চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির পক্ষ থেকে আজ ১৯ ফেব্রুয়ারী মঙ্গলবার দুপুর ১১ টায় নাসিমনভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ে জিয়া স্মৃতি যাদুঘর প্রসঙ্গ ও দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিষয়ে লিখিত বক্তব্য রাখেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবুল হাশেম বক্কর। লিখিত বক্তব্যে ডাঃ শাহাদাত হোসেন জানান, দেশের বর্তমান প্রেক্ষাপট ও সর্বশেষ রাজনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে আপনারা অবগত রয়েছেন। বিগত ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারী থেকে বর্তমান সরকারের রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে এই দেশের গণতান্ত্রিক অভিযাত্রার আপোষহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে কারাগারে বন্দি করা রাখা হয়েছে। বিএনপি ও বিরোধীমত ধমন করার জন্য বিএনপির লক্ষ লক্ষ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হামলা, গ্রেফতার ও নির্যাতন এখনো অব্যাহত রেখেছে। শত জুলুম নির্যাতন সত্ত্বেও গণতন্ত্র রক্ষার স্বার্থে বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট বিগত ৩০ ডিসেম্বর একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেয়। কিন্ত প্রশাসন ও নির্বাচন কমিশনের একপেষে ভূমিকার কারণে এই নির্বাচন সহিংসতাপূর্ণ এবং প্রহসনের নির্বাচনে পরিণত হয়। ক্ষমতাসীনদের বিরোধী প্রার্থীদের উপর বল প্রয়োগ, প্রশ্নবিদ্ধ ও ত্রুটিপূর্ণ এই নির্বাচনে সব দলের জন্য সমান সুযোগের পরিবেশ তৈরী করতে পারেনি নির্বাচন কমিশন। ভোটের আগের দিন ২৯ ডিসেম্বর রাতেই প্রশাসনের সহায়তায় আওয়ামীলীগের নেতাকর্মীরা ব্যালেটে সীল মেরে ব্যালেট বাক্স ভর্তি করে রাখে। বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সীল মেরে জাল ভোট প্রদান করে। পোলিং এজেন্ট ও ভোটারদেরকে কেন্দ্রে যেতে বাঁধা দেয় এবং কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়। ভোটারদের জোর করে নৌকা মার্কার পক্ষে ভোট দিতে বাধ্য করা হয়। বিএনপি প্রার্থীর কর্মীদেরকে পুলিশের সামনেই মারধর করে কেন্দ্র থেকে তাড়িয়ে দেয়। কলংকিত এ নির্বাচনে আওয়ামীলীগকে বিজয়ী দেখানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে ডাঃ শাহাদাত হোসেন আরো জানান, আওয়ামীলীগ মহা জালিয়াতি ও ভোট ডাকাতির এই নির্বাচনের দৃষ্টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতেই চট্টগ্রামের কাজীর দেউড়ীস্থ জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের নাম পরিবর্তন করার জন্য মন্ত্রী সভায় প্রস্তাব তুলে। নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব তোলার পরের দিন ১২ ফেব্রুয়ারী মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের ছাত্রফোরামের নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে কিছু চিহ্নিত সন্ত্রাসী জিয়া যাদুঘরের নামফলক থেকে প্রকাশ্যে শহীদ জিয়ার নাম মুছে ফেলে। তারা শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চট্টগ্রামের সাবেক মেয়র এ.বি.এম মহিউদ্দিন চৌধুরীর পুত্র ব্যারিষ্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ছবি সম্বলিত একটি ব্যানার টাঙিয়ে দেয়। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত একটি সরকারী প্রতিষ্ঠানে এভাবে দিনের বেলায় নামফলক মুছে ফেলার সময় পুলিশ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে। পরদিন পুলিশের উপস্থিতিতে জিয়া স্মৃতি জাদুঘরের সামনে অবস্থিত শহীদ জিয়ার ম্যুরালে কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয়। যা একজন সেক্টর কমান্ডারের অপমান নয়, পুরো মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান। এত কিছু ঘটনা ঘটার পরও প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এতেই বুঝা যায় দিনের বেলায় এ ধরনের ঘটনা রাষ্ট্রযন্ত্রের মদদ ছাড়া সম্ভব নয়।
লিখিত বক্তব্যে ডাঃ শাহাদাত হোসেন জানান, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান বাংলাদেশের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। তিনি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের একটি সেক্টরের কমান্ডার ও জেডফোর্সের অধিনায়ক হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করেন। