তিন তরুণ চিকিৎসক মানুষের টানে পেকুয়ার গ্রামে

পেকুয়া প্রতিনিধি

ডাক্তার এম এ মনসুর, ডাক্তার মুহাম্মদ আরফান উল্লাহ রায়হান ও ডাক্তার ছৈয়দ ওয়াসিফ কামাল নাদিম। তিনজনের বাড়ি পেকুয়া উপজেলার সদর ইউনিয়নে। পেকুয়ায় বাড়ি হলেও এমবিবিএস শেষ করার পর বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবায় নিয়োজিত অথবা ইর্টানি করছিলেন তারা। করোনার মহামারীতেও সেখানে জীবনের মায়া না করে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়েছেন।

তরুণ এ তিন চিকিৎসক প্রাণের মায়া ত্যাগ করে দুর্যোগ মূহুর্তে মানুষের টানে ছুটে এসেছেন পেকুয়ায়। করোনা মহামারীতে নিজের দায়বদ্ধতা ও কর্তব্যের খাতিরে পেকুয়াবাসীর সেবায় নিজেকে সঁপে দিতে প্রস্তুত তারা। ইতোমধ্যে গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা সেবায় নিজেদের নিয়োজিতও করেছেন। শহর থেকে ছুটে এসে গ্রামের মানুষদের চিকিৎসা সেবা দেয়ার ঘোষণায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তাঁদেরকে অভিনন্দন ও শুভেচ্ছা জানিয়ে মহৎ কাজের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসীরা।

জানা গেছে, পেকুয়া সরকারি ঘোনা এলাকার বাসিন্দা সরকারি চাকরিজীবির সন্তান এমএ মনসুর সিলেট এমএজি ওসমানি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেছেন। করোনাকালের প্রথম দিকে তিনি ওই হাসপাতালে চিকিৎসা দিয়েছেন। করোনাযোদ্ধাদের মধ্যে প্রথম শহীদ ডা. মঈন যখন মারা যান, তখনও এই এম এ মনসুর সেখানেই চিকিৎসা দিচ্ছিলেন। তিনি মনে মনে ভাবলেন, আহা এ অসময়ে পেকুয়ার মানুষ কেমন আছে, কি করছে বা চিকিৎসাসেবা ঠিক মতো পাচ্ছে কিনা। সেটা ভেবেই তাঁর পেকুয়ায় আসা। ইতোমধ্যে তিনি চৌমহুনীস্থ মেডিকেল সেন্টারে সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। এবিষয়ে ডাক্তার এমএ মনসুর তার ফেসবুক পোষ্টে উল্লেখ করেন,

প্রিয় পেকুয়াবাসী, আসসালামু আলাইকুম। আমি ডাক্তার এমএ মনসুর। আপনাদেরই সন্তান, আপনাদেরই ভাই। এই মাটি এবং মানুষের প্রতি আমার অনেক ঋণ। করোনা বিধ্বস্ত এই সময়ে আমার প্রিয় জন্মস্থানের প্রতি দায়বদ্ধতায় আমি আপনাদের সেবায় নিজেকে সঁপে দিতে প্রস্তুত। গত ০২ মে ২০২০ থেকে আমাকে নিয়মিত আপনাদের পাশে পাচ্ছেন। প্রয়াত ডাঃ মইন উদ্দিন স্যার যে সাহস আমাদের দিয়ে গেছেন তা থেকে একবিন্দু পিছ পা হব না ইনশাআল্লাহ। একজন ডাক্তার হিসেবে যে শপথ আমি নিয়েছি তা যেন অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে পারি সেই দোয়া কামনা করছি। মহান আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন, আমিন।
ডাক্তার ছৈয়দ ওয়াসিফ কামাল নাদিম। বিজিসি ট্রাস্ট মেডিকেল কলেজ থেকে সদ্য এমবিবিএস পাস করে ইব্রাহিম-ইকবাল মেমোরিয়াল হাসপাতালে ইর্টানি করছেন। দুর্যোগময় মূহুর্তে তিনি ছুটে এসেছেন পেকুয়ার আপমর জনগণের চিকিৎসা সেবা দেয়ার জন্য। পেকুয়া সদর মিয়া পাড়ার বাসিন্দা ব্যাংকার ছৈয়দ কামালের এ ছেলে ইতোমধ্যে পেকুয়া জেনারেল হাসপাতালে চেম্বার করে চিকিৎসা সেবা শুরু করেছেন। এবিষয়ে তিঁনি ফেসবুকে পোষ্টে লিখেছেন, আসসালামু আলাইকুম। আমি ডা.সৈয়দ ওয়াসিফ কামাল নাদিম। এই পেকুয়ার সন্তান। তাই পেকুয়া থেকেই আমার জীবনের প্রথম চেম্বারের সূচনা করছি। দেশের এই ক্রান্তিকালে আপনাদের পাশে থেকে সর্বোচ্চ সেবা দেয়ার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ। আমার জন্য সবাই দোয়া করবেন যাতে দেশ ও দশের সেবায় নিয়োজিত থেকে সাফল্যের শিখরে আরোহন করতে পারি।

