সবচেয়ে ‘সস্তা’ ডালের দাম আরও বাড়ল

ষাটোর্ধ্ব ফারুক হোসেন অ্যাংকর ডালের নিয়মিত ক্রেতা। রাজধানীর মগবাজার-বাংলামোটর রোডের ফুটপাতে ছোট্ট একটি খাবারের দোকান আছে তাঁর। সেখানে প্রতিদিনই অ্যাংকর ডাল রাঁধেন। রুটি-পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করেন। তাঁর পাঁচজনের সংসারেও নিয়মিত এই ডাল খাওয়া হয়।

ফারুক হোসেন গতকাল বুধবার দুপুরে বলেন, ‘গত বছরও এই ডালের কেজি ছিল ৪৫-৫০ টাকা। মাঝে কয়েক দফা বেড়েছিল। তবে সম্প্রতি একলাফে বেড়েছে ১০ টাকা। এখন পাড়া-মহল্লার দোকানে এই ডালের কেজি ৭৫ টাকা। তাই আমিও প্রতি বাটি রান্না করা ডালের দাম ৫ টাকা বাড়িয়েছি। আগে এক বাটি ডাল বিক্রি করতাম ৫ টাকা, এখন সেটা ১০ টাকা। অবশ্য এখন পরিমাণে একটু বেশি দিই।’

যে দুই ধরনের ডাল (মসুর ও অ্যাংকর) বেশি চলে, সেই দুইটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫-১০ টাকা। আমরা সাধারণত পাইকারি বাজার থেকে ৫ টাকা বেশি রাখি। পাইকারি দামের সঙ্গে এর থেকে বেশি সমন্বয়ের সুযোগ থাকে না
বাজারে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি যেন থামতে চাইছে না। প্রতিনিয়তই কোনো না কোনো ভোগ্যপণ্যের দাম বাড়ছে। নতুন করে এবার বাড়ল অ্যাংকরের দাম, যা নিম্ন আয়ের মানুষের ডাল নামে পরিচিত। বুটের ডালের মতো দেখতে এই ডাল আমদানি করে বাজারে ছাড়া হয়। নিম্ন আয়ের মানুষের হোটেল-রেস্তোরাঁয় সকালের নাশতায় এই ডালের তৈরি খাবার বেশ জনপ্রিয়। পেঁয়াজু ও বেগুনির উপকরণ বেসন তৈরি হয় এই ডাল থেকে। এটিই বাজারের সবচেয়ে সস্তা দামের ডাল।

সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাব বলছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি সরু, মাঝারি ও চিকন দানার মসুর ডালের সর্বোচ্চ দাম যথাক্রমে ১১০, ১৩০ ও ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি।
খুচরা বাজারে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডালের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ১০ টাকা। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে ও সরকারি সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজারদরের তালিকা বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। টিসিবি বলছে, রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি অ্যাংকর ডাল ৫৫-৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা মাসখানেক আগে ছিল ৫৫-৬০ টাকা। অর্থাৎ সরকারি হিসাবেই এক মাসে এই ডালের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। তবে খুচরা বাজারের দাম টিসিবির তালিকার চেয়ে ৫ টাকা বেশি, মানে ৭৫ টাকা কেজি। টিসিবির হিসাবে এক বছর আগের তুলনায় অ্যাংকর ডালের দাম এখন ৩৯ শতাংশ বেশি।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের আলী স্টোরের জসিম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘রমজান মাসেও অ্যাংকর ডাল ৬০ টাকা কেজি বিক্রি করেছি। এখন বিক্রি করছি ৭০ টাকা।’ তিনি জানান, গত ঈদের পর ছোলা, মুগ, খেসারি ও বুটের ডালের দাম আর বাড়েনি। তবে মসুর ডালের দাম বেশ বেড়েছে। পাইকারিতে সরু দানার মসুর ডাল এখন বিক্রি হচ্ছে ১৩৫-১৪০ টাকায়।

বাজারে অন্য ডালের দামও চড়া। সপ্তাহ দুয়েক আগে মসুর ডালের দামও কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছিল। সরকারি সংস্থা টিসিবির হিসাব বলছে, রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতি কেজি সরু, মাঝারি ও চিকন দানার মসুর ডালের সর্বোচ্চ দাম যথাক্রমে ১১০, ১৩০ ও ১৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মানভেদে মুগডাল বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৪০ টাকা কেজি। এ ছাড়া রাজধানীর মগবাজার ও কারওয়ান বাজারে পাইকারিতে প্রতি কেজি ছোলার ডাল ৮০-৮৫ ও খেসারির ডাল ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাড়া-মহল্লার দোকান ও খুচরা বাজারে সব ধরনের ডালের দামই কেজিতে ৫-১০ টাকা বেশি।

এ বিষয়ে মগবাজারের ভাই ভাই স্টোরের আনোয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যে দুই ধরনের ডাল (মসুর ও অ্যাংকর) বেশি চলে, সেই দুইটার দাম বেড়েছে কেজিতে ৫-১০ টাকা। আমরা সাধারণত পাইকারি বাজার থেকে ৫ টাকা বেশি রাখি। পাইকারি দামের সঙ্গে এর থেকে বেশি সমন্বয়ের সুযোগ থাকে না।’