দ্বিগুণ হবে ফ্ল্যাটের দাম, ঝুঁকিতে আবাসন খাত: রিহ্যাব

প্রস্তাবিত ডিটেইল এরিয়া প্ল্যান-ড্যাপ (২০১৬-৩৫) ও সংশ্লিষ্ট খসড়া ইমারত নির্মাণ বিধিমালা-২০২১ চূড়ান্ত অনুমোদনের পূর্বে তা নগর পরিকল্পনাবিদ, স্থপতি, বিশেষজ্ঞ পেশাজীবী ও স্টেক হোল্ডারদের বাস্তবসম্মত মতামতের ভিত্তিতে সংশোধনের দাবি জানিয়েছে আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)।

সংগঠনটির মতে, সংশোধন ছাড়া প্রস্তাবিত ড্যাপ ও নির্মাণ বিধিমালা অনুমোদন হলে ফ্ল্যাটের মূল্য ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে, যা সাধারণ মানুষের আবাসন সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করবে।

আবাসন খাত ও এর সঙ্গে জড়িত ২৬৯টি উপখাত ধ্বংসের মুখে পড়বে, ঝুঁকিতে পড়বে এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত ৪০ লাখ শ্রমিকের ওপর নির্ভরশীল প্রায় ২ কোটি মানুষের রুটি-রুজি।
রোববার রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে রিহ্যাব সভাপতি আলমগীর শামসুল আলামিন কাজল আরও বলেন, পূর্বে ঢাকা ইমারত নির্মাণ বিধিমালা ২০০৮ মোতাবেক ২০ ফুট রাস্তার পাশে ৫ কাঠা জমিতে ১৩ হাজার ৫০০ বর্গফুট আয়তনের গ্রাউন্ডফ্লোরসহ আটতলা ভবনের অনুমতি পাওয়া যেত। প্রস্তাবিত বিধিমালায় পাঁচতলা ফ্লোর বিশিষ্ট ৯ হাজার বর্গফুটের ভবন নির্মাণের অনুমতি পাওয়া যাবে। রাস্তা ২০ ফুটের কম হলে ভবনের উচ্চতা ৩/৪ তলার বেশি হবে না। বর্তমানের তুলনায় ভবনের আয়তন ৩৩-৫৩ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পাবে, যা একটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। ভবন ওপরের দিকে বাড়ানোর সুযোগ কমে যাওয়ায় ফ্ল্যাটের মূল্য কমপক্ষে ৫০ শতাংশ বেড়ে যাবে। ফ্ল্যাটের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ায় আবাসন সংকট আরও ঘনিভূত করবে। বাড়িভাড়া সীমাহীন বেড়ে যাবে। বাড়বে সাবলেটের সংখ্যা, যা নগরীতে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে আবাসনের জন্য জমির ব্যবহার বেড়ে যাবে। সিরামিক, স্যানিটারি, ইলেকট্রিক কেবল ইন্ডাস্ট্রি, রড, সিমেন্ট, পাথর, বালি, রংসহ প্রায় ২৬৯টি লিংকেজ ইন্ডাস্ট্রিজ গভীর সংকটে পড়বে। সেই সঙ্গে ঝুঁকিতে পড়বে এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৪০ লাখ শ্রমিকের পরিবার। সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটির সহসভাপতি কামাল মাহমুদ, নজরুল ইসলাম, লায়ন শরীফ আলী খান, সহসভাপতি (ফিন্যান্স) প্রকৌশলী মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, গত ৭ মার্চ স্টেক হোল্ডারদের সমন্বয়ে ড্যাপ সম্পর্কিত একটি সভায় ড্যাপ রিভিউ কমিটির আহ্বায়ক এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম রিহ্যাব ও বিএলডিএ-এর মতামত ও সুপারিশ গ্রহণের লক্ষ্যে একটি ওয়ার্কিং কমিটি গঠন করে দেন। অথচ আজ পর্যন্ত ওয়ার্কিং কমিটির কোনো সভা হয়নি। এমনকি স্টেকহোল্ডারদের কোনো সুপারিশও গ্রহণ করা হয়নি। অথচ, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ড্যাপ চূড়ান্ত অনুমোদন করা হবে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়েছে। সংশোধন ছাড়া নতুন এই বিধিমালা অনুমোদন হলে আবাসন খাত ও সংশ্লিষ্ট উপখাতগুলো মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। লাখ লাখ মানুষ কর্মহীন হবে। জমির মালিকদের মধ্যেও ব্যাপক অসন্তোষ দেখা দেবে। ভবনের আয়তন ও উচ্চতা কমে যাওয়ায় জমির মালিকরা পূর্বের পরিকল্পনা ও চাহিদামাফিক ফ্ল্যাট নির্মাণ করতে পারবেন না। অথচ, তার নির্মাণাধীন ভবনের পাশেই হয়তো ২০০৮ সালের বিধিমালা অনুযায়ী অধিক সংখ্যক ফ্ল্যাটসহ ৮/১০ তলা ভবন নির্মিত হয়েছে, যা সুষম বণ্টন ও সমঅধিকারের পরিপন্থী। আবার যারা একটা করে ফ্ল্যাট পেতে কয়েকজন মিলে জমি কিনে রেখেছিলেন, তারা সেই সংখ্যক ফ্ল্যাট পাবেন না, যা জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করবে। একই সঙ্গে খসড়া বিধিমালায় ঢাকার বাইরে অন্যান্য নগরীতে ভবনের আয়তন ৫০-৫৩ শতাংশ হ্রাস করা হয়েছে। এতে আবাসন চাহিদা মেটাতে ফসলি জমির ব্যবহার বাড়বে, যা খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকিতে ফেলবে।

