সোমবার(১৪ এপ্রিল) বিদ্যালয়ের নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন জামায়াত সমর্থিত বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী মোহাম্মদ মহিউদ্দিন। এর পর বিএনপিসহ দলের সমর্থিত সাবেক শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে নেমে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের অপসারণের দাবি করেন।
বুধবার(১৬ এপ্রিল) সকালে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্য্য ও অ্যাডহক কমিটির সভাপতিসহ সদস্যরা অফিসে বসে বিদ্যালয়ের কর্মপরিকল্পনা করছিলেন। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন নেতা ও সাবেক শিক্ষার্থীসহ কয়েকশ লোকজন বিদ্যালয়ে আসে।
এ সময় জামায়াত সমর্থিত কর্মীদের সঙ্গে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের কর্মীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। উভয় দলের কর্মীদের মধ্যে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। হামলায় জামায়াতের কর্মী ফারুক আহত হন।
এর পর বুধবার(১৬ এপ্রিল) দুপুর ২টার সময় বাধ্যতামূলকভাবে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্য্যকে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর দিতে বাধ্য করেন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা।
বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, প্রধান শিক্ষককে জোর করে পদত্যাগে বাধ্য করে বিএনপির নেতা-কর্মীরা।
ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সভাপতি ও ইউপি চেয়ারম্যান নুরুল আনোয়ার প্রধান শিক্ষককে তার গাড়িতে তুলে বাড়ি পৌঁছে দেন। এ সময় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা তাকে নানাভাবে লাঞ্ছিত করেছে।
ভাটিয়ারী ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক খোরশেদ আলম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সাবেক কমিটিসহ প্রধান শিক্ষক নানা অনিয়ম ও দুর্নীতিতে জড়িত। তাদের শাস্তি ও পদত্যাগ দাবি করেছি। প্রধান শিক্ষক পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছেন বলেন জানান তিনি।
এ ছাড়া নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতি ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পক্ষ নেওয়ায় তারও পদত্যাগ দাবি করেন তারা।
বিদ্যালয়ের নবগঠিত অ্যাডহক কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক কান্তি লাল আশ্চার্য্যকে নিজের শিক্ষক দাবি করে বলেন, ‘এভাবে অসম্মান করে একজন শিক্ষককে বিদ্যালয় থেকে বের করে দেওয়া কারও জন্য কাম্য নয়।’
এ সময় মোহাম্মদ মহিউদ্দিন নিজেকে জামায়াত সমর্থিত দাবি করে বলেন, ‘বিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি হলে অবশ্যই নিয়মতান্ত্রিকভাবে বিচার হবে। কিন্তু বাধ্য করে পদত্যাগ পত্রে স্বাক্ষর নেওয়া কাম্য হতে পারে না।’
মঙ্গলবার(১৫ এপ্রিল) নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে সীতাকুণ্ড মডেল থানায় জিডি করেছেন বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে ভাটিয়ারী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘বিএনপির অঙ্গসংগঠনের নেতা-কর্মীরা বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের পদত্যাগ দাবিতে মিছিল-মিটিং করেছে শুনেছি। তবে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটেনি। প্রধান শিক্ষক পরিস্থিতি বিবেচনা করে পদত্যাগ করেছেন। নিজ গাড়ি করে তাকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছি।’
এ বিষয়ে পদত্যাগে বাধ্য হওয়া ওই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘আমাকে পদত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়েছে। ২০২৮ সালে মার্চ মাসে আমার চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। তারা না চাইলে, নবগঠিত অ্যাডহক কমিটি মিটিং করে আমাকে বাদ দিতে পারত। কিন্তু আমাকে অসম্মান করে, জোর করে পদত্যাগপত্রে স্বাক্ষর করিয়ে নেওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। যারা এ গর্হিত কাজ করেছে অধিকাংশ আমার ছাত্র ছিল। বলার কিছু নেই। বিচার সৃষ্টিকর্তার ওপর ছেড়ে দিলাম।’