এবারের বন্যায় কক্সবাজারে কৃষি খাতে ৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ক্ষতি

তাহজীবুল আনাম(ঢাকা মেইল), কক্সবাজার: বন্যায় কক্সবাজারের কৃষি খাতে ৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। গত আগস্ট ও সেপ্টেম্বর দুদফা বন্যায় প্লাবিত হয় কক্সবাজারের নিম্নাঞ্চল। এতে পানির নিচে তলিয়ে যায় ফসলের ক্ষেত, মাছের ঘের, খামার ও স্থাপনা।

স্থানীয়রা বলছেন, গত ৩০ বছরেও এতো ভারী বর্ষণ দেখেনি কক্সবাজারবাসী৷ বৃষ্টিতে কক্সবাজারের ৯ উপজেলায় নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছিল। এতে প্রায় ২ লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ে। ফসল, ক্ষেত, খামার ও বাড়ি ঘরের ব্যপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, আগস্ট ও সেপ্টেম্বর দুদফা বন্যায় কক্সবাজারের ২ হাজার ৬৯১ হেক্টর ফসলি জমি ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়। নষ্ট হয়ে যায় প্রায় ১৬ হাজার ১৯২ মেট্টিক টন ফসল। জেলায় কৃষি খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৭৪ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন প্রায় ২৩ হাজার ৯৫৪ কৃষক।

সদরের পিএমখালী এলাকার কৃষক মো. হাসান বলেন, এই রকম ভারি বৃষ্টি আমার জীবনে আর দেখিনি৷ দুদফা বন্যায় আমার সব শেষ হয়ে গেল। বন্যায় আমার ক্ষেতের প্রায় ১২ লাখ টাকার ফসল নষ্ট হয়ে গেছে। ধানের চারা নষ্ট হয়ে গেছে। গত দুই বছরে এই ক্ষতি পোষানো কঠিন হবে।

রামু ও উখিয়ার কয়েজন কৃষক বলেন, এবারের বন্যায় বসতবাড়ি, গ্রামীণ সড়কের পাশাপাশি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে দুই উপজেলার কয়েক হাজার কৃষকের ধান চারা পঁচে গেছে। কেউ কেউ পানির নিচে ডুবে থাকা অবস্থায় ধান কেটে নিলেও কাজে আসছে না। কারও পাকা ধান মাটিতে মিশে গেছে। ফসলের এমন ক্ষতি চাষিরা গত ৩০ বছরে দেখেননি। বন্যার পানিতে ডুবে আমনের বীজতলাও নষ্ট হয়েছে।

রামুর কৃষক মনির আহমেদ বলেন, দুদফা ভারী বর্ষণ ও পাহাড় থেকে নেমে আসা ঢলের পানিতে বাঁকখালী নদীর পানি বেড়ে রামুর নয়টি ইউনিয়নের অন্তত ২০ হাজার ঘরবাড়ি প্লাবিত হয়। বন্যার পানিতে ডুবে যায় পাঁচ হাজার একরের বেশি ধান ও ফসলের জমি।

রামুর কৃষক ছাবের আহমদ বলেন, ঋণের টাকায় এবার এক একর জমিতে আউশের চাষ করেছিলাম। ধান ঘরে তোলার আগে বন্যার পানি সব শেষ করে দিল। ফসল ঘরে তোলার সুযোগই হয়নি আমার। এই ক্ষতি পোষানো কঠিন।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক ড. বিমল কুমার প্রামানিক জানান, আগস্ট মাসে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৮ হাজার কৃষককে প্রতি এক বিঘা জমির জন্য ৫ কেজি আমন বীজ, ১০ কেজি ডিএপি সার, ১০ কেজি এমওপি সার এবং জনপ্রতি ১ হাজার করে নগদ টাকা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া চলতি সেপ্টেম্বর মাসে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ৫ হাজার কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও ১ হাজার করে নগদ টাকা দেওয়া হবে।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি সেপ্টেম্বর মাসে কক্সবাজারে পাহাড় ধস ও বন্যায় নারী- শিশুসহ ১২ জন নিহত হয়েছেন। বন্যায় ১৩২টি কাঁচা ঘরবাড়ি সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত হয়। এবং আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয় ১ হাজার ৮৩২ কাঁচা স্থাপনা। জেলার বিভিন্ন এলাকায় ৬৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক ও ৭টি ব্রিজের আংশিক ক্ষতি হয়৷ এছাড়া চিংড়ি ঘের, মাছের ঘের ও হাস-মুরগির খামারে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।