শেষ হলো সেমির স্বপ্ন। টাইগারদের হারতেই হলো ভারতের কাছে। স্বপ্নের খুব কাছাকাছি গিয়েও হলো না। মাত্র ২৮ রানে হেরে বিদায় নিতে হলো বাংলাদেশকে। সাইফউদ্দীনের দারুণ ব্যাটিংয়ে শেষ দিকে আশা জাগিয়েও হতাশা নিয়ে গ্যালারি ছাড়েন এজবাস্টনের বাংলাদেশি দর্শকরা। সে সঙ্গে পর্দার সামনে বসা কোটি বাঙালি হৃদয় ভাঙে। জসপ্রিত বুমরাহর দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে টেলএন্ডাররা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও শেষ রক্ষা আর হয়নি।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৩১৫ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেয় ভারতীয়রা।
জবাবে দেখেশুনে খেলতে থাকে বাংলাদেশ। তবে নবম ওভারে মোহাম্মদ শামির বলে বোল্ড হয়ে ফেরেন তামিম ইকবাল। তামিম করেন ২২ রান। এরপর আরেক ওপেনার সৌম্য সরকারও নিজের ইনিংস বড় করতে পারেননি। হার্দিক পান্ডিয়ার বলে ৩৩ রান করে ফেরেন তিনি। সাকিব – মুশফিক জুটিতে ভালোই খেলছিলো টাইগাররা। কিন্তু চাহালের স্পিনের কাটা পড়ের মুশফিক। মুশফিক করেন ২৪ রান। এরপর শুধুই সাজঘরে ফেরার গল্প। একে একে ফিরলেন লিটন দাস (২২), মোসাদ্দেক হোসেন (৩) ও সাকিব আল হাসান (৬৬)। দলের হাল ধরতে ক্রিজে আসেন সাব্বির রহমান ও সাইফউদ্দীন। বেশ কিছুক্ষণ দলকে এগিয়েও নিয়ে যান এই দুই ব্যাটসম্যান। তবে সাব্বির রহমানের অবিবেচক শট খেলার প্রবণতা টাইগার ভক্তমনে চিড় ধরে। বুমরাহর বলে শট খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়ে ফিরে যান। দলের বিপদের সময় কাপ্তান মাশরাফিও একই ভুল করলেন। প্রথম বলে ছয় পরবর্তী বলে ধোনিকে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফিরে যান। তবে সাইফউদ্দীন একাই সামলাচ্ছিলেন। হাফ সেঞ্চুরির দেখাও পেয়েছেন এই অলরাউন্ডার। তাকে সঙ্গ দেয়ার মতো কেউ ছিল না। রুবেল হোসেন কিছুক্ষণ টিকে থাকলেও বুমরাহর আঘাতে সাজঘরের পথ ধরতে হয় তাকে।
ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ৪টি উইকেট নেন বুমরাহ। এছাড়া হার্দিক পান্ডিয়া তিনটি, চাহাল, ভুবনেশ^র কুমার, ও চাহাল পান একটি করে উইকেট।
ভারতের ইনিংসের শুরুতেই তামিমের অসর্তকতায় মাশুল গুনতে হয়েছে টাইগারদের। তামিম ফেলেন রোহিত শার্মার ক্যাচ। মিস করা ক্যাচে ভর করে বিশ্বকাপের ৪০তম ম্যাচে টস জেতা ভারতের দুই ওপেনার রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুল করলেন বিনা উইকেটেই ১৮০ রান। তাও সেটা মাত্র ৩০ ওভারে। এতেই টাইগার শিবিরে শঙ্কা। আর কোহলিদের জাগে আকাশে ওড়ার সম্ভাবনা। ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের তা-বে সবাই ধারণা করেছেন ৩৮০ কিংবা ৪শ রান ছাড়িয়ে যাবে। আকাশে উড়বে কোহলিদের স্কোরবোর্ড। কিন্তু সেটা হতে দিলেন না সৌম্য-মুস্তাফিজরা। জীবন পাওয়া শতক হাঁকানো রোহিত শর্মাকে ফেরালেন সৌম্য। ভারতীয় এই মারকুটে ওপেনার করলেন ১০৪।
এরপর আরেক ওপেনার লোকেশ রাহুলও ফেরেন। ৭৭ করা করা রাহুলকে ফেরান রুবেল হোসেন। দুই ওপেনার ফিরলেও শক্ত ভিত গড়ে দেন তারা। ভারতীয়দের স্কোরবোর্ড যখন রানের চূড়ায় পৌঁছে যাচ্ছিল ঠিক তখনই জোড়া আঘাত হানেন কাটার মুস্তাফিজ । বিরাট কোহলিকে ২৬ ও হার্দিক পান্ডিয়াকে ০ রানে সাজঘরে ফেরান তিনি। একই সঙ্গে ওই ওভারে ডাবল উইকেট মেডেন ওভারও পেয়ে যান কাটার মুস্তাফিজ। এই দুই উইকেট পতনে বেশ চাপে পড়ে ভারতী শিবির। এরপর সাচ্ছ্বন্দে খেলতে থাকা ঋশব পান্টকে সাকিব ফেরালে চাপ আরো বাড়ে ভারতের। ঋশব করেন ৪৮ রান। ইনিংসের শেষ দিকে এসে আরো চেপে ধরেন টাইগার বোলাররা। শেষ ওভারে আগেই তিন উইকেট পাওয়া মুস্তাফিজ ফেরান ‘ক্যাপ্টেন কুল’ খ্যাত ৩৫ রান করা ধোনিকে। ওয়াইড বলে রান নিতে যাওয়া ভুবনেশ্বরকে রান আউট ও একই বলে মোহাম্মদ শামিকে বোল্ড করে ভারতীয়দের ৯ উইকেটই পতন হতে বাধ্য করেন কাটার মুস্তাফিজ। সবশেষে ভারতের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ৩১৪ রান।
টাইগারদের পক্ষে মুস্তাফিজ নেন ৫টি উইকেট। এছাড়া একটি করে উইকেট নিয়েছেন সাকিব, রুবেল ও সৌম্য।
মুখোমুখি বাংলাদেশ-ভারত
এ যাবৎ বাংলাদেশ ও ভারত ৩৬টি ওয়ানডেতে মুখোমুখি হয়েছে। এরমধ্যে বাংলাদেশ ৫টি ও ভারত জয় পেয়েছে ৩০টিতে। একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছে।
বিশ্বকাপে দুই দল
বিশ্বকাপের মঞ্চে এখন পর্যন্ত চারবার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। ভারত ৩টি ও বাংলাদেশ জিতেছে ১টি ম্যাচে।
বাংলাদেশ একাদশ
তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহীম, লিটন দাস, সাব্বির রহমান, মোসাদ্দেক হোসেন, মোহাম্মদ সাইফুদ্দীন, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান, মাশরাফি বিন মুর্তাজা।
ভারত একাদশ
রোহিত শর্মা, লোকেশ রাহুল, বিরাট কোহলি, ঋশব পান্ট, হার্দিক পান্ডিয়া, মহেন্দ্র সিং ধোনি, ডিনেশ কার্তিক, ভুনেশ্বর কুমার, মোহাম্মদ শামি, জসপ্রিত বুমরাহ, জুজবেন্দ্র চাহাল।