শক্তি দেখাবে আওয়ামী লীগ

ঢাকায় বিএনপি’র ডাকা ২৮শে অক্টোবর মহাসমাবেশের দিনে পাল্টা সমাবেশ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে আওয়ামী লীগ। ওইদিন ঢাকার সবক’টি প্রবেশমুখে সতর্ক অবস্থান নেবে নেতাকর্মীরা। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু এভিনিউ বা বায়তুল মোকাররমের সামনে শান্তি সমাবেশ পালন করবে। গতকাল থেকে এ নিয়ে রাজধানীর সব থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতাদের কাছে বিশেষ নির্দেশনা পাঠানো শুরু করেছে দলটির নেতারা। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের গতকাল এ নিয়ে সরাসরি মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেন, ১০ই ডিসেম্বরের মতো আগামী ২৮শে অক্টোবরও বিএনপি’র একই পরিণতি হবে। গত ১০ই ডিসেম্বর তাদের যেতে হয়েছিল গোলাপবাগের গরুর হাটে, এখন কোথায় যাবে সেটাই দেখার বিষয়। ২৮শে অক্টোবর নিয়ে গতকাল আওয়ামী লীগের বিভিন্ন স্তরের একাধিক নেতার সঙ্গে কথা হয় মানবজমিনের।

তারা জানান, বিএনপি’র কর্মসূচি মানেই জ্বালাও-পোড়াও, মানুষের জানমালের ক্ষয়ক্ষতি। অতীতে তারা এ ধরনের অনেক উদাহরণ তৈরি করেছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের আন্দোলনের প্রকৃত রূপ দেখেছে।

তাই যখনই তারা কোনো কর্মসূচি ঘোষণা দেয় তখনই আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সতর্ক অবস্থানে থাকে। সামনে নির্বাচন। তাই নির্বাচন বানচাল করার চক্রান্ত শুরু করেছে বিএনপিসহ সমমনা দলগুলো। তারা কর্মসূচি দিয়ে সরকার হটানোর ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু জনগণ তাদের সঙ্গে নেই। আমরা জনগণের শক্তি নিয়ে রাজপথে তাদের মোকাবিলা করবো। কোনো ধরনের অরাজকতা বা বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে দেয়া হবে না। আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান মানবজমিনকে বলেন, দেশে কেউ অশান্তির পরিবেশ সৃষ্টির চেষ্টা করলে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলবো। বিএনপি’র গতিবিধি ভালো মনে হচ্ছে না। তারা আবার নাশকতার দিকে এগোচ্ছে। তাই রাজনৈতিক মাঠে তাদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ কর্মসূচি গড়ে তোলা হবে। ২৮শে অক্টোবর আওয়ামী লীগের প্রস্তুতি প্রসঙ্গে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন রিয়াজ মানবজমিনকে বলেন, ওইদিন রাজধানীতে কোনো ধরনের অরাজকতা করতে দেবে না মহানগর আওয়ামী লীগ। আমাদের সেই প্রস্তুতি আছে। যে কোনো কিছুর মূল্যের বিনিময়ে আমরা অরাজকতা বন্ধ করবো। তাদের সহিংসতা করতে দেয়া হবে না। ঢাকার রাজপথ আমাদের দখলে থাকবে। ওইদিন আমাদেরও সমাবেশ থাকবে। বিএনপি যখন কর্মসূচি দেয় তখন আমরা শান্তি সমাবেশ করি মানুষের জানমাল রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য। এ নিয়ে আমাদের প্রত্যেক থানায় ও ওয়ার্ডে বিশেষ নির্দেশনা দেয়া আছে।
উল্লেখযোগ্য কয়েকটি নির্দেশনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওইদিন একটা সমাবেশ করা হবে। ঢাকার প্রবেশদ্বারসহ যেসব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা আছে সেগুলোতে আমাদের নেতাকর্মীরা পাহারা দেবে। যাতে বিএনপি কোনো ধরনের ক্ষয়ক্ষতি করতে না পারে। দলটির কেন্দ্রীয় কয়েক নেতা জানান, বিএনপিসহ সব বিরোধী দলের কর্মকাণ্ড অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নানা চাপ সামাল দিয়ে সংবিধানের মধ্যে থেকেই নির্বাচন করা হবে। বিএনপি’র একদফা দাবি মানতে গেলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কিন্তু সংবিধানের বাইরে গিয়ে বিএনপি’র কোনো দাবিই আমলে আনা হবে না। ২৮শে অক্টোবরসহ সামনের সব কর্মসূচিতে ব্যাপক পরিসরে মাঠে নামার পরিকল্পনা করেছে আওয়ামী লীগ। দলটির নেতারা জানান, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত রাজপথে হার্ডলাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। কর্মসূচির বিপরীতে কর্মসূচি, আন্দোলনের বিপরীতে প্রতিরোধ-আপাতত এই নীতিতে এগোনো হবে। আওয়ামী লীগ নেতাদের ধারণা, নির্বাচন ঘনিয়ে আসায় যেকোনো সময় রাজপথের পরিস্থিতি উত্তপ্ত করে তুলতে পারে দেশের বিরোধী দল ও জোটগুলো। তারা প্রয়োজনে নাশকতার আশ্রয়ও নিতে পারে। তাই সতর্ক অবস্থানে থেকে রাজপথের কর্মসূচিতে মহড়ার গতি বাড়াবে তারা। দলীয় যেকোনো কর্মসূচিতে লোক সমাগম বাড়ানোরও পরিকল্পনা করা হয়েছে।