আকস্মিক চুল পড়া রোগের নাম ‘অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা’

মাথাভর্তি চুল দিন কয়েকের মধ্যেই হাওয়া হয়ে গেল। মাঝে মাঝে এমনই ঘটে। কারও কারও ক্ষেত্রে একটা দুটো চুলবিহীন চাকা, কারও কারও ক্ষেত্রে পুরো মাথা, আবার কারও ক্ষেত্রে মাথার চুল তো বটেই সঙ্গে ভ্রু, দাঁড়ি, এমনকি শরীরের সব চুল। একইসঙ্গে নখের কিছু সমস্যা, যেমন নখে লম্বা লম্বা দাগ পড়ে যাওয়া বা নখ দুর্বল হয়ে জায়গায় জায়গায় ভেঙে পড়া ইত্যাদি। মেডিকেল পরিভাষায় এ রোগকে ‘অ্যালোপেসিয়া এরিয়াটা’ বলা হয়। এ রোগ মোটেই বিরল নয়, অহরহ ঘটে। এ রোগ নিয়ে আমাদের দেশে কুসংস্কার কম নয়। অনেকেই বলেন, রাতে তেলাপোকা চুল খেয়ে ফেলেছে। এগুলো স্রেফ ভুল ধারণা। এ রোগটি মূলত একটি অটোইমিউন রোগ অর্থাৎ শরীরে ইমিউন সিস্টেমে এমন একটি বিপত্তি ঘটে যার ফলে, রোগপ্রতিরোধী কোষগুলো চুলের ফলিকলের বিশেষ কোষগুলোকে শত্রু ভেবে ধ্বংস করে ফেলে, এতে অকস্মাৎ চুল পড়া শুরু হয়ে যায়।

অনেক রোগী প্রথম দিকে নিজে বুঝতেই পারেন না যে ওনার চুল পড়ে যাচ্ছে। অনেক সময় সেলুনে চুল কাটার সময়েই এ রোগ দৃশ্যমান হয়। আবার কারও কাও ক্ষেত্রে শুধু ভ্রু বা দাঁড়িতে এ রোগ শুরু হয়। প্রথম দিকে ছোট গোলাকার বা ডিম্বাকৃতির হয়, ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এ রোগের উপসর্গ মৃদু বা মাঝারি হয়। যদিও কারও কারও ক্ষেত্রে এটি পুরো শরীরজুড়েই পরিলক্ষিত হয়। সাধারণত যাদের খুব কম বয়সে এটা শুরু হয় বা পুরো শরীরজুড়ে পরিলক্ষিত হয়, তাদের রোগ খুব একটা সারে না।
অনেকেরই আবার এ রোগের পারিবারিক ইতিহাস রয়েছে অর্থাৎ মা-বাবা বা রক্তের সম্পর্কের মধ্যে এ রোগের প্রকোপ থাকে। এ রোগের চিকিৎসা রয়েছে। যদিও নানা রকম অপচিকিৎসার অভাব নেই। চুল পড়া জায়গায় পিয়াজের রস লাগানো একটি জনপ্রিয় চিকিৎসা। যদিও এ চিকিৎসার বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। তবে যাদের রোগ মৃদু বা মাঝারি ধরনের তাদের অধিকাংশেরই বিনা চিকিৎসায়ই চুল গজায়। বর্তমানে এ রোগের আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে। মাথায় লাগানোর মলম ঈষড়নরঃধংড়হব বা ঞধপঃড়ষরসঁং ভালো কাজ করে। মুখে খাওয়ার জন্য কিছু নতুন ওষুধ রয়েছে যেমন ঔঅক ওহযরনরঃড়ৎ, যা অবশ্যই চর্মবিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে খেতে হয়। মনে রাখতে হবে, প্রতিটি ওষুধেরই পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া রয়েছে এবং কারো ক্ষেত্রে স্বল্পকালীন আবার কারো কারো ক্ষেত্রে দীর্ঘকালীন চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। এ রোগ সারা বিশ্বে সব শ্রেণির লোকজনের মধ্যে রয়েছে।

অনেক সেলিব্রেটি ও প্রভাবশালীরাও এ রোগে ভুগছেন। ফেসবুক বা ইনস্টাগ্রামে তারা তাদের অভিজ্ঞতা অনেক সময় শেয়ার করেন এবং অন্যকে মনোবল বাড়াতে সাহায্য করেন। রোগীরা প্রয়োজনে পরচুলা, টুপি বা ংপধৎভ পরতে পারেন, এতে একদিকে যেমন মাথায় একটি এস্তেটিক কাভারেজ দেয়া যায়, একইসঙ্গে মাথা রোদ্রলোক থেকে সুরক্ষা দেয়া যায়। স্ট্রেস বা দুশ্চিন্তা কমানো এ রোগের জন্য বিশেষভাবে প্রয়োজন। অনেকেই এ রোগের কারণে সামাজিকভাবে ও ব্যক্তিগতভাবে বিভিন্ন বিড়ম্বনার সম্মুখীন হন। আমেরিকার লস অ্যানজেলসে সামপ্রতিক এক অস্কার পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে এলোপেসিয়া রোগে আক্রান্ত একজন অভিনেত্রী উপস্থাপক কর্তৃক মশকরার শিকার হলে অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সম্মুখীন হন। এলোপেসিয়া রোগী নিয়ে এ ধরনের ব্যঙ্গ বিদ্রূপ আসলেই কাম্য নয়। আমাদের সবাইকেই এসব রোগীর সঙ্গে সচেতন আচরণ করতে হবে।

লেখক: (চর্ম, যৌন ও এলার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ) জালালাবাদ রাগীব-রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। চেম্বার: ১২, স্টেডিয়াম মার্কেট, সিলেট। ফোন-০১৭১২-২৯১৮৮৭