আশরাফুল বলেন- উন্মুক্ত দলবদল ‘পুরাই লস’

প্রথম রাউন্ডের পর আর মাঠে গড়ায়নি ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেট লীগ। করোনা ভাইরাসের কারণে দেশে সবধরনের ক্রিকেট বন্ধ রয়েছে অনির্দিষ্টকালের জন্য। যত দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। তাই ঢাকা লীগের ক্রিকেটারদের মধ্যে বাড়ছে শঙ্কা-ভয়। শেষ পর্যন্ত যদি লীগ মাঠে না গড়ায় তাহলে কী হবে! এসবের ভেতর জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুল শোনালেন- তার দল শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব কোনো টাকাই দেয়নি তাকে। একই ক্লাবের আরও ক’জন ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, কেউ কোনো টাকা পায়নি। কাউকে ৫০ হাজার আবার কাউকে দেয়া হয়েছে তার চেয়েও কম। অনেকেই ভয়ে আছেন- যদি শেষ পর্যন্ত লীগ না হয় তাহলে দলবদলে যে টাকায় ক্লাব তাদের নিয়েছে সেই টাকাও হয়তো পাবেন না।

অনেক মৌসুম পর এবার ঢাকা লীগ হয়েছে পুরানো উন্মুক্ত দলবদল পদ্ধতিতে।
যে কারণে ক্লাবগুলোর সঙ্গে নিজেদের পারিশ্রমিক নিয়ে দেন-দরবার করেছেন ক্রিকেটাররাই। তাই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও লীগ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা সিসিডিএম এবার ক্রিকেটারদের পরিশ্রমিকের কোনো দায়িত্ব নিবে না। এ বিষয়ে দৈনিক মানবজমিনকে মোহাম্মদ আশরাফুল বলেন, ‘এবার শেখ জামালের হয়ে খেলছি। কিন্তু তারা এক রাউন্ড হয়ে গেলেও কোনো টাকা আমাকে দেয়নি। দলের বেশিরভাগ ক্রিকেটারের একই অবস্থা। শুনেছি কেউ কেউ সামান্য কিছু টাকা পেয়েছে। আমি পাইনি, আশা করি পরিস্থিতি ভালো হলে দিবে। কিন্তু ভয় হচ্ছে খেলা না হলে কি হবে তা নিয়ে।’

দেশের করোনা ভাইরাসের পরিস্থতি বেশ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। এরই মধ্যে চার হাজার মানুষ আক্রান্ত। মৃতের সংখ্যাও ১০০ ছাড়িয়েছে। তাই কবে মাঠে ক্রিকেট ফিরবে তার কোনো নিশ্চয়তা নেই। আর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও বৃষ্টিসহ নানা কারণে শেষ পর্যন্ত লীগ হবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে শঙ্কা। তাই এবারের উন্মুক্ত দলবদল পদ্ধতি ‘পুরাই লস’ বলে জানালেন আশরাফুল। তিনি বলেন, ‘উন্মক্ত দলবদলে আগে আমরা কেউ কেউ ক্লাবের কাছ থেকে শতভাগ টাকাই নিয়ে নিতাম। কেউ ৫০ আবার কেউ ২৫ ভাগ নিয়ে খেলা শুরু করতো। তবে এবার দেশের যে পরিস্থিতি তাতে শেষ পর্যন্ত লীগ হয় কিনা তা নিয়ে রয়েছে সন্দেহ। তাই বলতেই হচ্ছে এবার উন্মুক্ত দলবদলে আমাদের পুরাই লস হয়েছে। টাকা পাওয়া নিয়ে অনেক ঝামেলা হবে মনে হচ্ছে। তবে আমরা আশা ছাড়িনি। শেখ জামাল বড় ক্লাব। পরিস্থিতি ঠিক হলে অবশ্যই টাকা দিবে। আর লীগ না হলে যে আমাদের জন্য ভালো কিছু হবে না তা নিশ্চিত।’

অন্যদিকে শেখ জামালের আরেক ক্রিকেটার নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, ‘আমি এক লাখ টাকাও পাইনি। শুনেছি যদি খেলা হয় দিয়ে দিবে। কিন্তু খেলা না হলে পাওনা নিয়ে সমস্যা হবেই বলে মনে হচ্ছে। তখন বিপদটা আরো বড় হবে আমাদের।’

শুধু শেখ জামাল নয়, ব্রাদার্স ইউনিয়নেরও একই অবস্থা। বড় ক্লাবগুলোর মধ্যে মোহামেডান বেশিরভাগ ক্রিকেটারকে দিয়েছেন ২৫ শতাংশ টাকা। এর মধ্যে কোনো টাকা নেননি শামসুর রহমান শুভ। তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ, আমাদের বেশিরভাগকেই ২৪ শতাংশ টাকা দেয়া হয়েছে। আমি শুধু নেইনি পরে নিবো বলে। অনেক বছর ধরেই দলে খেলছি, সম্পর্ক ভালো। তাই আশা করি সময় মতো দিয়ে দিবে। কিন্তু খেলা না হলে কি হবে তা নিয়ে ভয় কাজ করছে। দেখি অপেক্ষা করে।’

সিসিডিএমের সদস্য সচিব আলী হোসেন জানিয়েছেন, শেষ পর্যন্ত খেলা না হলে তারা ক্রিকেটারদের পাশে থাকবেন। তিনি বলেন, ‘এবার তো ক্লাবগুলোর সঙ্গে চুক্তি করেছে ক্রিকেটারাই। তাই কীভাবে তারা পারিশ্রমিক পাবে সেটা তাদের বিষয়। আশা করি পরিস্থিতি ভালো হলে লীগ শুরু হলে ক্রিকেটাররা টাকা পেয়ে যাবে ক্লাবের কাছ থেকে। আর শেষ পর্যন্ত যদি নাই হয় লীগ তখন তো আমরা ক্রিকেটারদের ফেলে দিবো না। আমরা ক্লাবগুলোকে বিসিবি ও সিসিডিএমের পক্ষ থেকে অনুরোধ করবো। যেন ক্রিকেটারদের ক্ষতি না হয় এমন কিছু করে।’