অপহরণের নয় দিন পর অবশেষে মুক্তি মিলেছে খাগড়াছড়ি থেকে অপহৃত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া পাঁচ শিক্ষার্থীর।
বৃহস্পতিবার (২৪ এপ্রিল) বিকেল ৩টার দিকে মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (পিসিজেএসএস) সহযোগী ছাত্র সংগঠন পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপণ ত্রিপুরা।
এর আগে মঙ্গলবার রাত থেকে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে বলে খবর চাউর হলেও তা নিশ্চিত করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, অপহৃতদের পরিবার কিংবা পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
এ ছাড়া বৃহস্পতিবার বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে অপহৃতদের মুক্তির দাবি করেছে পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখা।
পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তথ্য, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক রিবেক চাকমা স্বাক্ষরিত ওই বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৬ এপ্রিল সকাল আনুমানিক সাড়ে ছয়টায় খাগড়াছড়ি সদরের গিরিফুল এলাকা থেকে পিসিপি সদস্য রিশন চাকমাসহ তার চার সহপাঠীকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। অপহৃত পাঁচ শিক্ষার্থীর মুক্তির দাবিতে আপামর সাধারণ শিক্ষার্থী, প্রগতিশীল ব্যক্তি, বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন এবং চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের সাধারণ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন গড়ে তোলে। অবশেষে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে অপহরণকারীরা কয়েক দফায় তাদের মুক্তি দেয়।
খাগড়াছড়ির পুলিশ সুপার মো. আরেফিন জুয়েল বলেন, ‘অপহৃতদের মুক্তির বিষয়টি পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের বিবৃতির মাধ্যমে জেনেছি। তবে যেহেতু পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ বিবৃতির মাধ্যমে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সেহেতু মুক্তির খবরটি সত্য হতে পারে।’
তবে কোথায়, কবে, কীভাবে তাদের মুক্তি দেওয়া হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ।
এদিকে অপহরণের পর থেকেই এ ঘটনার জন্য প্রসিত খীসার নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড পিপলস্ ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করে আসছিল পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ। যদিও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছে ইউপিডিএফ।
পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের পক্ষ থেকে অপহৃত শিক্ষার্থীদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করা হলেও অপহৃতদের কারো পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। অপহৃতদের পরিবারের সদস্য ও অভিভাবকদের সব মোবাইল নম্বর বন্ধ রয়েছে। তারা কোথায়, কীভাবে আছেন সে বিষয়েও কোনো তথ্য নেই কারো কাছে।
অপহৃতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কাউকে সুনির্দিষ্ট করে দায়ী করা না হলেও পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের কেন্দ্রীয় সভাপতি নিপণ ত্রিপুরা অভিযোগ করে বলেন, ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার কারণেই তাদের অপহরণ করা হয়েছিল। অপহৃতদের মধ্যে রিশান চাকমা আমাদের পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সদস্য। মূলত তাকে টার্গেট করে একসঙ্গে থাকায় অন্যদেরও অপহরণ করে। এবং এটি স্পষ্ট যে, প্রসিত খীসার ইউপিডিএফই এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত।’
মুক্তি পাওয়া পাঁচ শিক্ষার্থী হলেন, রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বটতলা এলাকার মৈত্রীময় চাকমা, বরকল উপজেলার চাইল্যাতুলি এলাকার দিব্যি চাকমা, জুরাছড়ি উপজেলার জামেরছড়ি এলাকার রিশন চাকমা, বান্দরবান জেলার লামা উপজেলার সতীশপাড়া এলাকার অলড্রিন ত্রিপুরা এবং আলীকদম উপজেলার রেংপু পাড়া পোয়ামুহুরী এলাকার লংঙি ম্রো। এরা সকলেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী।
এবারের বৈসাবির ছুটিতে অন্য চার বন্ধু মিলে রাঙ্গামাটি জেলার বাঘাইছড়ি উপজেলার বটতলা এলাকার মৈত্রীময় চাকমার বাড়িতে বেড়াতে যান। বৈসাবি উৎসব শেষে গত ১৫ এপ্রিল তারা বাঘাইছড়ি থেকে খাগড়াছড়ি আসেন এবং ওই রাতে খাগড়াছড়ি সদরের কুকিছড়া এলাকায় মৈত্রীময় চাকমার এক নিকটাত্মীয়ের বাড়িতে রাতযাপন করেন। পরদিন ১৬ এপ্রিল ভোরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরার পথে খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার গিরিফুল এলাকা থেকে অটোরিকশা চালকসহ তাদের অপহরণ করে নিয়ে যায় পাহাড়ি কয়েকজন অস্ত্রধারী।