চেয়ারম্যান ওয়াসিমকে হত্যা পরিকল্পনায় ছিলেন ছৈয়দ-ছোটন

মোঃ ফারুক,পেকুয়া
আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী বাবুল, সাবেক চেয়ারম্যান ইউনুছ চৌধুরী, সোলতান মাহমুদ চৌধুরী রিপন, জিয়াউর রহমান জিয়ার নির্দেশ ও পরিচালনায় বহু মামলার আসামী আবু ছৈয়দ, নেজাম উদ্দিন ছোটন, মোস্তাক, মকছুদ, আবুল হাসেম ভেন্ডিয়া, আয়াতুল্লাহ, জাহেদুল ইসলাম কালু, আমির হোসেন বুলু, আবু হানিফ, নুর মোহাম্মদ, রেজাউল করিম ও সায়েদ খান শান্তসহ প্রায় ৪০ জনের মত সন্ত্রাসীদের নিয়ে গঠিত হয় ‘তরিকত ফেডারেশন’। ওই সংগঠনের সন্ত্রাসীরা মগনামা ইউপির চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমসহ তার দুই সহযোগিকে হত্যার পরিকল্পনায় কিলিং মিশন সফল করতে ফুলতলা, আজগর আলী সিকদার পাড়ার চেয়ারম্যান বাড়ী ও মসজিদে রেকি করে আসছিল দীর্ঘদিন ধরে ।
গত রমজান মাসে মসজিদে তারাবীর নামাজ পড়ার সময় চেয়ারম্যানকে হত্যার মিশন সফল করতে চেষ্টা করেছিল সন্ত্রাসীরা। বহু চেষ্টার পরও কৌশলগত সমস্যার কারণে এককভাবে চেয়ারম্যানকে হত্যার মিশন সফল করতে না পেরে মগনামা ইউনিয়নের আফজালিয়া পাড়ার রুস্তম আলীর ছেলে আলী আকবর, মৃত নুরুন্নবীর ছেলে জয়নাল আবেদীন ও চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমকে এক সাথে হত্যার পরিকল্পনার মাধ্যমে কঠিনতম সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।
কিন্তু তাদের সেই পরিকল্পনায় চেয়ারম্যান হত্যাকান্ডের মিশন থেকে বেঁচে গেলেও চেয়ারম্যানের বিশ্বস্ত সহচর হিসাবে সন্ত্রাসীদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হয় জয়নাল আবদীন ও গুরুতর আহত হয় আলী আকবর।
বিভিন্ন তথ্যসূত্র ও অনুসন্ধানে এমন চাঞ্চল্যকর তথ্য ওঠে এসেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, হত্যার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য তরিকত ফেডারেশনের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা কয়েক দফায় কয়েকটি চিহ্নিত স্থানে শ্বাসরুদ্ধকর বৈঠক হয় অবশেষে সিদ্ধান্ত হয় প্রথম দফায় চেয়ারম্যান ওয়াসিম ও তার সবচেয়ে কাছের মানুষ হিসাবে পরিচিত জয়নাল ও আলী আকবরকে হত্যার কিলিং মিশন সফল করবে।
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২ মে সন্ধ্যা সাড়ে ৬ টার দিকে মগনামা বহদ্দার পাড়া  আনোয়ারুল আজিম চৌধুরী বাবুলের বাড়ী সংলগ্ন কবরস্থানে সন্ত্রাসীরা বৈঠকের আয়োজন করেন।
সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, বাবুল, ইউনুছ, জিয়া, মোস্তাক, মকছুদ, আবু ছৈয়দ, ছোটন, আবুল হাসেম ভেন্ডিয়া, জাহিদুল ইসলাম কালু, আমির হোসেন বুলু, নুর মোহাম্মদ,রেজাউল করিম, আবু হানিফ, রিপন ও মাহমুদুল করিমসহ ৪০ জনের মত সন্ত্রাসী।  সেই বৈঠকে দুইজনকে দেশীয় অস্ত্র হাতে দিয়ে দায়িত্ব দেয়া হয় জয়নাল আর আলী আকবর কখন ফুলতলায় আসে তার খবর জানাতে। অপর দুইজনকে পাঠানো হয় চেয়ারম্যান কখন বাড়ি থেকে বের হয় তা জানাতে।
বৈঠক শেষে সন্ত্রাসীদের একটি গ্রুপ চেয়ারম্যানের বাড়ির আশেপাশে ও অপর একটি গ্রুপ ফুলতলার কবরস্থানে অবস্থান করে হত্যার পরিকল্পনায়।
এক পর্যায়ে জয়নাল আর আলী আকবর রাত  ৮টার দিকে জয়নাল আর আলী আকবর ফুলতলাস্থ আশুর চায়ের দোকানের সামনে এসে চেয়ার নিয়ে বসে নাস্তা করছিলেন। তাদেরকে নজরে রাখা দুইজন ফুলতলা কবরস্থানে অবস্থান করা সন্ত্রাসীদের খবর দেয় জয়নাল ও আলী আকবর উল্লেখিত স্থানে এসেছে।
তখন রাত সাড়ে ৮টা। আশুর দোকানের সামনে সন্ত্রাসীরা এসে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে স্থানীয়রা পালিয়ে যায়। জয়নাল ও আলী আকবরের হাতে পায়ে গুলি করলে গুলিবিদ্ধ হয়ে আশুর দোকানের ভিতর চলে যায় জয়নাল। ওখানে বেশ কয়েকটি কোপ দিলে জয়নাল মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। দোকানের বাহির থেকে তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেন আলী আকবর। ওখানে তাকেও কুপিয়ে আহত করলে তিনি প্রাণভয়ে পালিয়ে যান।
