নাম, মোবাইল নাম্বার ও ছবি যুক্ত রেল টিকিটে

রেলওয়েতে বিশাল পরিবর্তন আসছে। এ পরিবর্তনের ফলে একজন যাত্রী ৩ মাস আগেও ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন।
যিনি টিকিট কাটবেন, টিকিটে তার নাম ও মোবাইল নাম্বার দেওয়া থাকবে। এতে কেউ অন্যের টিকিট নিয়ে ভ্রমণ করতে পারবেন না। এরফলে শতভাগ কালোবাজারি মুক্ত হচ্ছে রেলওয়ে।

ইতোমধ্যে এ ধরনের একটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পের সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, আগামী ৩ মাসের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। কাজ শেষ হলে টিকিট ব্যবস্থায় উন্নত দেশের কাতারে পৌঁছবে রেলওয়ে।

রেলওয়ের সূত্র জানায়, কালোবাজারি রুখতে ২০১৯ সালের ২৮ এপ্রিল চালু হয় ‘রেলসেবা’ মোবাইল অ্যাপ। এ অ্যাপের মাধ্যমে ৫০ শতাংশ টিকিট কাটতে পারতেন যাত্রীরা। কিন্তু এরপরও কালোবাজারি দৌরাত্ম্য কমেনি।

জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) বা জন্ম নিবন্ধন ব্যবহার করে ‘রেলসেবা’ অ্যাপে নিবন্ধন করা যেতো। একই আইডি থেকে একবারে চারটি আসনের জন্য টিকিট সংগ্রহ করা যায়। কিন্তু সমস্যাটা হলো এনআইডি দিয়ে টিকিট কাটলেও অ্যাপে ভেরিফেকশন হতো না।

যেকোনো নাম্বার দিয়ে ভেরিফেকশন করে টিকিট কাটা যায় এই অ্যাপে। ফলে অ্যাপে কয়েক মিনিটের মধ্যে টিকিট হাওয়া হয়ে যেতো। কালোবাজারি এ সুযোগে অতিরিক্ত টিকিট কেটে বেশি মূল্যে যাত্রীদের বিক্রি করতেন। ফলে কালোবাজারি বন্ধ করতে যেজন্য অ্যাপ চালু করা হয়েছিলো, সেটি শতভাগ বাস্তবায়ন হয়নি।

যেভাবে কালোবাজারি মুক্ত হচ্ছে রেলওয়ে রেলওয়ের যে পরিবর্তন নিয়ে মাঠে নেমেছে তা হলো রেলসেবা অ্যাপে সিস্টেমের পরিবর্তন। ব্যাংক বা সিম কেনার সময় এনআইডি যেভাবে ভেরিফেকশন হয় ঠিক ওইভাবে টিকিট নেওয়ার সময় ভেরিফাই হবে। একজন যাত্রী যখন টিকিট কাটবেন তখন তার নাম, মোবাইল নাম্বার ও ছবি রেল সার্ভারে চলে আসবে।

টিকিট কাটার পর টিকিটে তার নাম ও মোবাইল নাম্বার দেওয়া থাকবে। যাত্রী যখন ওই টিকিট নিয়ে ট্রেনে উঠতে যাবেন তখন চেকিংয়ের দায়িত্বে যিনি থাকবেন তার কাছে একটি ডিভাইস থাকবে। ওই ডিভাইসে যাত্রী যে নাম্বার দিয়ে টিকিট কেটেছেন ওই নাম্বার দিলেই তার ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য চলে আসবে। তখন টিকিট চেকার বুঝতে পারবেন ওই টিকিটের মালিক তিনি কি-না?

রেলওয়ের এ সিস্টমটি নিয়ে ইতোমধ্যে কাজ করছে। আগামী ৩ মাসের মধ্যে এ কাজটি শেষ হবে। যখন রেলওয়ে এ সিস্টেমে যাবে তখন শতভাগ দুর্নীতিমুক্ত হবে বলে দাবি করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

এসব বিষয় নিয়ে সোমবার বিকেলে বিস্তারিত কথা হয় রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (আইন ও ভূমি অনুবিভাগ) মো. মাহবুব কবীরের সঙ্গে।

মো. মাহবুব কবীর বলেন, আমি রেলওয়েতে যোগ দেওয়ার আগে কাজের প্রয়োজনে অনেক উন্নত দেশে ঘুরেছি। সেখানে রেলওয়েরে ট্রেনের টিকিট যাত্রীরা ৩ মাস আগেও কাটতে পারেন। কারণ সিস্টেম ওইভাবে করা। টিকিটের মধ্যেই নাম, মোবাইল নাম্বার। আর তার মোবাইল নাম্বার দিয়ে চেকিং করলেই যাত্রীর ছবিসহ বিস্তারিত চলে আসে। সুতরাং সেসব দেশে একজনের টিকিট নিয়ে অন্যজনের ভ্রমণ করার সুযোগ নেই।

তিনি বলেন, আমি রেলওয়েতে যোগ দেওয়ার পর এ সিস্টেম নিয়ে কাজ করতে চেষ্টা করছি। মন্ত্রী মহোদয় এটির অনুমোদনও দিয়েছেন। এতোদিন অনলাইনে ভুয়া নাম্বার দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটা যেতো। এ সিস্টেমে নিয়ে আসলে ভুয়া নাম্বার দিয়ে ট্রেনের টিকিট কাটা যাবে না।

‘যার টিকিট তার ছবিসহ বিস্তারিত তথ্য রেলওয়ের সার্ভারে জমা থাকবে। টিকিট চেকার যাত্রীর মোবাইল নাম্বার দিয়ে স্মার্ট ডিভাইসের মাধ্যমে ছবিসহ ভেরিফাই করতে পারবেন। ’

বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করা মাহবুব কবীর বলেন, ইতোমধ্যে আমরা কাজ শুরু করেছি। আগামী ৩ মাসের মধ্যে এ কাজ শেষ হবে। কাজ শেষ হলে ৩ মাস আগেও ট্রেনের টিকিট কাটতে পারবেন যাত্রীরা। যাত্রীরা যেকোনা সময় যেকোনো মুহূর্তে টিকিট কাটতে পারবেন। >>বাংলা নিউজ