টাকার বিনিময়ে ধর্ষণ মামলায় আপস!

টাকার বিনিময়ে ধর্ষণ মামলায় আপস করতে নির্যাতিতাকে বাধ্য করার অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদ করায় ওই গৃহবধূর বাবা-মাকে পিটিয়ে আহত করা হয়েছে। শনিবার রাতে বোয়ালখালী উপজেলা সদরের কলেজগেট এলাকায় একটি বাসায় এ ঘটনা ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। গৃহবধূর আহত প্রতিবন্ধী বাবা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। এদিকে ধর্ষণ মামলা কোনো অবস্থায় আপসযোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা।

আপস-মীমাংসার উদ্যোগের সত্যতা স্বীকার করে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইরুল ইসলাম বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছি মামলার বাদী, তাঁর খালা ও খালুসহ কয়েকজন মিলে

দুই-তিন লাখ টাকার বিনিময়ে ধর্ষণ মামলাটি তুলে নেওয়ার ব্যাপারে স্থানীয়ভাবে আপস করেছেন। পরে ওই টাকার

ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে তাঁদের মধ্যে বিবাদ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।’

গৃহবধূর খালা টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘স্থানীয় কয়েকজন জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতা, এক ব্যবসায়ীসহ আরো বেশ কয়েকজনের সহায়তায় দুই লাখ টাকা মামলার আসামি জলিল ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা আমার হাতে দেন। মামলা শেষ হলে আরো এক লাখ টাকা দেবেন বলে জানিয়ে একটি স্ট্যাম্পে মামলার বাদীর কাছ থেকে স্বাক্ষর নেন।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এস এম এহসান বাকী বলেন, ‘ধর্ষণ একটি রাষ্ট্রীয় অপরাধ। এমন অপরাধের বিচারের রাষ্ট্রই দায়িত্ব নিয়েছে। ফলে ধর্ষণ মামলা স্থানীয়ভাবে আপস মীমাংসার কোনো সুযোগ নেই।’

হামলায় আহত গৃহবধূর মা জানান, ধর্ষণ মামলা হওয়ার পর থেকে আসামিরা মামলা তুলে নিতে তাঁদের নানাভাবে ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছে। তাই তিনি তাঁর নির্যাতিত মেয়েকে কয়েকদিনের জন্য বোনের বাসায়  নিয়ে যান। কিন্তু তাঁর ছোট বোন তাঁর কাছে না রেখে পাশের এক মুরগি ব্যবসায়ী আবুল হাশেমের ঘরে রাখেন তাঁকে। শনিবার বিকেলে তিনি ও তাঁর স্বামী মেয়েকে আনতে গেলে হাশেমরা ধর্ষণ মামলাটি দুই লাখ টাকার বিনিময়ে আপস করেছেন বলে জানিয়ে একটি কাগজে তাঁদের সই করতে বলেন। তাঁরা রাজি না হলে হাশেম ও এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি ইউনুচের নেতৃত্বে ৮/১০ জন দুর্বৃত্ত তাঁদের পিটিয়ে আহত করে। এতে তাঁরা দুজনই গুরুতর আহত হন। পরে পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মো. ইউনুচ ও তাঁর স্ত্রী আনজু বেগম এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। তাঁরা নির্যাতিত মেয়েটিকে নানা প্রলোভনে ধর্ষণ মামলাটি আপসের নামে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নেন। আবুল হাশেম ঘটনার নেপথ্যে ছিলেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ধর্ষিতা গৃহবধূর আহত প্রতিবন্ধী বাবা বলেন, ‘ঘটনার পর থেকে পরিবার নিয়ে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আসামিরা প্রকাশ্যে ঘুুরলে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। মামলাটির আপস রফার বিষয়ে আমরা কিছুই জানি না।’

উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল সন্ধ্যায় নির্যাতিতা গৃহবধূর মা অভিযুক্ত আবদুল জলিলের বাড়িতে তার মেয়ের নির্যাতনের ঘটনাটি বোয়ালখালী থানায় জানালে পুলিশ গৃহবধূকে উদ্ধার করে। ১২ এপ্রিল পুলিশ ধর্ষণ মামলা করে। মামলা দায়েরের ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও পুলিশ এখনো কোনো আসামি গ্রেপ্তার করতে পারেনি।