ধ্বসে মানুষ মরলে নয় পাহাড় রক্ষায় ইঞ্জিনিয়ারিং এর সঠিক ব্যবহার হলে মানুষ মরবে না পাহাড়ও রক্ষা হবে

শক্তিশালী পাহাড় রক্ষা কমিটির প্রধান ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও চয়েট ভিসি (প্রাক্তন) প্রফেসর মোজাম্মেল হক বলেছেন, পাহাড় ধ্বসে মানুষ মরলে প্রশাসন ইঞ্জিনিয়ারিং খোজে দ্রুত লাশ উদ্ধার করার জন্য। পাহাড় ধ্বস প্রতিরোধ ও পাহাড় রক্ষায় যথা সময়ে যথাযথভাবে ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রয়োগ করা হলে পাহাড় রক্ষা হবে তা ধ্বসে মানুষও মরবে না। চট্টগ্রামের পাহাড় রক্ষায় প্রয়োজন প্রশাসনিক সৎ ইচ্ছা ও সঠিক পরিকল্পনা। তিনি বলেন, বর্তমান জেলা প্রশাসক যে সাহসী উদ্যোগ নিয়েছেন তা সঠিত পরিকল্পনার মাধ্যমে নিবিড়ভাবে বাস্তবায়িত হলে নগরী এবং জেলার অবশিষ্ট পাহাড় রক্ষা করা যাবে। বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম এবং চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন যৌথভাবে আজ ১৩/৮/২২ শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তনে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, ইংরেজ কালেক্টর এ এল ক্লে নিজের আত্মজীবনীর বইয়ে চট্টগ্রামকে নিম্ন বঙ্গের সবচেয়ে সুন্দর জায়গা উল্লেখ করে বলেন, নিচু টিলা, চূড়োয় বাড়ি, পাকদণ্ডী (ঘুরপথ) বেয়ে উঠতে হয়। কোনো কোনো পাহাড়ে চমৎকার দৃশ্য দেখা যায়। ক্লে সাহেবের বর্ণিত সেই নান্দনিক পাহাড় পাকিস্তানের শুরু থেকে কাটা শুরু হয়। পাকিস্তান ২৪ বছরে কমেছে পাহাড়ের সংখ্যা। স্বাধীনতার পর ২০০৮ সাল পর্যন্ত চট্টগ্রামের ৮৮টি পাহাড় পুরোটাই বিলুপ্ত হয়েছে। একই সময়ে আংশিক কাটা হয়েছে ৯৫টি। এরপরের ১২ বছরে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিয়েছে। শহরের জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পাহাড় নিধন। বেশির ভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার মতিঝরনা, ষোলশহর এবং ফয়’স লেকে। ১৯৭৬ থেকে ৩২ বছরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয় বলে গবেষণায় উল্লেখ করেন। এতে বলা হয়, বেশির ভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার মতিঝরনা, ষোলশহর এবং ফয়’স লেকে। ১৯৭৬ থেকে ৩২ বছরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয় বলে গবেষণায় উল্লেখ করেন।

এতে বলা হয়, বেশির ভাগ পাহাড় কাটা হয় পাহাড়তলী, খুলশী, বায়েজিদ, লালখান বাজার মতিঝরনা, ষোলশহর এবং ফয়’স লেকে। ১৯৭৬ থেকে ৩২ বছরে চট্টগ্রাম নগর ও আশপাশের ৮৮টি পাহাড় সম্পূর্ণ এবং ৯৫টি আংশিক কেটে ফেলা হয় বলে গবেষণায় উল্লেখ করেন। চট্টগ্রাম মহানগরীর বাইরে জঙ্গল সলিমপুর এবং আলীনগরে ২০০০ সাল থেকে গত ২২ বছরে অর্ধ শতাধিক পাহাড় সংঘবন্ধভাবে নিধন করা হয়েছে। এখানে সরকারের খাস খতিয়ান ভুক্ত পাহাড় ছিল ৩ হাজার ১শত একর। কিন্ত গত ২ যুগের মধ্যে ৪০ থেকে ৫০জনের চিহ্নিত ভূমিদস্যু বাহিনী চট্টগ্রামের এই জঙ্গল সলিমপুর এবং আলিনগর এলাকার পাহাড় কেটে আলাদা এক সাম্রাজ্য তৈরি করেছে । গত (২ আগস্ট) মঙ্গলবার চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান এবং পুলিশ সুপার এস এম রশিদুল হকের উপস্থিতিতে উচ্ছেদ অভিযান চালিয়ে পাহাড়ে ঝুকিপূর্ণ ১৭৫টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ৭০০ একর পাহাড়ি জমি উদ্ধার করাহয়। জঙ্গল সলিমপুরে যেটুকু পাহাড় কাটা হয়েছে সেটুকুতেই সরকারের মহাপরিকল্পনা হিসাবে জেলা কারাগার, ক্রীড়া কমপ্লেক্স প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে বলে জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়। উক্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন ও পাহাড় নদী রক্ষায় সংবাদ সম্মেলনে সাত দফা সুপারিশ করা হয়, যা হচ্ছে, মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশ অনুসারে জঙ্গল সলিমপুর ও আলিনগর সহ চট্টগ্রাম মহানগরের বিভিন্ন পাহাড়ে গড়ে তোলা সকল অবৈধ বসতি দ্রুত উচ্ছেদ করা। সেই সাথে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারাদেশে ভূমিহীনদের যেভাবে জায়গা সহ ঘর উপহার দিচ্ছেন সেই নিয়মে চট্টগ্রামের পাহাড় থেকে উচ্ছেদ করা প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘরসহ পুন:র্বাসন করা। উদ্ধার করা বিশাল পাহাড়ি ভূমির কোন অংশে কিংবা সরকারী জমিতে কক্রবাজারের আদলে বহুতল ভবন তৈরী করে প্রকৃত ভূমিহীনদের পুন:র্বাসন করা। মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুসারে বিগত ডিসেম্বর ২০২১ সালে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক প্রদত্ত উচ্ছেদ নোটিশ অনুযায়ী দেশের অর্থনীতির হৃদপিন্ড কর্ণফুলী নদীর দু’পাড়ে অবৈধভাবে গড়ে তোলা সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করা। চট্টগ্রাম শহরের শত শতটন বজর্য ও পলিথিন কর্ণফুলী নদীতে পড়তে না পারে সে বিষয়ে কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ তা বাস্তবায়ন করা। বিশ্বের অন্যতম প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র হালদা নদীর মা মাছ রক্ষা, দুষণ রোধ এবং বিপন্ন প্রজাতির ডলফিল রক্ষায় কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া। আর এস সীট অনুসারে চট্টগ্রাম শহরের ৭১টি খাল চিহ্নিত করে বিলুপ্ত এবং দখল করা সকল খাল উদ্ধার করা। চট্টগ্রামে বর্তমানে টিকে থাকা পাহাড়গুলো রক্ষায় জেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর, সিডিএ, সিটি কর্পোরেশন এক হয়ে ২০০৭ সালে শক্তিশালী পাহাড় রক্ষর কমিটি প্রদত্ত সুপারিশ অনুযায়ী সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম ও চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন, সিনিয়র সাংবাদিক বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের উপদেষ্টা কাজী আবুল মনসুর, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের উপদেষ্টা প্রফেসর ড.মঞ্জরুল কিবরিয়া, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলের সভাপতি ও বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের উপদেষ্টা চৌধুরী ফরিদ, বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরামের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডাক্তার মাহমুদুল হাসান সোহেল ও অধ্যাপক প্রদীপ কুমার দাশ, সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম পেয়ার আলী প্রমুখ।