বিএনপির শোভাযাত্রায় হামলা ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশেই

ফটিকছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিমুউদ্দীন মুহুরীর নির্দেশেই বিএনপির শোভাযাত্রার উপর হামলা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ন আহবায়ক সরোয়ার আলমগীর।বুধবার (৫ জুলাই) দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের এস রহমান হলে ফটিকছড়িতে বিএনপির শোভাযাত্রার উপর হামলার ঘটনার বিষয়ে উত্তর জেলার বিএনপির পক্ষ থেকে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই অভিযোগ করেন।

ফটিকছড়িতে বিএনপির মিছিলে হামলার ঘটনা পুর্বপরিকল্পিত জানিয়ে তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ গত ১৫ বছর ধরে যা করেছে, তার ব্যতিক্রম এখনও হয়নি। তারা মুখে বলে শান্তিপুর্ণ, কিন্তু তারা যে কত অশান্ত সেটা বর্তমান ফটিকছড়ির বিভীষিকাময় পরিস্থিতি প্রমান করে। আমরা শান্তিপূর্নভাবে ফটিকছড়িতে ঈদ পরবর্তী শুভেচ্ছা বিনিময় করতে রাস্তায় নেমে নীরব শোভাযাত্রা বের করেছিলাম। সেই শোভাযাত্রাকে তারা ভন্ডুল করতে চেয়েছে।

তিনি বলেন, ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সংবাদ সম্মেলন করেছেন। সাংবাদিকদের তিনি যে ব্রিফ করেছেন সেখানেই ফুটে উঠেছে তার নির্দেশে এই হামলার ঘটেছে। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা সেদিন বিভিন্ন জায়গায় মহড়া দিয়েছেন যেনো ফটিকছড়ির বিএনপি ও সাধারণ জনগণ এদিক ওদিক চলাফেরা করতে না পারে। এতেই বুঝা যায় এই ঘটনা একটি পূর্ব পরিকল্পিত। পূর্ব পরিকল্পিত ভাবে আমাদের এই শোভাযাত্রা শেষ হওয়ার পর এই হামলা করা হয়েছে।

বিএনপির নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে নির্যাতন করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, সেদিন হামলা করে আমাদের প্রায়ই ৫০টি মোটরসাইকেল তারা ধ্বংস করেছে এবং ১২ থেকে ১৪টি মোটরসাইকেল তারা রেখে দিয়েছে। এছাড়া ফটিকছড়ির প্রতিটি ঘরে ঘরে গিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের তল্লাশি চালাচ্ছে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ক্যাডারেরা। তাদেরকে বিভিন্নভাবে নির্যাতন করছে।

তিনি বলেন, প্রশাসন জনগণের দেওয়া ট্যাক্স থেকে বেতন নিয়ে চলে। আওয়ামী লীগের কথায় পুলিশ যেভাবে বিভিন্ন পাড়ায় পাড়ায় মহড়া দিচ্ছে এটা ফটিকছড়িতে পুরনো ইতিহাস মনে করিয়ে দিচ্ছে। একসময় ফটিকছড়ির নাম শুনলে মানুষ ভয় পেতো, মানুষ ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হতো সেই সম্ভাবনা আবার দেখা দিয়েছে তাদের বর্তমান আচার আচরণে।

ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগ আরেকটি ভূজপুর ট্র্যাজেডি করার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ওইদিন যে ঘটনাটি তারা ঘটিয়েছে আমি মনে করি তারা আমাদেরকে ফাঁদে ফেলানোর চেষ্টা করেছিলো। আরেকটি ভূজপুর ট্র্যাজেডি করার চেষ্টা করা হয়েছিলো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশ দিয়েছেন অহিংস আন্দোলন করতে। কেউ যদি সহিংসভাবে ওই আন্দোলন ভন্ডুল করতে চায় তাহলে ধৈর্য্য সহকারে ওই জায়গা থেকে ফিরে আসার জন্য।

সরওয়ার আলমগীর বলেন, ওইদিন নেতাকর্মীরা বাড়িতে ফিরে যাওয়ার সময় পথে পথে ফটিকছড়ি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাজিম মুহুরী মহড়া বসিয়েছিলো।  নেতাকর্মীদের মোবাইল চেক করে ছবি দেখে তাদের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে। তা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এটাই কি রাজনীতি, এটাই কি সহনশীলতা?