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার ঘোষক জিয়াউর রহমান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছেন, আবার নিজে অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করেছেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে শেখ মুজিবুর রহমানের সরকার মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদান রাখায় জিয়াউর রহমানকে বীর উত্তম উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। অসাধারণ দেশপ্রেমিক, অসীম সাহসিকতা, সততা, নিষ্ঠা ও সহজ-সরল ব্যক্তিত্বের প্রতীক জিয়াউর রহমান দেশের জন্য অসমান্য অবদান রেখেছিলেন। দেশের এক চরম ক্রান্তিকালে সিপাহী-জনতার মিলিত প্রয়াসে জিয়াউর রহমান দেশের হাল ধরেছিলেন। রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি দেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা, বাক-ব্যক্তি স্বাধীনতা, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করেছিলেন। দেশকে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করতে আমৃত্যু চেষ্টা চালিয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশ ও বাংলাদেশীদের বিশ্ব মানচিত্রে ব্যাপকভাবে পরিচিত করিয়েছেন স্বাতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে। জাতির মার্যদাকে বিশ্বব্যাপি প্রশংসিত করিয়েছেন তার শাসন আমলে। তার সৈনিক ও রাজনৈতিক জীবনের সততা, নিষ্ঠা ও নিরলস পরিশ্রম প্রতিটি মানুষ শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করে। একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক হিসেবেও তার পরিচিতি সর্বজনবিদিত। দেশের সকল সংকট মুহূর্তে তিনি ত্রাণকর্তা হিসেবে বার বার অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আমরা মনে করি, সরকার প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়েই সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ এমন একজন যুগ¯্রষ্টা ব্যক্তির বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে ডাঃ শাহাদাত হোসেন জানান, আওয়ামীলীগ নেতারা মুখে শুধু মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা বলে কিন্তু আসলে তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনায়ই বিশ্বাস করে না। সেইজন্য একজন সেক্টর কমান্ডার ও মুক্তিযোদ্ধার নামে প্রতিষ্ঠিত জিয়া যাদুঘরের নাম পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত ও নামফলক মুছে ফেলার মত ধৃষ্টতা স্থাপন করে গোটা মুক্তিযুদ্ধকে অপমানিত করেছে। তাদের এই উচ্ছৃংখল কর্মকান্ড বাংলাদেশের রাজনীতিকে বিপজ্জনক যুগে নিয়ে যাচ্ছে।
লিখিত বক্তব্যে ডাঃ শাহাদাত হোসেন জানান, আধুনিক বাংলাদেশের রূপকার ও বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের স্মৃতিবিজড়িত স্থান চট্টগ্রামের সার্কিট হাউস। এই সার্কিট হাউসেই তিনি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছিলেন। সার্কিট হাউসের সাথে শহীদ জিয়ার রক্ত মিশে আছে। নামফলক থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেললেও বাংলাদেশের মানুষের হৃদয় থেকে জিয়ার নাম মুছে ফেলা যাবে না। চট্টগ্রামের জনগণ সরকারের এ হঠকারী সিদ্ধান্ত কখনোই মেনে নেবে না। আমরা অবিলম্বে জিয়া স্মৃতি যাদুঘরের নাম ফলকে পুনরায় শহীদ জিয়ার নাম স্থাপন করে নাম পরিবর্তনের সরকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের আহবান জানাচ্ছি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীর প্রতীক, কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম বিষয়ক সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দিন, চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট বদরুল আনোয়ার, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সিঃ সহ সভাপতি মোহাম্মদ আবু সুফিয়ান, দক্ষিণ জেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি অধ্যাপক শেখ মহিউদ্দিন, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ সভাপতি আলহাজ্ব এম এ আজিজ, সাবেক কমিশনার মাহবুবুল আলম, চট্টগ্রাম মহানগর কল্যাণ পার্টির সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ ইলিয়াস, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আনোয়ার হোসেন লিপু, সাহেদ বক্স, সাংগঠনিক সম্পাদক কামরুল ইসলাম, চট্টগ্রাম জেলা জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরামের সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট জহুরুল আলম, নগর মহিলা দলের সভাপতি কাউন্সিলর মনোয়ারা বেগম মনি, সাধারণ সম্পাদক জেলী চৌধুরী, কোতোয়ালী থানা বিএনপির সভাপতি মনজুর রহমান চৌধুরী, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক মোঃ ইদ্রিস আলী, সহশ্রম বিষয়ক সম্পাদক আবু মুসা, বাংলাদেশ ন্যাপ চট্টগ্রাম মহানগরের সভাপতি ওসমান গণি সিকদার, চকবাজার থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নূর হোসেন, সদস্য ইউসুফ সিকদার, আলী ইউসুফ প্রমুখ। চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সভাপতি ডাঃ শাহাদাত হোসেন বলেন, আগামী ২৪ ফেব্রুয়ারীর মধ্যে জিয়া স্মৃতি যাদুঘরের নামফলকে শহীদ জিয়ার নাম পুনরায় স্থাপন করার জন্য চট্টগ্রামের প্রশাসনের প্রতি দাবী জানান। অন্যথায় ২৫ ফেব্রুয়ারী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারকে স্মারকলিপি প্রদান এবং ২৬ ফেব্রুয়ারী জিয়া স্মৃতি যাদুঘরের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হবে।