এদিকে চোখের ডাক্তার হিসাবে পেকুয়ায় দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন ডাক্তার মুহাম্মদ আরফান উল্লাহ। দুর্যোগময় মূহুর্তে তিনি চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। পেকুয়া শেখের কিল্লা ঘোনা এলাকার মাস্টার আহমদ হোছাইনের ছেলে রায়হান বর্তমানে পেকুয়া লাইফ কেয়ার হাসাপাতালে প্রতি শুক্রবার চিকিৎসা সেবা দিয়ে থাকেন। তিনি ফেসবুক পোষ্টে লিখেছেন, চোখের যেকোনো সমস্যায় দেশের এই ক্রান্তিলগ্নে আপনাদের পাশেই আছি।

সদরের বাসিন্দা উপজেলা যুবদলের সভাপতি জেনারেল হাসপাতালের পরিচালক কামরান জাদিদ মুকুট বলেন, অনেকে ডাক্তার হওয়ার পর গ্রামে এসে চিকিৎসা সেবা দিতে অনিহা প্রকাশ করেন। সেখানে পেকুয়ার এ তিন সন্তান চিকিৎসা সেবা শুরু করেছেন পেকুয়ায়। চরম দুর্যোগ মূহুর্তে ওনারা প্রাণের টানে আমাদের মাঝে চলে আসায় পেকুয়াবাসীর পক্ষ থেকে আমরা তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ।

পেকুয়া উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি কপিল উদ্দিন বাহাদুর বলেন, বর্তমান সময়ে আমাদের বীর সৈনিকের নাম চিকিৎসক। অল্প কিছু চিকিৎসক ছাড়া বাকি সব চিকিৎসক জীবনের মায়া ত্যাগ করে বাংলাদেশের মানুষকে রক্ষায় যুদ্ধ করে যাচ্ছেন। ইতোমধ্যে অনেক চিকিৎসক আমাদের জন্য প্রাণ বিসর্জন দিয়েছেন। ঠিক প্রাণের টানে-গ্রামের মানুষদের টানে ছুটে এসেছেন পেকুয়ার তিন চিকিৎসক। তারা চিকিৎসা কার্যক্রম শুরু করায় পেকুয়াবাসীর পক্ষ থেকে আমরা কৃতজ্ঞ।

এবিষয়ে সাংবাদিক এসএম হানিফ তাদের সেবার মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, যেখানে অনেক চিকিৎসক করোনার ভয়ে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছে সেখানে প্রাণের টানে গ্রামে চলে এসেছেন পেকুয়ার তিন চিকিৎসক সন্তান। ওনারা ইতোমধ্যে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম শুরু করেছেন। পেকুয়াবাসী হিসাবে আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। দোয়া করি মহান আল্লাহ তাদেরকে সবসময় ভাল রাখুক।

পেকুয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান শাফায়েত আজিজ রাজু বলেন, এই করোনা মহামারিতেও পেকুয়ার মানুষকে সেবা দিতে তিন চিকিৎসক সন্তান গ্রামে অবস্থান করছেন। ভাবতেই অবাক লাগে এখনকার ছেলেরা অনেক ডেড়িকেটেড, নিজ জন্মভূমির প্রতি অসীম মায়া। এভাবেই যদি পেকুয়া উপজেলার প্রত্যেকে দেশ মাতৃকার সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেয় তবে সত্যিকার অর্থে আমাদের দেশটা স্বপ্নপূরীতে পরিণত হবে। দোয়া এবং শুভকামনা সবসময়।