তিনি বলেন, আমাকে এবং বিএনপি নেতাকর্মীদের হত্যার উদ্দেশ্যে এ হামলার নেতৃত্ব দিয়েছে আওয়ামীলীগ নেতা ইসমাইল মজুমদার, সেলিম সরকার, হানিফ সরকার। এই হামলায় বিএনপি নেতা আবুল খায়ের, আবুল হাশেম, যুবদল নেতা সামশু, সেচ্ছাসেবকদল নেতা মো: জসীম উদ্দীন, আরিফ, ইউসুফ সহ অসংখ্য নেতাকর্মী আহত হয়েছে।

ফটিকছড়িকে আর অশান্ত হতে দেওয়া যাবে না উল্লেখ করে সরোয়ার আলমগীর বলেন, বিশ্ববিবেক আজ বাংলাদেশের দিকে তাকিয়ে আছে। সাংবাদিকদের উপর নির্যাতন যদি বর্তমান সরকার করতে পারে তাহলে সাধারন মানুষ ও বিরোধী মতের উপর কি পরিমান নির্যাতন করে সেটা আঁচ করতে আপনারা পারছেন।

হামলার ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ জড়িত কিনা সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা শুভেচ্ছা বিনিময় করতে শোভাযাত্রাটি বের করি। ৪৫ কিলোমিটার কোথাও কোনো কিছু হয়নি। শেষ পথে আগে থেকে উৎপেতে থাকা আওয়ামী লীগের লোকজনেরা আমাদের উপর হামলা চালায়। এরপর সাংবাদিক সম্মেলনে নাজিমুদ্দিন মুহুরীর কথা শুনে আমরা এটা স্পষ্ট হয়েছি তার নির্দেশে হামলা চালানো হয়েছে। স্থানীয় সংসদ সদস্য এর সাথে জড়িত আছে কিনা আমি জানি না। আমরা তো অনেকজন ছিলাম। চাইলে আমরা মারামারি করতে পারতাম। কিন্তু আমরা সেটা চাই না। কোনো প্রকার রক্তপাত ঘটাতে চাইনি।

ফটিকছড়িতে আওয়ামী লীগের কাছে পুলিশ অসহায়। পুলিশের সামনেই মারামারি হয়েছে। পুলিশের সহায়তায় আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা চালিয়েছে- তিনি বলেন।

তিনি বলেন, এই হামলার ঘটনার বিষয়ে আমরা মামলার দায়ের করার প্রস্তুতি নিচ্ছি। আমি প্রশাসনকে বারবার অনুরোধ করেছি চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করে পরিস্থিতি শান্ত করার জন্য। কিন্তু প্রশাসন বিশেষ করে ভূজপুর পুলিশ এখনও কোনো কার্যকরী ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তিনি সংগঠিত ঘটনার সুষ্টু তদন্ত করে প্রকৃত অপরাধী এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনার দাবী জানান।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক নুরুল আমিন চেয়ারম্যান, ইঞ্জিনিয়ার বেলায়েত হোসেন, কাজী সালাউদ্দিন, সম্মিলিত পেশাজীবী পরিষদের আহবায়ক সাংবাদিক জাহিদুল করিম কচি, জেলা বিএনপির সদস্য শওকত আলী নূর, সোলায়মান মঞ্জু, আজমত আলী বাহাদুর, ফটিকছড়ি পৌরসভা বিএনপির আহ্বায়ক মোবারক হোসেন কাঞ্চন, সদস্য সচিব আবুল কালাম আজাদ, বিএনপি নেতা নাজিম উদ্দিন শাহিন, আবু তাহের সিদ্দিকী, মহিউদ্দিন আজম তালুকদার, মনসুর আলম চৌধুরী, আবুল খায়ের, জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহবায়ক জসীম উদ্দীন চৌধুরী, ছাত্রদলের সহ সভাপতি আনসুর উদ্দিন, বিএনপি নেতা আবু মেম্বার, খালেদ বাবুল, হাফেজ জয়নাল, এস এম মনসুর, জালাল উদ্দীন চৌধুরী, মোশারফ আনোয়ার মশু, ফয়েজ তারেক, ওমর ফারুক প্রিন্স, দৌলত মিয়া প্রমূখ।