‘শিশু আছিয়ার ধর্ষণ-হত্যা এদেশের মানুষের মনে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে’

মাগুরায় শিশু আছিয়া সহ সারাদেশে নারী ও শিশু ধর্ষণ-হত্যা, নির্যাতনের বিচারের দাবিতে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম চট্টগ্রাম নগর শাখার উদ্যোগে নগরের নিউমার্কেট মোড়ে শনিবার(১৫ মার্চ) বিকাল ৪টায় বিক্ষোভ সমাবেশ ও মিছিল অনুষ্ঠিত হয়।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার স্কুল বিষয়ক সম্পাদক উম্মে হাবিবার সঞ্চালনায় সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম নগর শাখার সভাপতি মিরাজ উদ্দিন, বক্তব্য রাখেন বাসদ চট্টগ্রাম জেলা শাখার ইনচার্জ আল কাদেরী জয়, সদস্য নুরুল হুদা নিপু, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য অদিতি, চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আহমদ জসীম, সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম চট্টগ্রাম জেলা সদস্য সুপ্রীতি বড়ুয়া, শ্রমিক ফ্রন্ট চট্টগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক হেলাল উদ্দিন কবির সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, সম্প্রতি মাগুরায় ৮ বছরের শিশু আছিয়ার ধর্ষণ ও হত্যা এদেশের মানুষের মনে এক গভীর ক্ষত সৃষ্টি করেছে। দীর্ঘদিনের বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারনে দেশে নারী নির্যাতন ও হত্যা দিন দিন বেড়ে চলেছে! গত হাসিনা ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে তনু, নুসরাত, মুনিয়া সহ যত ধর্ষণ ও হত্যাকান্ড সংঘটিত হয়েছে তার একটিরও বিচার হয়নি। ২৪এর গণঅভ্যুত্থানে নারীদের বীরোচিত ভূমিকা ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আন্দোলন যখন অনেকটাই স্তিমিত সেই সময় নারীরা সমস্ত অচলায়তন ভেঙে রাজপথে বের হয়ে আসে। কিন্তু গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই নারীকে আর সেভাবে মূল্যায়ন করা হলো না। নারীর বিকাশের ক্ষেত্রে যে সকল বাধা সমাজে আছে সেগুলো দূর করার উদ্যোগ নেয়া হলো না। বরং নানারকম নিপীড়ন নির্যাতনের মাধ্যমে ক্রমেই অমর্যাদাকর পরিস্থিতির দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অভ্যুত্থানের পর পরই কক্সবাজারের সমুদ্র সৈকতে একজন নারীকে পুলিশের উপস্থিতিতে তার পোশাক ও স্বাধীন চলাফেরাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ‘এক দল যুবক’ হেনস্থা করে। নানামুখী অপতৎপরতায় একের পর এক নারীদের মর্যাদাবোধে আঘাত হানা হচ্ছে। কখনো ধর্মীয় মৌলবাদীদের দ্বারা কখনওবা ‘তৌহিদী জনতার’ উচ্ছৃঙ্খলতা দ্বারা। এসব ঘটনার সাথে জড়িত কাউকেই এযাবৎ কোন শান্তির আওতায় আনা হয়নি। তাহলে কি নিম্নবতার মাধ্যমে রাষ্ট্র ও সরকার এ সকল অপতৎপরতাকে প্রশ্রয় দিচ্ছে? নারীকে নির্যাতন, নিপীড়ন, হেনস্থা, ধর্ষণ এমনকি হত্যা করেও পার পেয়ে যাওয়া যায়। এটাতো আমরা ফ্যাসিবাদী হাসিনা সরকারের আমলে দেখেছি। গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে গঠিত এই অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েও ঐ সবের পুনরাবৃত্তি খুবই দুঃখজনক। জয়পুরহাট, দিনাজপুর, রংপুরসহ বিভিন্ন স্থানে নারীদের ফুটবল খেলায় বাধা, নারী রিপোর্টারকে ধর্ম উপদেষ্টার মিটিং এ প্রবেশে বাধা দেওয়া, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে বেগম রোকেয়া ও কুমিল্লায় নবাব ফয়জুন্নেসার ছবিতে কালি লেপন, নারীদের যত্র-তত্র হেনস্থা করা, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনে আলটিমেটাম দেওয়া, বই মেলায় স্যানিটারি ন্যাপকিনকে গোপন পণ্য আখ্যায়িত করে সেই স্টল বন্ধ করাসহ নানা রকম নারী বিদ্বেষী কর্মকান্ড চলছে। অন্তর্বর্তী সরকার এসব নারী বিদ্বেষী কর্মকান্ড বন্ধে এবং দায়ীদের গ্রেফতার ও বিচারের বিষয়ে ভীষণভাবে উদাসীন।
বক্তারা অবিলম্বে মাগুরার আছিয়া সহ সারাদেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-হত্যার দ্রুত বিচার করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে।

সমাবেশ শেষে একটি সংক্ষিপ্ত মিছিল নিউমার্কেট মোড় থেকে নতুন রেলস্টেশন চত্বরে গিয়ে শেষ হয়।