হাবু ডুবু খাচ্ছে পর্যটন নগরবাসী!

কক্সবাজার প্রতিনিধি। টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে পর্যটন শহর কক্সবাজার। অবশ্যই গত শুক্রবার মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর মোটামুটি সক্রিয় থাকায় শনি-রবিবার বৃষ্টিপাত বৃদ্ধি পাবে বলে আগে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাত আর দিনভর কখনো মুষল ধারে আবার কখনো থেমে থেমে চলা বৃষ্টিতে কক্সবাজার পৌরসভা প্রায় সব এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়ে পানিতে হাবু-ডুবু খায় শহরবাসী। এমনকি যে স্থানে টানা কয়েকদিনের বৃষ্টিতেও জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হত না সেই হোটেল-মোটেল জোন এলাকার প্রধান সড়কেও হাঁটু পরিমাণ পানি জমে থাকতে দেখা গেছে। আর জলাবদ্ধতার সেই ছবিগুলো মুর্হুত্বের মধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আপলোড হলে মিশ্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় সাধারণ মানুষের মাঝে। শহরবাসীর মতে এই জলাবদ্ধতার একমাত্র কারণ দীর্ঘদিন ধরে ড্রেন ও নালা-নর্দমায় জমে থাকা ময়লা-আর্বজনা পরিস্কার না করা এবং ক্ষত-বিক্ষত সড়ক, উপ-সড়ক। দ্রুততার সাথে যদি জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা পরিস্কার এবং ক্ষত-বিক্ষত সড়ক সংস্কার করা না হয় তাহলে চলতি বর্ষা মৌসুমে এর চেয়ে দ্বিগুণ মাসুল দিতে হতে পারে সাধারণ মানুষকে। শুধু শহরবাসী নয় খোদ পৌরসভার একাধিক কাউন্সিলরও স্বীকার করেছেন তা। রবিবার শহরের হোটেল-মোটেল জোন, বড় বাজার, বৌদ্ধ মন্দির সড়ক, হাসপাতাল সড়ক, বাজারঘাটা, মাছ বাজার, টেকপাড়া, বার্মিজ স্কুল রোড, পিটি স্কুল রোড, রুমালিয়ারছড়া, আলির জাঁহাল, স্বর্ণ মার্কেট এলাকা, নুনিয়ারছড়া, সমিতিপাড়া, ফদনার ডেইল, সমিতিপাড়া বাজারসহ একাধিক এলাকায় গিয়ে ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে এসব তথ্য উঠে এসেছে। বিশেষ করে কক্সবাজার পৌরসভার মধ্যে টানা বৃষ্টিতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সমিতি পাড়া, হোটেল-মোটেল জোন এলাকা, পিটি স্কুল রোড, রুমালিয়ারছড়া, আলির জাঁহাল, টেকপাড়া, বড় বাজার, বাজারঘাটা ও নুনিয়ারছড়ার মানুষ। শনিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে শুরু হওয়া এই টানা বৃষ্টিতে তলিয়ে গেছে এসব এলাকা রাস্তা-ঘাট, ব্যবসা প্রতিষ্টান ও বাড়িঘর (কয়েক জায়গায়)। অনেক স্থানে হাঁটু পরিমাণ পর্যন্ত বৃষ্টির পানি জমে থাকায় একপ্রকার পানিবন্দী ছিল শত শত মানুষ। আগে থেকে শহরের সড়ক ও যেসব উপ-সড়ক ক্ষত-বিক্ষত ছিল সেসব সড়কে বৃষ্টির পানি জমে আরো শোচনীয় অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে শহরজুড়ে যেসব সড়ক রয়েছে তাতে শুধু গর্ত আর গর্ত। তার ওপর টানা বৃষ্টি জমেছে হাঁটুপানি। ফলে নিত্য ভোগান্তি নিয়ে দিন কাটাতে হচ্ছে শহরবাসীকে। টেকপাড়ার বাসিন্দা মুফিদুল আলম জানান,-দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকার রাস্তা-ঘাটের অবস্থা বেহাল। বর্তমানে বৃষ্টি হওয়াতে আরো শোচনীয় অবস্থা বিরাজ করছে। একপ্রকারে ওই এলাকার রাস্তা-ঘাট মরনফাঁদে পরিণত হয়েছে। তার উপরতো ময়লা-আবর্জনার বিষয়টি রয়েছে। অথচ সেদিকে পৌর কর্তৃপক্ষের কোন নজর নেই বললে চলে। অনেকটা ভারাক্লান্ত মন নিয়ে যেন পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করলেন রুমালিয়ারছড়ার বৃদ্ধ আবুল কাসেম। তিনি বলেন-নির্বাচন আসলেই কক্সবাজার পৌর শহরকে তিলোত্তমা শহর, আধুনিক নগরী হিসেবে গড়ে তোলাসহ নানা ধরণের প্রতিশ্রুতি দিয়ে থাকেন মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থীরা। অথচ নির্বাচিত হয়ে যাওয়ার পর যেন তাদের দেখাই মিলেনা। যার মাসুল বৃষ্টিতে এলাকাবাসীকে ভোগান্তি আর দুর্ভোগের শিকার দিতে হচ্ছে। এদিকে কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন-বর্তমানে পর্যটন শহর কক্সবাজারের যে চিত্র তাতে যেকোন মানুষেরই হতাশ হওয়া ছাড়া কিছু নেই। একদিকে ক্ষত-বিক্ষত সড়ক অন্যদিকে টানা বৃষ্টিতে পানি জমে গিয়ে দুর্ভোগ। কক্সবাজার পৌরসভার ১নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আক্তার কামাল বলেন-তার এলাকায় বৃষ্টির পানিতে তেমন কোন প্রভাব না পড়লেও জোয়ারের পানিতে পানিবন্দী হয়ে পড়ে মানুষ। পাশাপাশি এখনো তার নির্বাচনী এলাকায় অনেক রাস্তা-ঘাটের বেহলা অবস্থার কথা স্বীকার করে মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত সময়ের মধ্যে তা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দেন। এদিকে ড্রেনেজ ব্যবস্থা নাজুক এই কথাটি স্বীকার করে কক্সবাজার পৌরসভার ৮নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রাজ বিহারী দাশ বলেন-ড্রেন ও নালা-নর্দমায় ময়লা-আবর্জনা জমে থাকার কারণে বৃষ্টি দিলেই রাস্তার উপর দিয়ে পানি করে। কক্সবাজার পৌরসভার প্যানেল মেয়র শাহেনা আক্তার পাখি তাঁর নির্বাচনী এলাকা (১, ২ ও ৩নং ওয়ার্ডের) অনেক এলাকা বৃষ্টির পানিতে হাবু ডুবু খাচ্ছে বলে জানিয়েছেন। তার মধ্যে ৩নং ওয়ার্ডের নুর পাড়ার অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। শাহেনা আক্তার পাখি বলেন-বৃষ্টি দিলেই জলাবদ্ধতার কারণ হচ্ছে ড্রেন দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করা করা। এই অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি। কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মুজিবুর রহমান জানান-ইতোমধ্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সংস্কার করা হচ্ছে। বাকীগুলো পর্যায়ক্রমে সংস্কার করা হবে যাতে করে মানুষের দুর্ভোগ কমে আসে।