পুরো রমজান মাস ফ্রিতে সেহরি ‘মাতাব্বর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে’

বরিশালের গৌরনদীর ‘মাতাব্বর হোটেল অ্যান্ড রেস্টুরেন্টে’ পুরো রমজান মাস ফ্রিতে সেহরি খাওয়ান মালিক মো. আবদুর রশিদ। তিনি ১১ মাস ব্যবসা করলেও রমজান মাসে সম্পূর্ণ ফ্রিতেই রোজাদারদের সেহরি খাওয়ান। ঢাকা বরিশাল হাইওয়েতে অবস্থিত এ হোটেলটিতে যাত্রাবিরতীতে রোজাদারদের সেহরি খাইয়ে কোনো টাকা রাখা হয় না।
বরগুনা জর্জ কোর্টে অ্যাডভোটেক আবদুল্লা আল সাইদ সোমবার রাতে ঢাকা থেকে বরিশাল যাওয়ার পথে ওই হোটেলে খেতে গিয়ে দোকানি টাকা না রাখার কথাটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভিন্ন এ অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। তিনি বলেন, আমি কিছুদিন আগে একটি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করার জন্য ঢাকায় গমণ করি এবং পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সেমাবার রাত ৯ টায় বরিশালগামী সাকুরা পরিবহনের একটি বাসে ঢাকা থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা করি।

রাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়েকের গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডে বাস থামল। যে হোটেলের সামনে বাসটি আমাদের সেহরি খেতে নামালো ওই হোটেলের সামনে আরও ১০ থেকে ১২ টি বাস থামানো ছিল। ঢাকা-বরিশাল রুটে চলাচলরত ভালো মানের অধিকাংশ বাসই ওই হোটেলের সামনে থামানো দেখতে পেলাম।
যাত্রীদের সেহরি খাওয়ার জন্য একসঙ্গে অনেকগুলো বাস এই হোটেলটির সামনে থামায় হোটেলটিতে অনেক ভিড় হয়ে গেল। আমি খাবারের কোনো দাম জিজ্ঞেস না করে খাওয়া শুরু করলাম কিন্তু আমার পাশে একজন যাত্রী হোটেলের বয়কে দাম জিজ্ঞেস করতেই বয় উত্তর দিল দাম লাগবে না কি খাইবেন বলেন।

কথাটা শুনে তখনও বুঝতে পারিনি বিষয়টা কী। আমি খাওয়া শেষ করে বিল দেয়ার জন্য হোটেলের ম্যানেজারের কাছে যাই।

তিনি আমাকে বিনয়ের সঙ্গে বললেন টাকা দেয়া লাগবে না। আমি বিষয়টি বুঝতে পারলাম না। তাই আবার তাকে জিজ্ঞেস করলাম কেন টাকা দেয়া লাগবে না। সে আমাকে জানাল বাবা বছরে ১১ মাস ব্যবসা করি এক মাস আল্লাহর খেদমত করি। আমি একটু অবাক হয়ে গেলাম এবং বিষয়টি ভালো করে বোঝার চেষ্টা করলাম। জানতে পারলাম তিনি হোটেলের ম্যানেজার নন, তিনি হোটেলের মালিক। রমজান মাসে কারও কাছে হোটেলের খাওয়া বাবদ কোনো টাকা গ্রহণ করেন না।

অপু খান নামে এক সাংবাদকর্মী গত ২৪ মে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একই কথা লিখেন। তিনি বলেন, রাত ৩টা ১০ মিনিটের সময় বরিশাল গৌরনদী মাতব্বর রেস্টুরেন্টে সামনে সাকুরা বাস থামে সেহরির জন্য। এখানে সেহরি খেতে বসলাম দেশী বড় মুরগীর রান দিলো খেতেও বেশ, পেট ভরেই খেলাম। বিল দিতে গেলে রেস্টুরেন্ট এর কর্মচারিরা টাকা রাখবে না, কারণ জানতে চাইলে বলে আমাদের রেস্টুরেন্টের মালিক রমজানে সেহরি ফ্রি খাওয়ান। কেমন যেনো ইতস্তোতবোধ করলাম ফ্রি খেলাম টাকা নিবে না কেমন যেনো লাগছিলো, বার বার টাকা দেবার পরও তারা রাখছে না। পাশ থেকে একজন বললো যদি দিতেই চান তাহলে আপনাকে যে ছেলে খাবার দিছে তাকে ২০ টাকা বকশিস দেন কিন্তু ঐ ছেলেও নিবে না। জোর করে ৫০ টাকা তার পকেটে দিলাম বললাম রাখেন ভাই এটা আপনার বকশিস।

যেখানে বাংলাদেশ রমজান মাসে ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুদদারি করে মূল্য বৃদ্ধি করে। ভেজাল পচা-বাসি এবং অতিরিক্ত মূল্যে পণ্য বিক্রির দায়ে ম্যাজিস্ট্রেট মোবাইলকোর্ট পরিচালনা করে নামি দামি খাবার হোটেলগুলোতে জরিমানা করেন। অন্যদিকে হাইকোর্ট ভেজাল ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে আদেশ দিতে দিতে ক্লান্ত, আর বরিশাল গৌরনদী এই হোটেলটি রমজানে সেহরী ফ্রি খাওয়াচ্ছে।