নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেল পাকিস্তান

বাবর আজমের সেঞ্চুরিতে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে জয় পেল পাকিস্তান। কিউইদের বিপক্ষে ৬ উইকেটের জয়ে সাত ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখল পাকিস্তান।

নিজেদের পরের দুই ম্যাচে আফগানিস্তান এবং বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় পেলে কাঙ্ক্ষিত সেমিফাইনালে খেলার সুযোগ পাবে ১৯৯২ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা।

বুধবার ইংল্যান্ডের বার্মিংহামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ২৩৭ রান করে নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে সর্বোচ্চ ৯৭ রান করেন জেমস নিশাম। ৬৪ রান করেন কলিন ডি গ্রান্ডহোম।

টার্গেট তাড়া করতে নেমে ৫ বল হাতে রেখে দলের জয় নিশ্চিত করেন বাবর আজম। দলের জয়ে সর্বোচ্চ ১০১ রান করেন বাবর আজম। এছাড়া ৬৮ রান করেন হারিস সোহেল।

সেমির স্বপ্ন জোড়ালো করতে হলে জয়ের বিকল্প নেই। এমন কঠিন সমীকরণের ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২৩৮ রানের সহজ টার্গেট তাড়া করতে নেমে ১০.২ ওভারে ৪৪ রানে দুই ওপেনারের উইকেট হারায় পাকিস্তান।

ট্রেন্ট বোল্টের বলে গাপটিলের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ওপেনার ফখর জামান। দলীয় ১৯ রানে ফখর জামান আউট হওয়ার পর বেশি দূর এগোতে পারেননি অন্য ওপেনার ইমাম-উল-হক। লুকি ফাগুর্নসনের বাউন্সারে গাপটিলের অসাধারণ ক্যাচে পরিণত হন ইমাম-উল।

এরপর তৃতীয় উইকেটে মোহাম্মদ হাফিজের সঙ্গে ৬৬ রানের জুটি গড়েন বাবর আজম। ৫০ বলে ৫টি চারের সাহায্যে ৩২ রান করে আউট হন সাবেক অধিনায়ক হাফিজ। তবে অনবদ্য ব্যাটিং চালিয়ে যান বাবর আজম।

চতুর্থ উইকেটে হারিস সোহেলকে সঙ্গে নিয়ে ১২৬ রানের অনবদ্য জুটি গড়ে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান বাবর। জয়ের জন্য শেষ ১০ বলে প্রয়োজন ছিল মাত্র ২ রান। খেলার এমন অবস্থায় রান আউট হয়ে ফেরেন হারিস সোহেল। তার আগে ৭৬ বলে পাঁচটি চার ও দুই ছক্কায় ৬৮ রান করেন তিনি।

ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে পাকিস্তানকে জয় উপহার দেন বাবার। দলের সেমিফাইনালের স্বপ্ন টিকিয়ে রাখতে অসাধারণ ব্যাটিং করে বিশ্বকাপে প্রথম সেঞ্চুরি করেন তিনি। তবে ওয়ানডে ক্রিকেট ক্যারিয়ারের ৭০তম ম্যাচে ১০ম সেঞ্চুরি করেন বাবর। তার শতরানের ইনিংসটি ১২৭ বলে ১১টি চারে সাজানো।

এর আগে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৮৩ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। এরপর ষষ্ঠ উইকেটে ১৩২ রানের অনবদ্য জুটি গড়েন জেমস নিশাম ও কলিন ডি গ্রান্ডহোম। তাদের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে ৬ উইকেটে ২৩৭ রান তুলতে সক্ষম হয় নিউজিল্যান্ড। দলের হয়ে ১১২ বলে পাঁচটি চার ও তিন ছক্কায় সর্বোচ্চ ৯৭ রান করেন নিশাম। ৭১ বলে ৬৪ রান করে আউট হন কলিন ডি গ্রান্ডহোম।

হারলেই বিশ্বকাপ থেকে বিদায় পাকিস্তানের। আর জিতলে সেমিফাইনাল নিশ্চিত হবে নিউজিল্যান্ডের।এমন সমীকরণের ম্যাচে বৃষ্টির বাগড়া। বৃষ্টির কারণে নির্ধারিত সময়ের ঘণ্টাখানেক পর খেলা শুরু হয়।

টস জিতে প্রথমে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ব্যাটিংয়ে নেমেই পাকিস্তানের তারকা পেসার মোহাম্মদ আমিরের গতির মুখে পড়ে বোল্ড হয়ে সাজঘরে ফেরেন মার্টিন গাপটিল।

প্রাথমিক ধকল সামলিয়ে ওঠার আগেই ফের বিপদে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। শাহীন শাহ আফ্রিদির বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন অন্য ওপেনার কলিন মুনরো। এরপর চার নম্বর পজিশনে ব্যাটিংয়ে নেমে বাড়তি দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে পারেননি রস টেইলর। শাহীন শাহ আফ্রিদির গতির বলে উইকেটকিপার সরফরাজ আহমেদের দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হয়ে সাজঘরে ফেরেন টেইলর।

ব্যাটিংয়ে ধুকতে থাকা নিউজিল্যান্ড শিবিরে চতুর্থ আঘাত হানেন শাহীন শাহ আফ্রিদি। কলিন মুনরো, রস টেইলরের পর টম লাথামকে সাজঘরে ফেরান শাহীন। তার গতির বলে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন মুনরো, টেইলর, লাথামরা।

দলীয় ১২.৩ ওভারে ৪৬ রানে মার্টিন গাপটিল, কলিন মুনরো, রস টেইলর ও টম লাথামের উইকেট হারিয়ে কোণঠাসা হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড।

এরপর পঞ্চম উইকেটে ৩৭ রানের জুটি গড়তেই বিপদে পড়ে যান অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। ইনিংসের শুরু থেকে পাকিস্তানের বোলারদের গতির প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করেন। শাদাব খানের গুগলিতে সরফরাজ আহমেদের হাতে ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন কিউই অধিনায়ক। তার আগে ৬৯ বলে ৪১ রান করেন উইলিয়ামসন। তার বিদায়ে ২৬.২ ওভারে ৮৩ রানে ৫ উইকেট হারায় নিউজিল্যান্ড।

এরপর কলিন ডি গ্রান্ডহোমের সঙ্গে দায়িত্বশীল ১৩২ রানের জুটি গড়েন জেমস নিশাম। তাদের অনবদ্য ব্যাটিংয়ে বিপর্যয় কাটিয়ে দারুণভাবে খেলায় ফেরে নিউজিল্যান্ড। ইনিংস শেষ হওয়ার ১৪ বল আগে রান আউট হয়ে ফেরেন গ্রান্ডহোম। তার আগে ৭১ বলে ছয়টি চার ও এক ছক্কায় ৬৪ রান করেন গ্রান্ডহোম। ইনিংসের শেষ বল পর্যন্ত খেলে ১১২ বলে ৯৭ রানে অপরাজিত থাকেন নিশাম। পাকিস্তানের হয়ে শাহীন শাহ আফ্রিদি ২৮ রানে নেন ৩ উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

নিউজিল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৩৭/৬ (নিশাম ৯৭*, গ্রান্ডহোম ৬৪, উইলিয়ামসন ৪১, মুনরো ১২; শাহীন ৩/২৮)।

পাকিস্তান: ৪৯.১ ওভারে ২৪১/৪ (বাবর আজম ১০১*, হারিস ৬৮,হাফিজ ৩২, ইমাম-উল ১৯, ফখর জামান ৯)।

ফল: পাকিস্তান ৬ উইকেটে জয়ী।