রাবিপ্রবিতে ‘বৈশ্বিক র‍্যাংকিং প্রক্রিয়া’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত

রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবিপ্রবি) ‘বৈশ্বিক র‍্যাংকিং প্রক্রিয়া’ বিষয়ক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসিউরেন্স সেল (আইকিউএসি) ও রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন মেনেজমেন্ট সেলের (আরআইএমসি) যৌথ উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) সকাল ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ভবন-১-এর সভাকক্ষে এ সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়।

এতে সভাপতিত্ব করেন ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আতিয়ার রহমান। সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- নোবিপ্রবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক এবং সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নোবিপ্রবির র‍্যাংকিং ও স্ট্র্যাট্যাজিক ডেভেলপমেন্ট সেলের অতিরিক্ত পরিচালক ও ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাহাদ হুসাইন।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন রাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) ও ম্যানেজমেন্ট বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক জুনাইদ কবির। তিনি আগত অতিথিদের রাবিপ্রবিতে স্বাগত জানান এবং বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে নোবিপ্রবির সাফল্যের জন্য অভিনন্দন জ্ঞাপন করেন।

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তাদের পথ অনুসরণ করে রাবিপ্রবিও অদূর ভবিষ্যতে বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে স্থান করে নেবে।

তিনি আরও বলেন, আজকের এ সেমিনার থেকে আমরা যে দিক-নির্দেশনা ও পরামর্শ পাব তা অনুসরণ করে এগিয়ে যাওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাব। অতঃপর রাবিপ্রবির রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন মেনেজমেন্ট সেলের (আরআইএমসি) পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) ও ফিশারিজ অ্যান্ড মেরিন রিসোর্সেস টেকনোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. আবদুল্লাহ আল মামুন আরআইএমসির ফাংশন ও কার্যক্রম সর্ম্পকে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা তুলে ধরেন; যা রাবিপ্রবিকে বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ে উত্তরণ ঘটাতে সমর্থ হবে এবং কিভাবে নিজেদের মেধাভিত্তিক কর্মসমূহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে তুলে ধরা যায় তার প্রক্রিয়াগত বিষয়াদি উপস্থাপন করেন।

সেমিনারের মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নোবিপ্রবির র‍্যাংকিং ও স্ট্র্যাটেজিক ডেভেলপমেন্ট সেলের অতিরিক্ত পরিচালক ও ফার্মেসি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. ফাহাদ হুসাইন। তিনি তার উপস্থাপিত দীর্ঘ প্রবন্ধে একটি বিশ্ববিদ্যালয়কে কিভাবে বৈশ্বিক র‍্যাংকিংয়ের উত্তীর্ণ করা যায় তার আন্তর্জাতিক প্রক্রিয়াসমূহ ও পদ্ধতিসমূহ নিয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে বিস্তারিতভাবে প্রাঞ্জল ভাষায় উপস্থাপন করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈশ্বিক র‍্যাংকিং কী, কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের র‍্যাংকিং প্রয়োজন, সমাজে ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে র‍্যাংকিংয়ের প্রভাব, কিউএস এশিয়া ও কিউএস ওয়ার্ল্ড বিষয়ে এবং কিউ-১ কিউ-২ গবেষণা ও প্যাটেন্ট তৈরি করার বিষয়ে তত্ত্বগত আলোচনা করেন।

এগুলো অর্জন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সব বিভাগ, দপ্তর, শিক্ষার্থী, অ্যালামনাইয়ের দাপ্তরিক তথ্য এবং শিক্ষক-গবেষকরা গুণগতমান সমৃদ্ধ স্কোপাস গবেষণা ও বিভিন্ন সংশ্লিষ্ট প্রজেক্ট গ্রহণ করার উদ্যোগের কথা বলেন এবং তা সমাজে কী ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনছে অর্থাৎ একাডেমিক শিক্ষা কার্যক্রম ও গবেষণা কার্যক্রমের বহুমাত্রিক তথ্য সংগ্রহ করে বৈশ্বিক র‍্যাংকিং প্রোফাইলে ইনপুট দেওয়াসহ সংশ্লিষ্ট টেনিক্যাল প্রক্রিয়া যেমন তুলে ধরেন তেমনি এ কাজ করার চ্যালেঞ্জ ও প্রতিকূলতাসমূহ নির্দ্বিধায় ব্যক্ত করেন।

