নির্যাতনের লোমহর্ষক বর্ণনা দিলেন সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা

বরখাস্তকৃত ওসি প্রদীপের রোষানলে পড়ে নির্যাতিত সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফার মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই। প্রদীপের দেয়া ৬টি মামলা চালাতে গিয়ে ভিটেবাড়ি বিক্রি করে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তার পরিবার। দীর্ঘ ১১ মাস পর কারামুক্ত হয়ে আপাতত কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন ফরিদুল। তবে চিকিৎসা শেষে কোথায় উঠবেন তা নিয়ে অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন কারামুক্ত এই সাংবাদিক।
জেল থেকে বেরিয়ে তিন সন্তান-স্ত্রী নিয়ে ফরিদুল মোস্তফার চোখে মুখে হতাশার ছাপ। কোথায় থাকবেন, কীভাবে সংসার চালাবেন তা নিয়ে চরম টেনশনের কথা জানালেন ফরিদুল মোস্তফা। গতকাল শুক্রবার সাংবাদিক ফরিদ মোস্তফা ফোনে বলেন, মহান আল্লাহ কাউকে না কাউকে দিয়ে উপকার করান। ভালো কাজ সকলকে দিয়ে হয়না।
আমার জন্য আপনারা যা করেছেন তা কালের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে। আমি কতটা অসুস্থ তা ভাষায় বোঝাতে পারবো না। শারীরিক মানসিক চতুর্মূখী অসুস্থ।
পুলিশ আমাকে দেয়াল ভাঙা হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করেছিল। পানির বদলে প্রস্রাব দিয়েছিল। চোখে মরিচের গুড়া দিয়েছিল। রাতে মেরিন ড্রাইভে গাড়িতে বেঁধে ঝুলানো হয়েছিল। তিনদিনের সে কী নির্যাতন তা বোঝাতে পারবোনা।
কারাগারে চিকিৎসা হয়নি। এখনো সারা শরীরে ব্যথা। এটা আমার দ্বিতীয় জীবন। আমি বেঁচে থাকলে কারো সঙ্গে আর বিরোধ নয়। তবে সৃষ্টিকর্তার সৃষ্টি সকল প্রাণীর কল্যাণে আমি কাজ করে যাবো।
ফরিদুল মোস্তফা বলেন, কারাগার থেকে বেরিয়ে কোথায় যাবো, কোনো স্থান খুঁজে পাইনি। তাই চিকিৎসার সুবাদে হাসপাতালে আছি। পুলিশ আমাকে যেভাবে দাগী বানিয়েছে তাতে মনে হয় কক্সবাজারে আমাকে কেউ ঘর ভাড়াও দেবে না। আমি এখন গৃহহীন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, কেউ গৃহহীন থাকবে না। আমিও অপেক্ষায় রইলাম। আমার ব্যাপারে যেন সুদৃষ্টি দেন। যাতে আমার মামলা এবং শারীরিক চিকিৎসায় সরকার হস্তক্ষেপ করেন।
উল্লেখ্য, টেকনাফ থানায় দায়ের করা ৬টি মামলায় সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফাকে বৃহস্পতিবার আদালত জামিন দিলে দীর্ঘ ১১ মাস ৫ দিন পর কারামুক্ত হন। মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য অস্ত্র, মাদক ও চাঁদাবাজি।
দুই দশক ধরে মোস্তফা আমাদের সময়, আমাদের অর্থনীতিসহ নিজের সম্পাদনায় প্রকাশিত কক্সবাজার বাণী সম্পাদনা করতেন।
সাংবাদিক ফরিদুল মোস্তফা টেকনাফের তৎকালীন ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে মাদক নির্মূলের আড়ালে বিচারবহির্ভূত হত্যা, মাদক ব্যবসা ও চাঁদাবাজির অভিযোগে বিভিন্ন সময় সংবাদ পরিবেশন করেছিলেন। যার কারণে ওসি প্রদীপ ফরিদুল মোস্তফাকে ঢাকা থেকে ধরে এনে মাদক ও চাঁদাবাজির ৬টি মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে শারীরিক নির্যাতন করে ।
দ্বিতীয় দফা রিমান্ড শেষে আদালতে ওসি প্রদীপসহ ৩ পুলিশ
দ্বিতীয় দফা চারদিনের রিমান্ড শেষে অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় প্রদীপ কুমার দাশ, ইন্সপেক্টর লিয়াকত আলী, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিতকে আদালতে তুলেছে র‌্যাব।
গতকাল শুক্রবার বেলা সোয়া ৩টার দিকে তাদের আদালতে তোলা হয়।