১৪ ফেব্রুয়ারি এলেই যে দিবসটির কথা মনে পড়ে সেটি হচ্ছে ভালোবাসা দিবস। ১৪ ফেব্রয়ারি(শুক্রবার) বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। তরুণ-তরুণীদের কাছে দিবসটি উদযাপনের কমতি নেই। এছাড়াও আজ পহেলা ফাল্গুন। ঋতুরাজ বসন্তকে রঙে রঙে রাঙানোর দিন আজ। এই দুইট দিবস ছাপিয়ে আরও একটি উল্লেখ করার মতো দিনও আজ। যা অনেকেরই হয়তো মনে নেই। আজ সুন্দরবন দিবস।
সমুদ্র উপকূলবর্তী নোনা পরিবেশের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন হিসেবে সুন্দরবন বিশ্বের সর্ববৃহৎ অখণ্ড বনভূমি। যা ৬ ডিসেম্বর ১৯৯৭ সালে ইউনেস্কো বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে।
বাংলাদেশে যতগুলো ঘূর্ণিঝড় হয়েছে তার বেশিরভাগই রুখে দিতে বুক পেতে দিয়েছিল সুন্দরবন। এই বনের কারণে উপকূলবর্তী অনেক এলাকা ঝড়-ঝঞ্ঝায় সুরক্ষিত ছিল।
সুন্দরবনের জীবন ও প্রকৃতি
জীববৈচিত্রে সমৃদ্ধ সুন্দরবনের ১৮৭৪ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে নদীনালা ও বিল মিলিয়ে জলাকীর্ণ অঞ্চল। রয়েল বেঙ্গল টাইগারসহ বিচিত্র নানান ধরনের পাখি, চিত্রা হরিণ, কুমির ও সাপসহ অসংখ্য প্রজাতির প্রাণীর আবাসস্থল হিসেবে সুন্দরবন পরিচিত।
এখানে রয়েছে প্রায় ৩৫০ প্রজাতির উদ্ভিদ, ১২০ প্রজাতির মাছ, ২৭০ প্রজাতির পাখি, ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ সরীসৃপ এবং ৮ টি উভচর প্রাণী।
সুন্দরী বৃক্ষের নামানুসারে এই বনের নাম সুন্দরবন রাখা হয়। সুন্দরবনের ভেতরে যেতে হলে নৌপথই একমাত্র উপায়।
সুন্দরবন দিবস যেভাবে এলো
২০০১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের আওতায় খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ও দেশের আরও ৭০টি পরিবেশবাদী সংগঠনের অংশগ্রহণে প্রথম জাতীয় সুন্দরবন সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেই সম্মেলনে ১৪ ফেব্রুয়ারিকে ‘সুন্দরবন দিবস’ ঘোষণা করা হয়। এর পর থেকে প্রতিবছর দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। সে হিসেবে এবার পালিত হচ্ছে ২৫তম সুন্দরবন দিবস।
সুন্দরবনকে ঘিরে পর্যটন
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন ঘিরে বাংলাদেশে পর্যটনশিল্পের বিকাশে রয়েছে অপার সম্ভাবনা। এই বনের সৌন্দর্য দেখতে দেশ-বিদেশের নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসেন ভ্রমণপিপাসুরা।
প্রতি বছর লাখো পর্যটক বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন দেখতে যান। বিশেষ করে শীত মৌসুমে এ সংখ্যা অনেক বেড়ে যায়। জীববৈচিত্র্যের প্রাণ-প্রাচুর্যের কারণে সুন্দরবন পৃথিবীর অন্যান্য পর্যটনকেন্দ্র থেকে স্বতন্ত্র।
সুন্দরবনে লাখো মানুষের জীবিকা
সুন্দরবন উপকূলীয় অঞ্চলের মানুষের জন্য এক বিরাট আয়ের উৎস। এ বনের আশপাশ ঘিরে ৪৫০টির মতো নদী, খাল যেখান থেকে বিভিন্ন প্রজাতির চিংড়ি, সাদা মাছ, কাঁকড়া আহরণ করে হাজার হাজার জেলে পরিবার জীবন-জীবিকা চালাচ্ছে।
এছাড়াও বনের হাজার হাজার মন শুকনা কাঠ, পাতা সংগ্রহ করে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করছে উপকূলীয় অঞ্চলের জনগণ। সুন্দরবনের গোল পাতা আরও একটি আয়ের উৎস। সুন্দরবন একদিকে যেমন ব্যক্তিকেন্দ্রিক আয়ের উৎস অন্যদিকে সরকারি রাজস্ব আয়েরও উৎস।