ওইদিকে চেয়ারম্যানের বাড়ির আশেপাশে যাওয়া সন্ত্রাসীরা চেয়ারম্যানের নাগাল না পেয়ে দ্রুত ফুলতলায় এসে জয়নাল হত্যায় অংশ নেন। সন্ত্রাসীরা চলে যাওয়ার সময় রাস্তায় দাঁড়ানো রিফাকে জয়নালের স্ত্রী ভেবে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা চালায়।
এরপর কিছু সন্ত্রাসী বাবুলের বাড়ি হয়ে মগনামা-রাজাখালীর ব্রীজ পার হয়ে রাজাখালীর দিকে চলে যায়, অপর কিছু সন্ত্রাসী মহুরী পাড়া-কাজি মার্কেট সড়ক হয়ে উজানটিয়ায় পালিয়ে যায়। ওই রাতেই উজানটিয়া থেকে বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে স্থানীয়রা আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন।
পেকুয়া থানা পুলিশ গ্রেফতারকৃতদের বিজ্ঞ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করেছে। ইতোমধ্যে বিজ্ঞ আদালতে গ্রেফতারকৃত এক আসামী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানা গেছে। তবে অদ্যাবধি পেকুয়া থানা পুলিশ ঘটনার মূল আসামীদের গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়নি। যার কারণে ভুক্তভোগী পরিবার অসহায় অবস্থায় দিনযাপন করছে।
আসামী আটক না করায় ও হুমকির বিষয়ে  নিহত জয়নালের মা নুরুননিসা বেগম বলেন, আমার নিরহ সন্তান জয়নালকে সন্ত্রাসীরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে। আমার ছেলে হত্যাকান্ডের শিকার হওয়ার পর পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ আসামী গ্রেফতার ও মামলার অগ্রগতি নিয়ে আমাকে আশ্বস্ত করেছিল। কিন্তু ঘটনার ৩৬দিন শেষ হলেও এজহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা মূল আসামীদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। স্থানীয়রা যেই আসামীদের আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছিল তারা ছাড়া আর কোন আসামী আটক না হওয়ায় আমি মনে করছি পুলিশের চাইতে খুনিরা শক্তিশালী। ইতোমধ্যে এক আসামীর স্থান শনাক্ত করে থানা পুলিশকে অবগত করলেও সার্কেল সাহেব ও ওসি সাহেব আসামী ধরতে অনিহা প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও ঘটনার পরপর জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দরা পেকুয়ায় এসে হত্যার ঘটনায় কথা বলেছেন। জেলা আ’লীগের নেতাদের প্রতি অনুরোধ মামলায় নিরহ আসামী হলে আপনাদের তদবীর থাকুক তাতে আমার কোন সমস্যা নাই, কিন্তু আপনাদের পুঁজি করে যাতে খুনিরা পার পেয়ে না যায়। রাজনৈতিক বিবেচনা না করে প্রকৃত খুনিরা যাতে শাস্তি পায় জেলা আ’লীগের নেতাদের কাছ থেকে সেই আশা করছি। আর কেউ সহযোগিতা না করুক অবশ্যই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার ছেলের সঠিক বিচার পেতে অবশ্যই সহযোগিতা করবে।
অনুসন্ধানে চেয়ারম্যান শরাফত উল্লাহ চৌধুরী ওয়াসিমকে হত্যার পরিকল্পনার কথা ওঠেছে। এবিষয়ে তিনি বলেন, রমজান মাসে জয়নালকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় তার ভাই বাদী হয়ে যাদেরকে দেখেছে এবং যাদেরকে সন্দেহ করেছে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত পুলিশ নিজ উদ্যোগে কোন আসামীকে গ্রেফতার করেনি। নিজেও চেয়ারম্যান হিসাবে জানি আমার প্রতিপক্ষ রয়েছে। তাই বলে আমাকে হত্যার মত পরিকল্পনা নিবে এ ঘটনায় আমি হতবাক। সামনে নির্বাচন খুব আতংকের মধ্যে আছি। আগামী যেকোন সময় তারা আমাকে আবারো হত্যার মত পরিকল্পনা করতে পারে বলে শংকিত আছি। তার বড় কারণ শাহ রশিদিয়া মাদ্রাসার পেছনে যেই প্রজেক্টটি আছে সেখানে প্রতিদিন গুলির আওয়াজ শুনা যায়। প্রশাসন প্রকাশ্যে অথবা গোপনে তদন্ত করলে তার রহস্য বের হবে। আশা করবো পুলিশ গুরুত্ব দিয়ে মগনামার সকল সন্ত্রাসীদের ধরে আইনের আওতায় নিয়ে আসবে।