প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগে জাঁকজমকপূর্ণ ‘পিঠা উৎসব’

তারুণ্যের উচ্ছ্বাস আর বাঙালির আবহমান ঐতিহ্যের মেলবন্ধনে প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের ৪১তম ব্যাচের আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো জাঁকজমকপূর্ণ ‘পিঠা উৎসব-২০২৫’।

৬ ডিসেম্বর (শনিবার) সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের জিইসি ক্যাম্পাসে এই উৎসবের আয়োজন করা হয়। কুয়াশাচ্ছন্ন সকালে ভাপা-পুলি আর চিতইয়ের মায়াবী ঘ্রাণে মুখর হয়ে ওঠে পুরো ক্যাম্পাস।

কেক কেটে উৎসবের শুভ উদ্বোধন করেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির মাননীয় উপাচার্য প্রফেসর এস. এম. নছরুল কদির। প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি বলেন, পিঠা কেবল কোনো খাদ্যদ্রব্য নয়, এটি বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস ও কৃষ্টির অবিচ্ছেদ্য অংশ। যান্ত্রিক নগরজীবনে আমরা যখন আমাদের শিকড় ভুলতে বসেছি, তখন ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থীদের এই আয়োজন আমাদের গ্রামীণ সংস্কৃতির কথা মনে করিয়ে দেয়। বিদেশি সংস্কৃতির আগ্রাসনের ভিড়ে নিজেদের স্বকীয়তা ধরে রাখতে এবং নতুন প্রজন্মের কাছে আমাদের ঐতিহ্যকে তুলে ধরতে এ ধরনের আয়োজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন ইংরেজি বিভাগের চেয়ারম্যান ও সহযোগী অধ্যাপক সৈয়দ জসীম উদ্দীন। তিনি বলেন, পিঠা উৎসব বাঙালির আপ্যায়ন ও অতিথিপরায়ণতার অনন্য প্রতীক। এটি কেবল ক্ষুধা নিবারণ করে না, বরং মানুষে মানুষে সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির বন্ধন দৃঢ় করে। শীতের সকালে এই পিঠার ধোঁয়া ওঠা আসর আমাদের মনে করিয়ে দেয় মায়ের হাতের স্নেহের স্পর্শ। তিনি এমন সুন্দর ও সুশৃঙ্খল অনুষ্ঠান আয়োজনে সার্বিক সহযোগিতা প্রদানের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মাননীয় উপাচার্য এবং প্রশাসনের প্রতি বিশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য রাখেন ৪১তম ব্যাচের অ্যাডভাইজার ও সহযোগী অধ্যাপক কোহিনুর আক্তার। তিনি শিক্ষার্থীদের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, পিঠা আমাদের ঐতিহ্যের অহংকার। পড়াশোনার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা যেভাবে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়।

উৎসবে শিক্ষার্থীদের সৃজনশীলতায় মোট ৯টি স্টল স্থান পায়। এর মধ্যে ‘না খাইলে আফসোস’, ‘দ্যা হেরিটেজ’, ‘ট্রিলিঙ্গুয়াল পিঠাঘর’ এবং ‘নেমন্তন্ন’-এর মতো চমকপ্রদ নামের স্টলগুলো দর্শনার্থীদের বিশেষ নজর কাড়ে। স্টলগুলোতে শোভা পায় ভাপা, চিতই, পাটিসাপ্টা, দুধ চিতই, ক্ষীর পাটিসাপ্টা, নকশী পিঠা, নারিকেল পুলি, লবঙ্গ লতিকা ও বিনি চালের পুলির মতো ঐতিহ্যবাহী সব পিঠা। পাশাপাশি ছিল চিকেন পুলি, কিমা বিফ পুলি ও মোমোর মতো আধুনিক খাবারের আয়োজনও।

পুরো অনুষ্ঠানটি অত্যন্ত সাবলীলভাবে সঞ্চালনা করেন বিভাগের শিক্ষার্থী রাজিয়া সুলতানা এবং দিনেশ ত্রিপুরা। দিনব্যাপী এই আয়োজনে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে নাচ, গান ও আবৃত্তিসহ এক মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানের শেষ ভাগে ক্যাম্পাসের পরিবেশ মাতাতে মঞ্চে আসে জনপ্রিয় ব্যান্ড ‘ডিসেপটিকনস’ এবং ‘ইকোভার্স’। তাদের গানে গানে মুখরিত হয়ে ওঠে উৎসব প্রাঙ্গণ।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রিমিয়ার ইউনিভার্সিটির প্রক্টর মোহাম্মদ সোলাইমান চৌধুরী, ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক শাহনাজ পারভীন সিঁথি, গাজী শাহাদাত হোসেন, রোমানা চৌধুরী, রফিকুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক সারাহ ঈশিতা, সুমিত চৌধুরী ও প্রভাষক মু. মেহেদী রহমান। শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং দর্শনার্থীদের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে পিঠা উৎসবটি এক আনন্দঘন মিলনমেলায় পরিণত হয়।