বর্তমান সংবিধানের অধীনে যারা এখন উপদেষ্টা হয়েছেন তাদের ফ্যাসিস্ট সরকারের উপদেষ্টা বলে অভিহিত করছেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। তিনি বলেন, এই সংবিধান বাতিল করতে হবে। কেননা এটি ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারের সংবিধান। তাই নতুন সংবিধানের আলোকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে রাষ্ট্রপতির দায়িত্ব নিতে হবে।
বুধবার (২১ আগস্ট) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবে প্রতিবাদী নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ‘গণঅভ্যুত্থান ও আমাদের করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরীর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল আলোচক ছিলেন কবি ও চিন্তক ফরহাদ মজহার। বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি রুহুল আমীন গাজী ও সিনিয়র সাংবাদিক এম এ আজিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আব্দুল মান্নান প্রমুখ।
ফরহাদ মজহার বলেন, এই রাষ্ট্রপতিকে পদত্যাগ করিয়ে ড. ইউনূসকে জনগণের রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নিতে হবে। বর্তমানে শেখ হাসিনা সরকারের সংবিধান চালু আছে তা বাদ দিতে হবে।
তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সংবিধানে আমাদের অলিখিত মনোভাবগুলো স্থান দিতে হবে। বর্তমানে যারা এখন উপদেষ্টা হয়েছেন তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের উপদেষ্টা। তাই এ সংবিধান তো মেনে নেওয়া যায় না।
বিএনপি সম্পর্কে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনের জন্য সমাবেশ করে ৩ মাসের মধ্যে নির্বাচন চেয়েছে। এটি কেন করল? আগে দেশের সংস্কার করতে হবে তারপর নির্বাচন হবে। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা দাবি বিএনপির আরেকটি ভুল ধারণা। এই চিন্তা থেকে বের হতে হবে। কেননা গণতন্ত্র চালু থাকলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দরকার নেই। তারেক রহমান আগামীদিনের ভবিষ্যৎ। তিনি যদি আমার বক্তব্য বুঝতে না পারে তাহলে আমি লন্ডনে গিয়ে তার সঙ্গে কথা বলব।
ড. আব্দুল মান্নান বলেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে সারা বিশ্বে শেখ হাসিনাকে নিষিদ্ধ করতে হবে। তাকে দ্রুত বিচারের মুখোমুখি করতে হবে।
এম এ আজিজ বলেন, চতুর্থ শিল্পবিল্পবে বর্তমান শিক্ষাব্যবস্থা উপযোগী নয়। এজন্য শিক্ষায় আমূল পরিবর্তন করতে হবে। তিনি প্রশাসনের সংস্কার সম্পর্কে বলেন, পুলিশ থেকে শুরু করে প্রশাসনের সব পর্যায়েই সংস্কার করতে হবে।
দুটি প্রতিবিপ্লব সম্পর্কে তিনি বলেন, ১৫ আগস্টে ধানমন্ডি ৩২ থেকে একটি প্রতিবিপ্লব হওয়ার কথা ছিল। ছাত্ররা তা প্রতিহত করেছে। তা ছাড়া বিচারবিভাগীয় একটি প্রতিবিপ্লব করতে চেয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি সেটি ছাত্ররা রুখে দিয়েছে।
রুহুল আমীন গাজী বলেন, একটা বিপ্লব হয়ে যাওয়া পর তা ধরে রাখা কঠিন। উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সমালোচনা করে বলেন, তার কাছ থেকে সময় চাওয়া হয়েছিল কিন্তু তিনি আগস্টে কোন সময় দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছে। আমরা জেল খেটেছি।
আপনি খাটেননি। আমরা সব উপদেষ্টার কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করব, জবাবদিহির মধ্যে রাখব। আরেক উপদেষ্টা শেখ হাসিনাকে তাড়াতাড়ি দেশে আসার জন্য কান্নাকাটি করেছে আবার মাফও চেয়েছে। আগামী ১০-১২ বছর এই নামটি মুখে আনবেন না।
সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি সম্পর্কে তিনি বলেন, বাংলাদেশের চেয়ে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিশ্বের কোথাও নেই। এখানে জামায়াত-শিবির মন্দির পাহারা দিয়েছে। এর চেয়ে সম্প্রীতি আর কী হতে পারে?
চাঁদাবাজ ও দখলদার মুক্ত করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, কোনো স্থানেই চাঁদাবাজ ও দখলদারদের স্থান হবে না। আমরা সবাই এদের প্রতিহত করব।
সেমিনারে ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী ‘ফ্যাসিবাদের পতন: অন্তবর্তীকালীন সরকারের করণীয়’ শীর্ষক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এ সময় তিনি অন্তবর্তীকালীন সরকারকে দায়িত্ব নির্ধারণের আহ্বান জানিয়ে ৮ দফা দাবি তুলে ধরেন।
এসময় ড. আনোয়ারউল্লাহ চৌধুরী অন্তর্বর্তী সরকারকে কয়েকটি আশু দায়িত্ব নির্ধারণ করতে হবে বলেও জানান।
দায়িত্বগুলো হলো:
১) অনতিবিলম্বে আইন-শৃঙ্খলা পুনঃপ্রতিষ্ঠার মাধ্যমে জাতীয় জীবনে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
২) জুলাই-আগস্টে সংগঠিত সকল হত্যা কাণ্ডের বিচার করতে হবে। সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া হত্যা, লুটপাটসহ সকল ধরনের অপরাধের তদন্ত ও বিচার করতে হবে।
৩) বিচারহীনতার ও জবাবদিহিতার অনুপস্থিতি জাতিকে সর্বদিক থেকে নৈরাজ্যের দিকে ঠেলে দিয়ে একে সম্পূর্ণরূপে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করে। সুতরাং, সরকারকে এ বিষয়ে গভীর মনোযোগ দিতে হবে।
৪) হাজার বছরের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে যে কোনো মূল্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে হবে।
৫) বিদ্যমান প্রশাসন কাঠামোতে কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ ব্যতীত এ মুহূর্তে হস্তক্ষেপ করলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত করা বা পুরস্কৃত করা- উভয় বিষয়েই বিচক্ষণতার পরিচয় দিতে হবে।
৬) যেকোনো প্রকার বা যেকোন ক্ষেত্রেই হোক দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে হবে।
৭) গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ও প্রক্রিয়াকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে হবে।
৮) শিক্ষাব্যবস্থা বলতে বাংলাদেশে আজ কোনো কিছুর অস্তিত্ব আছে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বিগত ফ্যাসিস্টরা শিক্ষা নামক বিষয়টাকে হত্যা করেছে। সুতরাং, এ প্রেক্ষাপটে শিক্ষার সুস্থ পরিবেশ ফিরিয়ে আনার পাশাপাশি একটি সর্বজনীন গণমুখী শিক্ষানীতি বাস্তবায়ন করতে হবে।