চট্টগ্রামকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাধ্যমতো কাজ করবো

প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা চট্টগ্রামকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখছেন তা বাস্তবায়নে সাধ্যমতো কাজ করে যাবেন বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান।

তিনি বলেন, গত ৩ জানুয়ারি চট্টগ্রামে যোগদানের পর বড় চ্যালেঞ্জ ছিল চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন।

জেলা প্রশাসন কার্যালয়েও অনেক চ্যালেঞ্জ ছিল। দুর্নীতিমুক্ত মানবিক জেলা প্রশাসন গড়তে ৩ জনকে বরখাস্ত এবং ৭ জন সহকর্মীকে স্ট্যান্ড রিলিজ করেছি। জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা থেকে দুইজন দালালকে আইনের আওতায় আনা হয়েছে।

সোমবার (২২ মার্চ) সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন। চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাসের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন প্রেস ক্লাব সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী ফরিদ। যুগ্ম সম্পাদক নজরুল ইসলামের সঞ্চালনায় ধন্যবাদ বক্তব্য দেন প্রেস ক্লাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি সালাহউদ্দিন মো. রেজা। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন চট্টগ্রাম সাংবাদিক ইউনিয়নের (সিইউজে) সভাপতি মোহাম্মদ আলী ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ শামসুল ইসলাম।

মমিনুর রহমান বলেন, বিএনসিসি, রেড ক্রিসেন্ট, রোভার স্কাটউসহ সব স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ও এনজিওকে সংযুক্ত করে কোভিড সুরক্ষা সচেতনা প্রোগ্রাম করার চেষ্টা করছি। জনসচেতনা সৃষ্টির লক্ষ্যে ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য-শিক্ষা-চিকিৎসা-স্যানিটেশন নিয়ে কাজ করে এমন ১৩টি এনজিও সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। জনসচেতনতা বাড়ানো গেলে কোভিড আক্রান্তের হার কমবে। আসন্ন রমজানে জনদুর্ভোগ কমাতে এবং দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করা হয়েছে। ৩০ মার্চ থেকে বাজারে বাজারে গিয়ে দ্রব্যমূল্য মনিটরিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।

চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঐতিহাসিক স্থাপনা জেএম সেনের বাড়িটি ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার জাদুঘর’ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, এর আগে আমি যোগদানের প্রথম দিন সেটি ভাঙা হচ্ছিল। তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা হিসেবে অবৈধ দখলদার উচ্ছেদের মাধ্যমে উক্ত ভবনটি জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।

তিনি বলেন, বিভিন্ন জাতীয় দিবসে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য চট্টগ্রামে কোনো স্থাপনা নেই। সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধের আদলে চট্টগ্রামেও একটি স্মৃতিসৌধ তৈরি করতে স্থান নির্ধারণের কাজ শেষ পর্যায়ে। জেলা প্রশাসনের একটি প্রতিনিধিদল মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। আশা করছি, শিগগির এটি বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে। আগামীতে কর্ণফুলী নদীসহ সরকারি জায়গায় যেসব অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সেগুলো উদ্ধারে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জোর প্রচেষ্টা চালানো হবে।

মানবিক ও জনবান্ধব জেলা প্রশাসন গঠনের লক্ষ্যে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য আলাদা একটি চেয়ার এবং সিনিয়র সিটিজেনদের জন্য অন্য একটি চেয়ার সংরক্ষিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া  নগরবাসী যাতে ভোগান্তি না হয়, সে লক্ষ্যে সন্ধ্যার পরও নিয়মিত অফিসে অবস্থান করে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করছি। সপ্তাহের প্রতি বুধবার গণশুনানিতে সবার কথা শোনা হয়। মুজিব শতবর্ষে চট্টগ্রামে ভূমিহীন-গৃহহীন সাড়ে ১২শ’ পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। আরও ১৪শ’ ঘর নির্মাণাধীন রয়েছে। এতে করে অন্য গৃহহীনদের পাশাপাশি লালদিয়ারচরের প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকেও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা যাবে।

প্রেস ক্লাব সভাপতি আলী আব্বাস বলেন, চট্টগ্রামের উন্নয়ন মানে দেশের উন্নয়ন। তাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামকে বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে থাকেন। আপনার মতো একজন সৎ ও নিষ্ঠাবান ব্যক্তিকে চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব দিয়েছেন। আশা করছি, আপনি চট্টগ্রামে থাকাকালীন দৃষ্টান্তমূলক কাজ করে যাবেন। চট্টগ্রামের সাংবাদিক সমাজ আপনার ভালো কাজে সবসময় পাশে থাকবে।
সভা শেষে জেলা প্রশাসক সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাস্ক বিতরণ করা হয়।

এ সময় প্রেস ক্লাবের সহ-সভাপতি স ম ইব্রাহীম, অর্থ সম্পাদক রাশেদ মাহমুদ, সাংস্কৃতিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন হায়দার, গ্রন্থাগার সম্পাদক মিন্টু চৌধুরী, সমাজসেবা ও আপ্যায়ন সম্পাদক মো. আইয়ুব আলী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আলীউর রহমান, কার্যকরী সদস্য শহীদুল্লাহ শাহরিয়ার, মনজুর কাদের মনজুসহ প্রেস ক্লাব, সিইউজে, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন, টিভি জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের নেতা, চট্টগ্রামের সিনিয়র সাংবাদিকসহ বিপুল সংখ্যক সাংবাদিক উপস্থিত ছিলেন।