বিশেষ অতিথি নোবিপ্রবির প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক রাবিপ্রবির নান্দনিক পরিবেশের প্রশংসা করেন এবং পূর্বের তুলনায় এ সময়ের অবকাঠামোগত অগ্রগতির তুলনামূলক আলোচনা করে সন্তোষ প্রকাশ করেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, এ বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্রগতি অব্যাহত থাকবে। তাকে আজকের এ গুরুত্বপূর্ণ সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানোর জন্য রাবিপ্রবি কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। তিনি নোবিপ্রবিতে র‍্যাংকিং নিয়ে কাজ করতে যে পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করেন এবং যেসব চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছেন তা তুলে ধরেন। তিনি বলেন, যত বাধা আসুক না কেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ থাকলে, সততার সঙ্গে থাকলে তা অতিক্রম করা সম্ভব। সফলতার জন্য সবাইকে সহযোগী মনোভাব দেখাতে হবে এ বিষয়ে তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

সেমিনারের প্রধান অতিথি ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিবেশ দেখে মুগ্ধ হন এবং নোবিপ্রবিকে র‍্যাংকিংয়ে উত্তীর্ণ করানোর জন্য তার গৃহীত কর্মসূচি ও পরিকল্পনাসমূহ বিস্তৃত আকারে তুলে ধরেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য নিরলস পরিশ্রমের কথা বলেন। সুষ্ঠু পরিকল্পনা ও সৎ সাহস নিয়ে এগিয়ে গেলে এবং সব অংশীজনদের অংশগ্রহণ করাতে পারলে কোনো কাজই অসম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেন।

তিনি তার অতীত স্মৃতিচারণ করে পার্বত্য অঞ্চলের শিক্ষার্থীদের আগ্রহ ও কর্মক্ষমতার পর্যবেক্ষণের কথা তুলে ধরেন এবং বলেন রাবিপ্রবি এ অঞ্চলের মেধাসম্পদ ব্যবহার করে একটি অনন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হতে পারবে বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে রাবিপ্রবিকে স্থান করে দেওয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

সেমিনারের সভাপতি ভাইস চ্যান্সেলর প্রফেসর ড. মো. আতিয়ার রহমান বলেন, রাবিপ্রবিকে বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে নেওয়ার জন্য কাজ শুরু করা দরকার ছিল আজ তার সূচনা হলো, আমরা এ লক্ষ্যে কাজ করে যাব এবং একদিন এ বিশ্ববিদ্যালয় র‌্যাংকিংয়ে থাকবে আশা করছি। এ লক্ষ্যেই আমরা কাজ করছি, ইতোমধ্যে আরআইএমসি, আইকিউএসি, আরআইসি তৈরি করেছি ও এর কার্যক্রম চলমান রয়েছে আরও কিছু প্রজেক্ট যেমন ‘ট্যুরিজম হাব, রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন হাব’ প্রক্রিয়াধীন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট আধুনিকীকরণ, পরীক্ষা দপ্তর অটোমেশন করারে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এগুলোর মধ্য দিয়ে আমরা ক্রমান্বয়ে করণীয়গুলো সম্পন্ন করে র‌্যাংকিংয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। তিনি বলেন, আজকের সেমিনারের এ আলোচনা শুনে আমরা সবাই উপকৃত হলাম এবং আমি সাহস পেলাম। তিনি শিক্ষকদের পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন। তিনি সবাইকে একটি টিম হিসেবে কাজ করার আহবান জানান। তিনি ক্যাম্পাসে একটি মেগাশপ করার পরিকল্পনার কথা ব্যক্ত করেন। তিনি অত্র অঞ্চলের স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের নিয়ে বির্তক প্রতিযোগিতা আয়োজনের আগ্রহের কথা বলেন। এ সেমিনার আয়োজনের জন্য আইকিউএসি এবং আরআইএমসিকে ধন্যবাদ জানান এবং নোবিপ্রবির সম্মানিত অতিথিদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন।

সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক (ইটিএল) ড. মো. আবু তালেব, আইকিউএসির অতিরিক্ত পরিচালক (কিউ এ) ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল আলম এবং উপ-রেজিস্ট্রার (একাডেমিক) ও আইকিউএসি (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাহবুব আরাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সব শিক্ষক এবং দপ্তরপ্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।