উপসচিব হওয়ার ৩ বছর পর সরকারি কর্মকর্তা একবারই সুদমুক্ত গাড়ি পাবেন

সরকারের প্রশাসনে উপসচিব পদমর্যাদায় আসীন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ি নয়। সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি পেতে সংশ্লিষ্টদের কমপক্ষে তিন বছর অপেক্ষা করতে হবে। প্রত্যেক কর্মকর্তাকে গাড়ি কিনতে হবে দুই হাজার সিসির মধ্যে। চাকরিজীবনে একজন কর্মকর্তা একটি মাত্র গাড়িই পাবেন। এ ছাড়া নিয়ম ভেঙে বাড়তি গাড়ি ব্যবহার, ব্যবস্থাপনার জন্য বাড়তি টাকা উত্তোলনসহ সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলতে হবে। অন্যথায় ‘অসদাচরণের’ দায় কাঁধে নিতে হবে। এমন বিধান রেখে ‘প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়িসেবা নগদায়ন নীতিমালা-২০১৮’ সংশোধন করছে সরকার।

জানা গেছে, এসংক্রান্ত একটি প্রস্তাব জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে আসে গত মার্চে। অর্থ মন্ত্রণালয়ে এসব বিষয় বিচার-বিশ্লেষণ করে দু-একটি বিষয়ে সংশোধনী এনে ফেরত পাঠানো হয়। সম্প্রতি সেটি আবার জনপ্রশাসন থেকে অর্থ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে সবুজসংকেত গেলে সংশোধিত নীতিমালার প্রজ্ঞাপন জারি করবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জনপ্রশাসনসচিব শেখ ইউসুফ হারুন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘উপসচিব হলে তিন বছর পর সংশ্লিষ্টরা গাড়ি পাবেন এবং গাড়ির যেন অপব্যবহার না হয়—এই দুটি বিষয়কে কেন্দ্র করেই গাড়ি নীতিমালা সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়েছে।’

প্রশাসনে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কর্মকর্তা সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার সুযোগ নিয়েছেন। বর্তমানে উপসচিব পদে পদোন্নতির সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা গাড়ি কিনতে সুদমুক্ত ৩০ লাখ টাকা পান। পদোন্নতির শুরুতেই যাঁরা গাড়ি নেন, তাঁদের সব মিলে ১২ লাখ টাকার মতো পরিশোধ করলেই গাড়িটি পুরোপুরি ব্যক্তিমালিকানায় পেয়ে যান। এর বাইরে চাকরি চলাকালে প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা করে গাড়ি ব্যবস্থাপনা খরচ পান উপসচিব ও তদূর্ধ্ব কর্মকর্তারা।

সহজে সরকারি গাড়ি পাওয়ার সুযোগ পাওয়ার পরও গাড়ির খরচ ও কর্মকর্তাদের বাড়তি গাড়ি ব্যবহারসহ অন্যান্য ব্যয়ে লাগাম টানতে গাড়িসেবায় এমন কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা গাড়ি ও জ্বালানি ব্যবহার নিয়ে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ার ঘটনা গণমাধ্যমে প্রকাশ হচ্ছে। গত বছরের ৩ নভেম্বর মন্ত্রণালয় থেকে এ ব্যাপারে কঠোর হুঁশিয়ারি দিয়ে অফিস আদেশ জারি হলেও অবস্থার উন্নতি হয়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যমান সরকারি গাড়ি ব্যবহার ও ক্রয়সংক্রান্ত নীতিমালায় অনেক বিষয়ে অস্পষ্টতা রয়েছে। এসব অস্পষ্টতা দূর করা এবং গাড়ি ব্যবহারে শৃঙ্খলা আনতেই নীতিমালা সংশোধন হচ্ছে। বিশেষ করে, যাঁরা সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত গাড়ি কেনার পরও সরকারি গাড়ি পাচ্ছেন, সঙ্গে ব্যক্তিগত গাড়ির জন্য ২৫ হাজার টাকার বদলে ৫০ হাজার টাকা করে তুলছেন তাঁদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

নীতিমালায় আরো যা থাকছে : প্রাধিকারপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তাদের সুদমুক্ত বিশেষ অগ্রিম এবং গাড়িসেবা নগদায়নের বিদ্যমান নীতিমালায় একজন যোগ্য কর্মকর্তা ৩০ লাখ টাকা সরকারি বরাদ্দের পাশাপাশি ব্যক্তিগত টাকা লাগিয়ে যেকোনো মূল্যের গাড়ি কিনতে পারেন। সংশোধিত প্রস্তাবে সরকারি টাকার বাইরে কেউ বাড়িতে টাকা যুক্ত করে গাড়ি কিনতে চাইলে বাড়তি টাকার উৎস ট্যাক্স ফাইলে থাকতে হবে। সরকার থেকে টাকা নেওয়ার ৯০ দিনের মধ্যে গাড়ি কিনতে হবে। অন্যথায় ৯১তম দিন থেকে ১৫ শতাংশ হারে জরিমানা গুনতে হবে। গাড়ি কেনার পর পদাধিকারবলে সরকারি দপ্তরের অন্য গাড়ি পেলে গাড়ি ব্যবস্থাপনা বাবদ ৫০ হাজার টাকার স্থলে ২৫ হাজার টাকা নিতে হবে। কেউ সরকারি টাকায় কেনা গাড়ি ভাড়া বা কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে ব্যবহার করলে ‘অসদাচরণ’-এর দায়ে অভিযুক্ত হবেন।

বিদ্যমান নীতিমালা অনুযায়ী, একটি গাড়ি আট বছর ব্যবহারের পর সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নতুন গাড়ির ঋণের জন্য আবেদন করার সুযোগ আছে। প্রস্তাবিত সংশোধনীতে এই সুযোগ বন্ধের প্রস্তাব রাখা হয়েছে। অর্থাৎ একজন কর্মকর্তাকে সরকারের তরফ থেকে একবারই গাড়ি দেওয়া হবে। অন্যদিকে কেউ পদাধিকারবলে ব্যক্তিগত গাড়ি পাওয়ার সঙ্গে দাপ্তরিক গাড়ি পেলে তাঁকে দাপ্তরিক কাজে দাপ্তরিক গাড়িই ব্যবহার করতে হবে।