তিনি বলেন, দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নির্মাণ খাতের অবদান প্রায় ১৫ শতাংশ। বর্তমান ও পরবর্তী প্রজন্মের জন্য পরিবেশবান্ধব পরিকল্পিত নগর ও নিরাপদ আবাসন ব্যবস্থা গড়ে তুলতে প্রায় তিন দশক ধরে সরকারের উন্নয়ন সহযোগী হিসেবে কাজ করছে রিহ্যাব। ড্যাপ ও নতুন নির্মাণ বিধিমালা সংশোধন না হলে আবাসন শিল্প মুখ থুবড়ে পড়বে।

রিহ্যাব সভাপতি বলেন, ফ্ল্যাটের দাম বাড়িয়ে ঢাকা শহরের জনসংখ্যা কমানোর চিন্তা অলিক স্বপ্ন। যতক্ষণ পর্যন্ত জীবিকা, চিকিৎসা, উন্নত শিক্ষা, বিচার-সালিশের মতো বিষয়গুলো ঢাকার বাইরে বিকেন্দ্রীকরণ করা না যাবে, ততক্ষণ পর্যন্ত ঢাকাকেন্দ্রিক মানুষের অভিবাসন অব্যাহত থাকবে। যে ঢাকায় চাকরি করে, বাড়িভাড়া বা ফ্ল্যাটের দাম বাড়লেও তাকে ঢাকাতেই থাকতে হবে। ফলে ভবনের আয়তন কমিয়ে ঢাকার জনসংখ্যা কমানোর এই প্রচেষ্টা শুধু জনঅসন্তোষ ও জনদুর্ভোগই বাড়াবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে জনবহুল দেশ। জমি অপ্রতুল। রাজউক এলাকায় মাত্র দশমিক ১৬ শতাংশ ভবন আটতলার বেশি উচ্চতার। ৯৩ শতাংশ ভবন একতলা থেকে তিনতলা উচ্চতাবিশিষ্ট। এখানে ভবনের উচ্চতা বাড়িয়ে নিরাপদ আবাসনের সুব্যবস্থা যত বাড়ানো যাবে, ততই এই খাতে জমির ব্যবহার কমবে ও আবাসন সমস্যা সমাধানে অধিক কার্যকর হবে।