একই পরিবারের ৪ জনকে জবাই করে হত্যা

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় একই পরিবারের ৪ জনকে জবাই করে হত্যা করা হয়েছে। বুধবার রাতে কোনো এক সময় দুর্বৃত্তরা স্বামী-স্ত্রী ও তাদের দুই সন্তানকে হত্যা করে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায়।

উপজেলার হেলাতলা ইউনিয়নের খলসি গ্রামে বৃহস্পতিবার ভোররাতে এই নৃশংস ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন- খলসি গ্রামের শাহাজান আলীর ছেলে হ্যাচারি মালিক শাহীনুর রহমান (৪০), তার স্ত্রী সাবিনা খাতুন (৩০), ছেলে সিয়াম হোসেন মাহি (৯) ও মেয়ে তাসনিম (৬)। ঘাতকরা ৪ মাসের শিশু মারিয়া সুলতানাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দোলনায় রেখে যায়।

এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে একটি পুকুর থেকে মা ও তার দুই শিশু সন্তানের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। বৃহস্পতিবার সকালে জেলার রানীশংকৈল উপজেলার ধর্মগড় ইউনিয়নের ভরনিয়া শিয়ালডাঙ্গী গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। মৃত ব্যক্তিরা হলেন- গ্রামের আকবর আলীর স্ত্রী আরিফা খাতুন (৩২), তার মেয়ে আকলিমা আক্তার আঁখি (১০) ও আরাফাত রহমান (৫)।

এছাড়া বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় বারপাড়া গ্রামের একটি ফাঁকা মাঠে দুই তরুণকে কুপিয়ে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। নিহতরা হলেন- যশোর সদর উপজেলার জায়ন্তা গ্রামের মুক্তার গাজীর ছেলে বাদল (২৪) ও একই গ্রামের লোকমান হোসেনের ছেলে আবদুল আহাদ আলী (২৫)। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর।

সাতক্ষীরা : প্রতিবেশীরা ভোরে চিৎকার শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। পরে ঘরের দরজা খুলে দেখতে পান সাবিনা খাতুন, তাসনিম ও মাহির লাশ একঘরে এবং আরেক ঘরে শাহীনুরের জবাই করা লাশ পড়ে আছে।

কলারোয়া থানার উপপরিদর্শক মফিজুল ঘটনাস্থল থেকে জানান, নিজ ঘরে গৃহকর্তা শাহিনুর রহমানসহ ৪ জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। শাহিনুরের পা বাঁধা ছিল এবং তাদের চিলেকোঠার দরজা খোলা ছিল। ধারণা করা হচ্ছে, ছাদের চিলেকোঠার দরজা দিয়ে ঘাতকরা ঘরে প্রবেশ করে।

ঘটনার রহস্য উন্মোচনে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। নিহত শাহীনুরের ছোট ভাই রায়হানুল ইসলাম জানান, বাড়িতে মা ও বড় ভাইয়ের পরিবারের চারজনসহ তারা ছয়জন থাকতেন। মা কাল আত্মীয়ের বাড়িতে ছিলেন।

আমি ছিলাম পাশের ঘরে। ভোরে বাচ্চাদের গোঙানির শব্দ শুনতে পেয়ে তাৎক্ষণিক এগিয়ে গিয়ে দেখি বাইরে থেকে দরজা আটকানো। দরজা খুলে দেখি রক্তাক্ত পড়ে আছে তারা। এর কিছুক্ষণ পর বাচ্চারাও মারা যায়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

রায়হানুল জানান, তার বড় ভাই শাহীনুর নিজের ৭-৮ বিঘা জমিতে পাঙ্গাশ মাছ চাষ করতেন। ২২ বছর ধরে তাদের পারিবারিক জমি নিয়ে নিকট-প্রতিবেশী ওয়াজেদ কারিগরের ছেলে আকবরের সঙ্গে মামলা চলছিল। কিন্তু কারা এ ঘটনা ঘটাল তা বুঝতে পারছি না। নিহত শাহীনুরের মা শাহিদা খাতুন আহাজারি করে বলেন, আমার ছেলে বৌমা হত্যাকারীদের চিনতে পারায় একে একে সবাইকে জবাই করে হত্যা করেছে। তিনি এই নৃশংস ঘটনার বিচার দাবি করেন।

লাশের সুরতহাল রিপোর্ট তৈরিকারী কলারোয়া থানার এসআই ইস াফিল জানান, নিহত শাহীনুরের হাত-পা বেঁধে ঘরের খাটের ওপর উপুড় করে হত্যা করা হয়। তার পায়ের রগকাটা হয়। মাথায় ধারালো অস্ত্রের আঘাত আছে। শাহীনুরের স্ত্রী ও সন্তানদের লাশ পাশের কক্ষে পাওয়া যায়। তাদের সবাইকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলার শ্বাসনালি কেটে দেয়া হয়।

