পেকুয়া(কক্সবাজার)প্রতিনিধি
কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার মগনামা ইউপির রঙ্গিখালের পূর্বকূল এলাকার শিহাব উদ্দিন। বৃদ্ধ পিতা মুহাম্মদ নুরুচ্ছফার ৬ ছেলে মেয়ের মধ্যে শিহাব সবার ছোট হলেও গত কয়েকবছর ধরে ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে খুব ভালভাবেই চলছিলেন।
স্ত্রী গর্ভে তিন মেয়ে জন্ম হওয়ায় আরো সুঃখের আশায় বিগত ২বছর আগে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন নিয়ে এক দালালকে মানুষের কাছ থেকে ঋণ করে তিন লাখ টাকা দিলেও যাওয়া হয়নি বিদেশ। দালাল সব টাকা আত্মসাত করায় সেই টাকা এখন সুদে আসলে সাত লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছেন। গ্রামে ঋণ শোধ করতে না পারায় পালিয়ে যান চট্টগ্রামে। রিক্সা চালিয়ে চট্টগ্রামে অবস্থান করলেও গ্রামে স্ত্রী সন্তানের মুখ দেখা নাই বিগত দুই বছর ধরে। ঋণের বোঝা তাকে এভাবে গ্রাস করেছে শেষ পর্যন্ত একটি কিডনি বিক্রি করে দূর্দশা থেকে মুক্তি চান তিনি। তাই সিন্ধান্ত নেন একটি কিডনি বিক্রি করে তার টাকা দিয়ে ঋণ শোধ করে স্ত্রী সন্তানের পাশে দাঁড়াবেন। এমন সিদ্ধান্ত জানিয়ে তিনি সাংবাদিকদের সহযোগিতাও কামনা করেছেন।
জানা গেছে, বিগত ১০ বছর আগে জিয়াসমিন আক্তার নামে প্রতিবেশি এক মহিলার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। বর্তমানে শিহাব-জিয়াসমিন দম্পতির ঘরে তিন কন্যা সন্তান রয়েছে। সন্তান যখন বড় হতে থাকে তখন সংসারে অভাবও বাড়তে থাকে। ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার চালাতে পারলেও মেয়ের লেখাপড়ার খরচসহ অন্যান্য খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন। সংসারে ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে কি করবেন না করবেন ভাবতে ভাবতে সংকল্প করলেন বিদেশ যাবেন। আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়াতে ও সংসারে সুঃখ ফিরিয়ে আনতে তার চেয়ে ভাল আর কোন উপায় না দেখে ওমান যাওয়ার জন্য এক দালালের ধারস্থ হন। নিজের হাতে সঞ্চয় করা টাকা না থাকলেও ঋণ করে দালালের হাতে তুলে দেন ২ লাখ ৮০ হাজার হাজার। এছাড়াও ট্রেনিং বাবদ দেন ২০হাজার টাকা। ভাগ্যের নির্মম পরিহাস দালালের খপ্পরে পড়ে বিদেশ যাওয়াতো হলোও না টাকাও গেল জলে ভেসে। বিগত ২ বছর ধরে সেই ঋণের টাকা এখন সুদে আসলে সাত লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। এরই মাঝে ঋণের টাকা শোধ করতে না পেরে চলে গেলেন চট্টগ্রামে। রিক্সা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়ে নিজে এবং গ্রামের বাড়িতে ছেলেমেয়েদের খাবার জোগাড় করতে পারলেও ঋণ শোধ করার মত আয় করতে পারেন না। ঋণ শোধ করতে না পারার কারণে গত দুই বছর ধরে স্ত্রী সন্তানের কাছেও আসতে পারছেন না। যার কারণে সিদ্ধান্ত নেন কিডনি বিক্রি করে মানুষের ঋণ শোধ করবেন।
ঋণে জর্জরিত শিহাব চট্টগ্রাম থেকে মোঠোফোনে বলেন, বিগত তিন বছর আগে কুমিল্লার লাকসাম এলাকার সুমন নামের এক দালাল থেকে ওমানের একটি ভিসা ক্রয় করি। তারপর সরকারিভাবে ট্রেনিংও করান। ট্রেনিংসহ ভিসার তিন লাখ টাকা দালালকে বুঝিয়ে দেয়ার পর ভিসা না দিয়ে সমস্ত টাকা আত্মসাত করেছেন। এ তিন লাখ টাকা আমি বিভিন্ন জনের কাছ থেকে সুদে নিয়েছিলাম। বিদেশ যেতে না পারায় এ টাকা এখন ৭লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। টাকা শোধ করতে না পেরে পালিয়ে চট্টগ্রামে চলে আসি। রিক্সা চালিয়ে সংসারের ব্যয় নির্বাহ করলেও বিগত দুই বছর ধরে ভয়ে গ্রামে যেতে পারছিনা। স্ত্রী সন্তানের চেহেরাও দেখিনা দুই বছর। মেয়েরা বলে বাবা তুমি কবে আসবে। ঈদের সময় আসলে তিন মেয়ে বলে আমাদের জন্য কাপড় ও খাবার কেন দেন না। কাপড় পাঠানোতো দূরের কথা বাড়িতে গিয়ে তাদেরকে যে একটু আদর করবো সেই সাহসও পাচ্ছিনা। এক সময় আত্মহত্যার মত সিদ্ধান্তও নিয়েছিলাম। সন্তানদের কথা চিন্তা করে সেই সিদ্ধান্ত বাধ দিয়ে কিডনি বিক্রি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। কিডনি বিক্রি করে যা টাকা পাব তা দিয়ে মানুষের ঋণ শোধ করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে সুঃখে থাকতে চাই। আমি শুনেছি একটি কিডনি না থাকলেও মানুষ বাঁচে। সেই চিন্তা থেকেই একটি কিডনি বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। জানিনা আমার কিডনি কেউ কিনবে কিনা তারপরও আশায় আছি কেউ না কেউ সহযোগিতায় এগিয়ে আসবে।
তিনি আরো বলেন, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা মহোদয় ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসক মহোদয় বরাবর মোঠোফোনে এসএমএস করেছিলাম। কোন উত্তর পায়নি। তবে ইউএনওকে এসএমএস করলে তিনি ১০ কেজি চাল ও কিছু তরকারি আমার গ্রামে পাটিয়েছেন। আমার না হয় ভুল হয়েছে, আমার তিন সন্তানের কোন ভুল নাই। আমার তিন সন্তানকে নিয়ে আমরা কি একটু ভালভাবে বাঁচতে পারি না। এ ব্যবস্থা কি কোন হৃদয়বান ব্যক্তি করতে পারেনা। আমি সাংবাদিক ভাইদের মাধ্যমে সকল মানুষের সহযোগিতা কামনা করছি।