করিম উল্লাহ ইমন
বাংলা নব বর্ষের শুরুর দিকে গরমের তীব্রতা বাড়তে শুরু করে।তবে গরমের এ তাপদাহ এপ্রিলের শেষের দিকে চরম পর্যায়ে বাড়তে থাকে।দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোতে অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর তাপমাত্রা সর্বোচ্চ ৪১ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস পড়েছে বলে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানান।বিশেষ করে চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া, খুলনা,রাজশাহী প্রভৃতি জেলাগুলোতে ৪১-৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা অব্যাহত রয়েছে।এ তাপদাহের কারণে হিট স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।পশ্চিমাঞ্চলের বেশকিছু জেলায় হিট স্ট্রোকে মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।
এছাড়াও দেশের দক্ষিণাঞ্চলে তাপদাহ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।তবে উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে থাকে।বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী অঞ্চল গুলোতে তাপমাত্রায় ঊষ্ণ জলীয়বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় এ গরম ঊপকূলবাসীর জন্য অসহনীয় হয়ে ওঠে।
৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার সূর্যের নিচে দাঁড়িয়ে সারাদিন কেউ কাজ করছে লবণের মাঠে,কেউ পানের বরজে,কেউ পাকা ধান তোলার কাজে,কেউ পথে-ঘাটে,মাঠে,হাট-বাজারে কিংবা সমুদ্রে।কতই কষ্ট পোহাতে হয় খেটে খাওয়া মানুষের।কায়িকশ্রমই তাদের সম্বল।লৌহবর্ণের সিদ্ধ শরীর থেকে টপ করে গড়িয়ে পড়া ঘর্মের ফোটা জানান দেয় তাদের দুঃসহ কষ্ট।
মহেশখালী উপজেলার ঐতিহ্যবাহী বাবু দিঘীর পাড়ে প্রতিদিনের ন্যায় গরমে অতিষ্ঠ মানুষের সমাগম হয়।এতে রিক্সাচালক,ভ্যানচালক,দিনমজুর,শিক্ষার্থী,পথচারীসহ সকল পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।অতিষ্ঠ জনজীবনে স্বস্তির ঠাঁই মিলে বাবু দিঘীর পাড়ে বটবৃক্ষের ছায়াতলে।কেউ আদুুল গায়ে বসে বাতাস খাচ্ছে, কেউ মোবাইলে ব্যতিব্যস্ত, কেউ দিঘীর জলে স্নান করছে।শিশুরা পানকৌড়ির মতো দিঘীরজলে ডুব দিয়ে সাঁতার কাটছে।এই যেন তৃষ্ণার কুলকাটে একবিন্দু স্বস্তি।
এছাড়াও দিঘীর চারিপাশে দেখা মিলে গবাদি পশু,কুকুর ও হাঁস সহ নানান পাখি।তীব্র দাবদাহে কোথাও স্বস্তির খোঁজ না পেয়ে বাবু দিঘীতে এসেই ভিড় করে এরা।সকাল ১১ টা থেকে দুপুর, ২ টা পর্যন্ত গরমের তীব্রতা কড়াভাবে পড়ে।এ সময়টাতেই বেশি লোকারন্য হয়ে ওঠে বাবুদিঘীর চারপাশ।
আরব আমিরাত প্রবাসী মিজানুর রহমান বলেন,আরব দেশ মরুভূমির দেশ। মরুভূমিতে গাছপালা,বৃষ্টির পরিমাণ নেই বললে চলে।সেখানকার তাপমাত্রা স্বাভাবিকভাবে বেশি থাকে।আমি দীর্ঘ ৮ বছর সেখানে কাটিয়েছি।কিন্তু বাংলাদেশের তাপমাত্রা তুলনামূলকভাবে অসহনীয় পর্যায়ের। এই গরম টা শরীরের ভেতর থেকে জ্বলে ওঠে।এছাড়া দেশের বিদ্যুৎ বিভ্রাট মারাত্মকভাবে অতিষ্ঠ করছে আমাকে।
একজন ভ্যানচালক বলেন,গরীবদের জন্য এ পৃথিবী একটা জেলখানা।ঘরে বাইরে কোথাও শান্তি নেই আমাদের। কাঠফাটা রোদে সারাদিন পরিশ্রমের করে এসেও ঘরে একটু শান্তির ঘুম দিতে পারি না বিদ্যুৎ বিভ্রাটের জন্য।আমরা তো আর বড়লোকদের মতো এসি কিংবা জেনারেটর চালায়তে পারি না।আমাদের দুঃখ কে বুঝবে?প্রতিনিয়ত ধনীরা প্রকৃতিকে শোষণ করে চলছে আর প্রকৃতির প্রতিশোধে আমরা কাঙালিরা বলি হচ্ছি।
অর্থাৎ ভ্যানচালক বুঝাতে চেয়েছেন,,,
মহেশখালীতে ঢালাও ভাবে প্যারাবন কাটা হচ্ছে।পাহাড় কেটে ফেলা হচ্ছে।জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করা হচ্ছে।এই নিবিড় বনভূমি নিধনের জন্য পরিবেশ তার ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছে।ফলে বৈশ্বিক উষ্ণায়ন বৃদ্ধির সাথে সাথে দেশের তাপমাত্রা তীব্রহারে বাড়ছে।
একটা সুন্দর ও সুষম পরিবেশের জন্য ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা জরুরী।অথচ দেশের বনভূমির পরিমাণ নেমে এসেছে ১৭ শতাংশে।ফলে বায়ুমন্ডলে বেড়ে যাওয়া কার্বন ডাই-অক্সাইডের পরিমাণ শোষণ করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে পরিবেশ।পরিবেশের এভাবে বিপর্যয় ঘটতে থাকলে জনজীবন অচিরেই হুমকির মুখে পড়বে।