অবক্ষয়ের যুগে শুদ্ধ রাজনৈতিক মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী ও জহুর আহমদ চৌধুরী স্মরণে।

সোহেল মো. ফখরুদ-দীন:

মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মন্ত্রিসভার সদস্য। শ্রম আন্দোলনের সাথে তিনি জড়িত ছিলেন। শুদ্ধ রাজনীতির প্রতিকৃত মরহুম জহুর আহমদ চৌধুরী। জহুর আহমদ চৌধুরী চট্টগ্রামের কৃতিপুরুষ মাওলানা ইসলামাবাদী সম্পর্কে লিখেছেন, ” শ্রদ্ধেয় মাওলানা ইসলামাবাদী ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামের একজন বীরযোদ্ধা ও প্রকৃত দেশপ্রেমিক। তাঁকে একদিকে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদ অন্যদিকে এক শ্রেণীর আলেম ও স্ব-সমাজের স্বার্থপর লোকদের বিরুদ্ধে আপোষহীন সংগ্রাম করতে হয়েছিলো।
ইসলামের আদর্শ ব্যক্তি সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কায়েম করার জন্য তিনি পাগলের ন্যায়ে কাজ করে গেছেন।
তাঁর পুত্র মরহুম সুফীর সাথে আমার বন্ধুত্ব ছিলো। ইসলামাবাদীর কলকাতার বাসভবনে তাঁর সাথে আমার পরিচয়। আমরা দেশ সেবকদের সম্মান দিতে জানিনা। আমরা ভুলে গেছি দেশপ্রিয় যতীন্দ্র মোহন সেনগুপ্তকে, শাহ মোহাম্মদ বদিউল আলমকে, কাজেম আলী মাস্টার প্রমুখকে।
কংগ্রেসে মাওলানা ইসলামাবাদী সম্মানজনক পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। একবার আসামে কংগ্রেস সম্মেলনে মাওলানা হোসাইন আহম্মেদ মাদানী সাহেবকে মাওলানা ইসলামাবাদী বেশ কিছুদূর অগ্রসর হয়ে অভ্যর্থনা জানান। আসামের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শ্রী বরদলুই এ বিষয়টি মহত্মা গান্ধীর নিকট উত্থাপন করেন। মহত্মা গান্ধী বলেন, ” মাওলানা ইসলামাবাদীর হৃদয় প্রশান্ত মহাসাগরের মতো। মাওলানা মাদানীকে সম্মান প্রদর্শনের অর্থ নিশ্চয় আমাদের কারো প্রতি অশ্রদ্ধা প্রদর্শন নয় “। আরবি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা তিনি করেছিলেন।
ইসলামের আদর্শে মানুষ গড়ে তোলাই ছিলো তাঁর লক্ষ্য। শুধু দেশবাসী নয় বহু নেতাও তাঁর কাছে ঋণী। কৃষক প্রজাদলের সহ – সভাপতি ও পরিষদের সহাকারী নেতা হিসেবে তিনি শের-ই – বাংলাকে সব সময় উত্তম পরামর্শ দিতেন। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসুর সাথে তাঁর ছিলো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক। তিনি তাঁকে মোহাম্মদি পঞ্জিকা কিনে উপহার দিয়েছিলেন। দেশকে সশস্ত্র সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীন করার জন্য নেতাজির ভারত ত্যাগের সংবাদ তিনি জানতেন। তাই পরের দিন তাঁর বাসভবনে দেখি মাওলানা ইসলামাবাদী খুবই চিন্তামগ্ন। সেদিন কিন্তু কথা বলার সাহস পায়নি।
আমরা যদি মাওলানা সাহেবকে ভুলে যায়, তবে তাঁদের প্রতি চরম অবিচার হবে৷ তাঁর মহান স্মৃতি রক্ষা করা আমাদের মহান কর্তব্য। “
( ১৯৭৪ সালে ২৪ মার্চ ঢাকায় মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর স্মরণে আয়োজিত বাংলাদেশ সমাজ কল্যাণ সমিতির সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে চট্টল কৃতি পুরুষ মন্ত্রি জহুর আহমেদ চৌধুরী লিখিত ভাষন।)। এই প্রবন্ধের সাথে আলোচিত বিখ্যাত রাজনীতিবিদের সাথে মাওলানা মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদীর সম্পর্ক ছিলো, শুধু তাঁদের আলোকচিত্র দিয়ে ইসলামাবাদীর একটি পোস্টার তৈরি করা হয়েছে।
আসুন হে লেখক, গবেষক, ইতিহাসবিদ,শিক্ষাবিদ, রাজনীতিবিদ ও চট্টগ্রাম, চন্দনাইশের আর্দশ অনুস্মরন কারী ব্যক্তিবর্গ, আমি, আপনি একটু হলেও এই মনীষীর জীবন চর্চা করে বর্তমান প্রজন্মকে শুদ্ধ পথের সন্ধানে গড়েতোলতে চেষ্টা করি।

লেখকঃ সোহেল ফখরুদ-দীন, সভাপতি,চট্টগ্রাম ইতিহাস চর্চা কেন্দ্র ( সিএইচআরসি) , বহু গ্রন্থ প্রনেতা।
.

..