শুভ জন্মদিন ক্ষুদিরাম বসু

ক্ষুদিরাম বসু ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামী ও বিপ্লবী। ক্ষুদিরাম বসুর জন্ম ১৮৮৯ সালের ৩ ডিসেম্বর মেদেনীপুর জেলার হাবিবপুর গ্রামে। বাবা ত্রৈলক্যনাথ বসু এবং মা লক্ষ্মীপ্রিয়া দেবী। তিনকন্যা সন্তান জন্মের পর ক্ষুদিরাম ছিলেন চতুর্থ সন্তান। বাবা-মায়ের আগের দুই সন্তান জন্মের পরই মারা যায়। এ কারণে জন্মের পরই তিন মুঠ খুদের বিনিময়ে তাকে তার দিদির কাছে দেন বাবা-মা। এর থেকে তার নাম হয় ক্ষুদিরাম।

একবার বিদায় দে মা ঘুরে আসি/হাসি হাসি পরব ফাঁসি দেখবে ভারতবাসী। /কলের বোমা তৈরি করে/দাঁড়িয়ে ছিলেম রাস্তার ধারে মাগো,/ বড়লাটকে মারতে গিয়ে/ মারলাম আরেক ইংল্যান্ডবাসী। /হাতে যদি থাকত ছোরা/ তোর ক্ষুদি কি পড়ত ধরা মাগো/ রক্ত-মাংসে এক করিতাম/ দেখত জগতবাসী।

ক্ষুদিরাম বসুর ফাঁসি উপলক্ষ ঘিরে রচিত গানটি শুনলে মনে হয় ক্ষুদিরাম একাধারে নিজের মা এবং দেশজননীর কাছে বিদায় চাইছেন। গানটি রচনা ও সুরকার কে—এ নিয়ে মতান্তর রয়েছে। কেউ বলেন পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়ার লোককবি পীতাম্বর দাস, কেউ বলেন বরিশালের চারণ কবি মুকুন্দ দাস।

১৯৬৬ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘সুভাষচন্দ্র’ চলচ্চিত্রে এ গানটি প্রয়োগ করা হয়। সেখানে গানটির নেপথ্য শিল্পী ছিলেন লতা মুঙ্গেশকর। গানটি আজও ভীষণ জনপ্রিয়।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গবিরোধী স্বদেশি আন্দোলন ক্ষুদিরামের মতো স্কুলের ছাত্রদেরও প্রভাবিত করে এবং পরিণামে তিনি পড়াশোনা ছেড়ে সত্যেন বসুর নেতৃত্বে এক গুপ্ত সমিতিতে যোগ দেন। সেখানে শরীরচর্চা ও রাজনৈতিক শিক্ষার পাশাপাশি পিস্তল চালনাতেও তার হাতেখড়ি হয়। ইংল্যান্ডে উৎপাদিত কাপড় পোড়ানো ও ইংল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত লবণবোঝাই নৌকা ডোবানোর কাজে ক্ষুদিরাম অংশগ্রহণ করেন। ১৯০৬ সালের মার্চে মেদিনীপুরের কৃষি ও শিল্পমেলায় রাজদ্রোহমূলক ইশতেহার বণ্টনকালে ক্ষুদিরাম প্রথম পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। ১৯০৭ সালের শুরুতে হাটগাছায় ডাকের থলি লুট করা এবং ডিসেম্বরে নারায়ণগড়ে বঙ্গের ছোটলাটের রেলগাড়িতে বোমা হামলায় তিনি অংশ নেন। যুগান্তর বিপ্লবী দল ১৯০৮ সালে কলকাতার প্রধান প্রেসিডেন্সি ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ডকে হত্যার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে এবং প্রফুল্ল চাকী ও ক্ষুদিরামের ওপর এ দায়িত্ব পড়ে।

ক্ষুদিরাম বসু ও প্রফুল্ল চাকী ৩০ এপ্রিল মুজাফফরপুরের ইউরোপীয় ক্লাবে কিংসফোর্ডকে আক্রমণের জন্য ওত পেতে থাকেন। কিন্তু কিংসফোর্ডের গাড়ির মতো অন্য একটি গাড়িতে ভুলবশত বোমা মারলে গাড়ির ভেতরে একজন ইংরেজ মহিলা ও তার মেয়ে মারা যান। ক্ষুদিরাম ওয়ানি রেলস্টেশনে পুলিশের হাতে ধরা পড়েন। তিনি বোমা নিক্ষেপের সব দায়িত্ব নিজের ওপর নিয়ে নেন। অন্য কোনো সহযোগীর পরিচয় বা কোনো গোপন তথ্য প্রকাশ করেননি তিনি। আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। মুজফফরপুর কারাগারে ১৯০৮ সালের ১১ আগস্ট ফাঁসিতে মৃত্যুবরণ করেন ক্ষুদিরাম বসু। ফাঁসির সময় তার বয়স ছিল ১৮। ‘চিনতে নাকি সোনার ছেলে/ক্ষুদিরামকে চিনতে?/রুদ্ধশ্বাসে প্রাণ দিল যে/মুক্ত বাতাস কিনতে’— ক্ষুদিরামকে নিয়ে এটি বাঙালি কবি আল মাহমুদের ছড়া।