কলারোয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্বে) হারান চন্দ্র পাল জানান, এখনও হত্যার প্রাথমিক কারণ জানা যায়নি। এ ঘটনায় কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। তবে হত্যার মোটিভ উদঘাটনে থানা পুলিশসহ গোয়েন্দা সংস্থার একাধিক টিম কাজ শুরু করেছে।

ময়নাতদন্তের জন্য লাশগুলো সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে সিআইডির ক্রাইম সিন, গোয়েন্দা পুলিশ, ডিএসবি, র‌্যাব এবং অন্যান্য গোয়েন্দা বিভাগের কর্মকর্তারা প্রয়োজনীয় আলামত সংগ্রহ করেছেন বলে তিনি জানান। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এই দুঃখজনক ঘটনার তদন্তে নেমেছি আমরা। হত্যাকরীদের অবিলম্বে খুঁজে বের করে সর্বোচ্চ শাস্তি দেয়া হবে। ঘাতক যেই হোক তারা রক্ষা পাবে না।

এদিকে চার মাস বয়সী আহত শিশু মারিয়াকে ইউপি সদস্য নাসিমা খাতুনের জিম্মায় রেখেছেন সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক এসএম মোস্তফা কামাল। শিশুটির চিকিৎসা এবং জীবন গড়ার যাবতীয় দায়িত্ব তিনি গ্রহণ করেছেন বলে ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘোষণা দেন।

ঠাকুরগাঁও : ঠাকুরগাঁওয়ে মা ও তার দুই সন্তানের লাশ উদ্ধারের এ ঘটনায় মৃত নারীর স্বামী আকবর আলী, শ্বশুর সিরাজুল ইসলাম, শাশুড়ি মনোয়ারা বেগম, দেবর বাবর আলী ও ননদ ইয়াসমিনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

রানীশংকৈল থানার ওসি এসএম জাহিদ ইকবাল এ তথ্য নিশ্চিত করলেও তবে কীভাবে তাদের মৃত্যু হয়েছে সে বিষয়ে কোনো ধারণা দিতে পারেননি তিনি। ওসি জাহিদ ইকবাল বলেন, ‘সকালে আকবর আলীর বাড়ির সামনে একটি পুকুরে একজন নারী ও তার দুই সন্তানের লাশ ভাসতে দেখে গ্রামবাসী থানায় খবর দেয়। পরে লাশ উদ্ধার করা হয়।’ আরিফার স্বামী আকবর আলী বলেন, ‘আমার বাবা আমার কাছে কিছু টাকা পেত, এ নিয়ে আগের রাতে স্ত্রীর সঙ্গে ঝগড়া হয়।

গভীর রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙে গেলে স্ত্রী ও সন্তানদের দেখতে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করি। ‘বাড়িতে না পেয়ে সকালে ভরনিয়া পূর্বপাড়ায় শ্বশুরবাড়িতে খোঁজ নিই। কিন্তু সেখানেও না পেয়ে বাড়িতে ফিরে আসি। পরে বাড়ির সামনে পুকুরে তাদের লাশ দেখতে পাই।

১৩-১৪ বছর আগে আকবরের সঙ্গে আরিফার বিয়ে হয় জানিয়ে বাবা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘স্থানীয়দের মাধ্যমে প্রায় সময় শুনতাম মেয়ে ও জামাইয়ের মাঝে ঝগড়া হতো। মাঝে মধ্যে টাকার জন্য জামাই আমাদের ওপর চাপ প্রয়োগ করত।’

ধর্মগড় ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য মাইনুদ্দিন জানান, আরিফার স্বামী এলাকার জিনিসপত্র ফেরি করে সংসার চালাত; তাদের অভাবের সংসার ছিল। আর এই অভাব নিয়েই তাদের সংসারে ঝগড়াঝাঁটি লেগেই থাকত। রানীশংকৈল সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার তোফাজ্জল হোসেন বলেন, ‘মৃতের নাক ও মুখে ফেনা দেখা গেছে; এটি বিষক্রিয়ার কারণেও হতে পারে। তবে এটা হত্যা না আত্মহত্যা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি।’

যশোর ও মনিরামপুর : বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় যশোরের মনিরামপুরে নিহত বাদল ও আহাদ আলী একটি ক্যাবল অপারেটর প্রতিষ্ঠানের কর্মী ছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, ক্যাবল ব্যবসাকে কেন্দ্র করে বিরোধের জেরে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যশোরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, উপজেলার বারপাড়া গ্রামের ফাঁকা মাঠে ডিশলাইনের কাজ করছিলেন বাদল ও আহাদ।

অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জখম করে। ঘটনাস্থলেই বাদলের মৃত্যু হয়। স্থানীয় লোকজন আবদুল আহাদকে উদ্ধার করে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করে। কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, জড়িতদের চিহ্নিত করতে পুলিশ কাজ করছে। মনিরামপুর থানার ওসি, ডিবি পুলিশ ঘটনাস্থলে গেছে। খুব শিগগির ঘটনার কারণ ও জড়িতদের চিহ্নিত করা সম্ভব হবে।