নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গা শিবির তলিয়ে গেছে

ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে বান্দরবানের তুমব্রু সীমান্তের কোনারপাড়া নো-ম্যানস ল্যান্ডের রোহিঙ্গা শিবির পানিতে তলিয়ে গেছে। এতে ক্যাম্পের এক হাজার পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। সংকট দেখা দিয়েছে খাবার পানি ও টয়লেটের।

জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইসচিআর) প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী তুমব্রু খালের কাছে শূন্যরেখায় প্রায় ১ হাজার ৩০০ রোহিঙ্গা পরিবারের নারী, পুরুষ, শিশু অবস্থান করছিল।

কক্সবাজার আবহাওয়া অধিদফতরের সহকারী আবহাওয়াবিদ আব্দুর রহমান জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে কক্সাবজারে। চলমান বর্ষা মৌসুমের শুরু হতে এটিই সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। আগামী ২৪ ঘণ্টায়ও হাল্কা থেকে ভারি বর্ষণ হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।

বৃহস্পতিবার বিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সকালে ভারি বৃষ্টিপাতে পাহাড়ের কোনারপাড়া শূন্যরেখায় গড়ে উঠা রোহিঙ্গা শিবিরটি ডুবে গেছে। সেখানে বর্তমানে এক হাজার পরিবার রয়েছে। ২০১৭ সালে ২৪ আগস্টের পরে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসার সময় তারা সেখানে আটকা পরে। বিশেষ করে সম্প্রতি সময়ে মিয়ানমার কাঁটাতারের একটি ব্রিজ নির্মাণের কারণে বৃষ্টির পানিতে সহজে চলাচল করতে পারছে না। ফলে পানিতে নলকূপ, টয়লেটসহ রোহিঙ্গা শিবিরটি পানিতে ডুবে আছে।

শূন্যরেখার বাসিন্দারা জানান, এখানে যথেষ্ট খাদ্য সাহায্য মিললেও তারা বিশুদ্ধ পানি ও পর্যাপ্ত পায়খানার সংকটে ভুগছেন। এখানে তারা যে ব্লকে থাকছেন, সেখানে এক হাজার পরিবারের জন্য মাত্র একটি নলকূপ রয়েছে, আর পায়খানা মাত্র তিনটি। তবে এসব পায়খানার একটিও মহিলাদের ব্যবহার উপযোগী নয় উল্লেখ করে তারা জানান, এ কারণে অধিকাংশ মহিলা দিনের বেলা প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে পারেন না। তবে এসব সমস্যা ছাপিয়ে তাদের মূল আক্ষেপ দেশে ফিরতে না পারা নিয়ে।

গত দুই বছরের কাছাকাছি ধরে তুমব্রু শুন্যরেখায় বসবাস করেছেন ওমর সুলতান। তিনি বলেন, এতো দিন দু’দেশের মাঝখানে বন্দী জীবনে বসবাস করে আসছি। কিন্তু এখন এখানে থাকা খুব মুশকিল। কেননা ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে পুরো শিবিরটি ডুবন্ত অবস্থায় রয়েছে। এখানে আর ভালো লাগে না।

তিনি আরও বলেন, নিজের দেশে আমরা মানসম্মান নিয়ে ছিলাম। কাজ-কারবার, ব্যবসা-বাণিজ্যে শান্তি ছিল। কিন্তু এখন অনেক কষ্টের জীবন যাচ্ছে। আমরা জন্মভূমিতে ফেরার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে ‘ইনসাফ’ চাই, ‘জাস্টিস’ চাই,”।

তুমব্রু শূন্যরেখা রোহিঙ্গা শিবিরের চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ জানান, ভারি বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে গোটা আশ্রয় শিবির কোমর পানিতে তলিয়ে গেছে। নিচু এলাকার ঘরবাড়ি একেবারে ডুবে যাওয়ায় সেখানে বসবাসরতরা আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গারা এখন খুবই কষ্টের মধ্যে রয়েছে।

বাংলাদেশের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) মোহাম্মদ আবুল কালা বলেন, সেখানকার খোজঁ খবর রাখা হচ্ছে। মিয়ানমার কাটাতারের ব্রিজ নির্মাণের কারনে শিবিরের এই অবস্থা হয়েছে বলে জানিয়েছেন রোহিঙ্গা নেতারা।