শীতকালীন চর্মরোগ হলে

শীত এলে অনেকের শরীর খুবই চুলকায়। এ সময় শরীর চুলকালেও শরীর পরীক্ষা করলে প্রায় ক্ষেত্রেই কিছুই দেখতে পাওয়া যায় না। মূলত শীতে চুলকানির মূল কারণ হচ্ছে ত্বক অধিক পরিমাণে শুষ্ক হয়ে যায় আর এ শুষ্কতার কারণ হচ্ছে বাতাসে শীতকালে জলীয় বাষ্প কমে যায়। তাই বায়ুমণ্ডল ত্বক থেকে পানি শুষে নিয়ে যায় ফলে ত্বক শুষ্ক হয়ে পড়ে এবং ত্বকে চুলকানি শুরু হয়। সেই চুলকানি আরও বেড়ে যায় যখন নখ বা অন্য কিছু দিয়ে বারবার চুলকানো হয়। মনে রাখতে হবে যতই চুলকাবেন চুলকানির গতি ততই প্রবল হতে থাকবে। তাই নখ দিয়ে কখনই চুলকানো উচিত নয়। যদি একান্তই অসহ্য হয় তবে সেক্ষেত্রে হালকাভাবে হাতের তালু দিয়ে চুলকানো যেতে পারে। যদি শুষ্কতার কারণেই এ রকম চুলকানি দেখা দেয় তাহলে ভালো কোনো ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করলে ত্বক ভালো থাকে। ময়েশ্চারাইজার পাওয়া না গেলে অলিভ অয়েল ব্যবহার করলেও ত্বক ভালো থাকে।

চুলকানির পরিমাণ মারাত্মক হলে গ্লিসারিনের সঙ্গে পানি মিশিয়ে ব্যবহার করলেও ভালো ফল পাওয়া যায়। রোগটি কখনই একেবারে ভালো হয় না। তবে একে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব যদি ত্বকের গায়ে তৈলাক্ত পদার্থ নিয়মিত মাখা যায়। সেক্ষেত্রে আলফা হাইড্রোক্সি এসিড খুবই কার্যকরী। এটি পাওয়া না গেলে গ্লিসারিনের সঙ্গে সমপরিমাণ পানি মিশিয়ে ত্বকে ব্যবহার করলেও খুবই ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। তবে গ্লিসারিন ব্যবহারের সমস্যা হচ্ছে যে ত্বক আঠা আঠা হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে একটি টাওয়েল দিয়ে অতিরিক্ত গ্লিসারিনটুকু চেপে তুলে নিলে ত্বকের আঠালো বা চটচটে ভাবটা কেটে যায় এবং ত্বক খুবই ভালো রাখা সম্ভব। অ্যাকজিমাও শীত এলে প্রকোপ বাড়ায়। তাই অ্যাকজিমায় আক্রান্ত রোগীদের আমরা সব সময়ই বলে দেই ভালো হওয়ার পরও যেন সেই স্থানটি শুষ্ক হতে দেয়া না হয়। একটি বিশেষ ধরনের অ্যাকজিমা আছে যার নাম হচ্ছে অ্যাকজিমা ক্রাকুয়েলেটাম।
এটি সাধারণত চল্লিশ বছরের ঊর্ধ্বের লোকদের হয়। এটি শীত এলেই বাড়ে কারণ শীতে বাতাসের জলীয় পদার্থ কমে যায়। এক্ষেত্রে শুষ্ক ত্বকের গায়ে ফাটা ফাটা দাগ ও হালকা পরিমাণ আঁইশ লক্ষ্য করা যায়। কখনো কখনো ত্বক পুরো হয়ে পড়তেও দেখা যায়। সাধারণত ত্বক চুলকালে ত্বক পুরো হতে থাকে এবং একপর্যায়ে তা শক্ত ও অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে থাকে। এই রোগটি হচ্ছে স্কেবিস যা খুজলি-পাঁচড়াও বলেও অভিহিত করা হয়। এই রোগটির সঙ্গে সরাসরি শীতের বা বাতাসের আর্দ্রতার কোনো সম্পর্কের কথা জানা যায় না তবে দেখা গেছে, এ রোগটি শীত এলেই ব্যাপক আকারে দেখা দেয়। বিশেষ করে শিশুরা এতে ব্যাপকভাবে আক্রান্ত হতে থাকে। হতে পারে শীতকালে যেহেতু এক বিছানায় একত্রে অনেকেই চাপাচাপি করে শোয় সে কারণে রোগটি এ সময়ে ব্যাপকভাবে সংক্রমিত হয়ে থাকতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে যেসব শিশু স্কুলে যায় তারাই এতে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এটি একটি জীবাণুবাহিত রোগ। যে কীটটি দিয়ে এ রোগটি হয় তার নাম হচ্ছে স্কেবিয়াইসারকপটিস স্কেরিবাই। এক্ষেত্রে শরীরে অসম্ভব রকম চুলকানি হতে দেখা যায় এবং রাতে চুলকানির তীব্রতা আরও বাড়ে। রোগটি খুব সাধারণ হলেও চিকিৎসায় হেলাফেলা করা উচিত নয়। কেননা সাধারণত ঘরের একাধিক ব্যক্তি এ রোগে ভুগে থাকেন। ফলে ঘরের সবাইকেই এ রোগের চিকিৎসা একসঙ্গে করাতে হয় নয়তো ভালো হয়ে এ রোগ আবার তার দেহে দেখা দেবেই। এ ছাড়াও কিছু কিছু রোগ আছে যেমন হাম ও চিকেন পক্স। এগুলোর সঙ্গে আমরা খুবই পরিচিত। এগুলো ভাইরাসজনিত চর্ম রোগ। লক্ষ্য করলে দেখতে পাবো যে এগুলো সাধারণত শীতকালেই বেশি হয়ে থাকে।

লেখক: চর্ম, যৌন, অ্যালার্জি রোগ বিশেষজ্ঞ ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন। যোগাযোগ: কামাল হেয়ার অ্যান্ড স্কিন সেন্টার, বিটিআই সেন্ট্রা গ্র্যান্ড, ফার্মগেট, গ্রীন রোড, ঢাকা।
সেল: ০১৭১১৪৪০৫৫৮